—প্রতীকী চিত্র।
মাত্র দু’বছরের মধ্যে উদয়নারায়ণপুরে বিজেপির হল কী!
পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিতে নামমাত্র প্রার্থী। এই পরিস্থিতিতে এখানে গেরুয়া শিবিরের সাংগঠনিক দুর্বলতা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে।
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে হাওড়া জেলার ১৬টি আসনের মধ্যে একমাত্র উদয়নারায়ণপুরে তৃণমূল জিতেছিল সব থেকে কম ব্যবধানে। বিজেপি প্রার্থীকে হারিয়ে মাত্র ১৪ হাজার ভোটে জিতেছিলেন তৃণমুল প্রার্থী সমীর পাঁজা। জেলাজুড়ে সবুজ-ঝড়ে যেখানে বিরোধীরা দাঁড়াতেই পারেননি, সেখানে এই কেন্দ্রে বিজেপি তৃণমূলের ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলেছিল।
কিন্তু পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থী কই? এই বিধানসভা কেন্দ্রে গ্রাম পঞ্চায়েতের সংখ্যা ১৬। আসনসংখ্যা ২৭৪। মাত্র ৮টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে বিজেপি। পঞ্চায়েত সমিতিতে ৪৮টি আসনের মধ্যে তাদের প্রার্থী তিন জন। জেলা পরিষদের চারটি আসনেই অবশ্য প্রার্থী রয়েছে।
এই কেন্দ্রে মনোনয়ন পর্বে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সে ভাবে সন্ত্রাসের অভিযোগ শোনা যায়নি বিজেপির তরফে। তবে প্রার্থী দিতে না-পারায় এখন সন্ত্রাসের অভিযোগই সামনে আনছে তারা। বিজেপির গ্রামীণ জেলা সভাপতি অরুণ উদয় পাল চৌধুরী বলেন, "বিধানসভা নির্বাচনে জেতার পর থেকে তৃণমূল আমাদের দলের কর্মীদের উপরে অকথ্য অত্যাচার চালিয়েছে। সে কারণে ভয়ে অনেকে প্রার্থী হয়ে চাননি।’’
অভিযোগ মানেনি তৃণমূল। এই বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল সভাপতি সমরেশ চোংদারের দাবি, ‘‘বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি একটা হাওয়া তুলেছিল। ফলে সাধারণ ভোটারদের একটা বড় অংশ প্রভাবিত হন। তার ফলে বিজেপি লড়াইয়ে চলে আসে। আমাদের কেন্দ্রে সংখ্যালঘু ভোট খুব কম। তাই আমাদের জয়ের ব্যবধান অনেক কমে। কিন্তু নির্বাচনে বিজেপি হেরে যাওয়ায় ফের মানুষ আমাদের দিকে চলে আসেন। বিজেপির বহু কর্মী তৃণমূলে যোগ দেন। বিজেপির সংগঠন নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।’’ বিধায়ক সমীর পাঁজা বলেন, ‘‘বিধানসভা নির্বাচন থেকে আমরা শিক্ষা নিই। সংগঠনের ত্রুটি-বিচ্যুতি মেরামত করি। মুখ্যমন্ত্রীর জনমুখী কাজগুলি নিয়ে সরাসরি মানুষের দরবারে যাই। এরই সুফল পাচ্ছি এখন।’’
এখানে তুলনায় বামেরা কিছুটা শক্তি সঞ্চয় করেছে। গ্রাম পঞ্চায়েতে ৬০টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে তারা। পঞ্চায়েত সমিতিতে সাতটি আসনে। জেলা পরিষদের চার আসনেই রয়েছেন সিপিএম প্রার্থী।
১৬টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ১১টিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে তৃণমূল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে যাওয়ায় কিছু আসনে ভোট হবে নামেই। তৃণমূলের ক্ষমতায় আসা আটকাবে না। বাকি চারটি পঞ্চায়েতে অবশ্য লড়াইয়ের জায়গায় আছে বিরোধীরা। সেখানেও তৃণমূলের লড়াই মূলত বামেদের সঙ্গে। উদয়নারায়ণপুর পঞ্চায়েত সমিতিও কার্যত তৃণমূলের দখলে চলে এসেছে।
সিপিএমের বক্তব্য, তৃণমূলের বিকল্প যে বাম, তা পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময়ে প্রমাণিত হচ্ছে। তবে শাসক দলের সন্ত্রাসের জন্যই তাঁরা যথেষ্ট প্রার্থী দিতে পারেননি বলে অভিযোগ রয়েছে বাম নেতাদেরও। অভিযোগ অস্বীকার করে বিধায়ক বলেন, ‘‘সন্ত্রাসের কোনও ঘটনা ঘটেনি। আমরা বরং চাইনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিততে। বিরোধীরা প্রার্থী না দিলে আমরা কী করব?’’