কোন্নগর স্টেশন রোড যানজটে থমকে। নিজস্ব চিত্র।
রেললাইন পারাপার করতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হচ্ছে হামেশাই। তা ছাড়া, ব্যস্ত সময়ে কোন্নগর স্টেশন চত্বরে যানজট প্রায় প্রতিদিনের ছবি। জোড়া সমস্যা মেটাতে কোন্নগর স্টেশন লাগোয়া এলাকায় সাবওয়ে তৈরির পরিকল্পনা করেছিল রেল এবং আগের পুরবোর্ড। কিন্তু সেই প্রকল্প থেকে পিছিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিল বর্তমান পুরবোর্ড।
কেন?
তৃণমূল পরিচালিত কোন্নগর পুরসভার কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, ওই প্রকল্পের আর্থিক দায়ভার পুরোটাই পুরসভার উপরে চাপানো হয়েছে। কিন্তু পুরসভার সেই আর্থিক সঙ্গতি নেই। সাবওয়ে হোক, তাঁরাও চান। কিন্তু, কোন্নগর একটি ছোট পুরসভা। তাঁদের আয়ের উৎস কম। সেখানে পুরসভাকে একাই ওই প্রকল্পে ১০ কোটি টাকা দিতে হবে। তা সম্ভব নয়। পাশেই বিষড়ায় সাবওয়ে হচ্ছে। সেখানে রেল ও পুরসভা যৌথভাবে কাজ করছে। টাকাও দিচ্ছে দুই দফতর। কোন্নগরে পুরসভাকে একা খরচ করতে হবে কেন? রেল কেন কোনও খরচ করবে না, এই প্রশ্নও তুলেছেন তাঁরা।
পুরপ্রধান স্বপন দাস বলেন, ‘‘আগের পুরবোর্ড কেন রাজি হয়েছিল, জানি না। সর্বত্র এই সব কাজে বিধি অনুযায়ী রাজ্য ও কেন্দ্র টাকা খরচ করে। কিন্তু, দেখছি, কোন্নগর স্টেশনে এই প্রকল্পে ঠিক হয়েছিল, শুধু পুরসভা টাকা দেবে। রেল প্রযুক্তি দেবে। সেই কাজেও পুরসভাকে রেলের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগকে টাকা দিতে হবে। আগের পুরকর্তারা ইতিমধ্যেই রেলকে ১০ লক্ষ টাকা দিয়েছে। আমাদের পুরবোর্ড ওই প্রকল্প বাতিল করে রেলের থেকে টাকা ফেরত চেয়ে চিঠি দিচ্ছে।’’
রেল-কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে বিশেষ উচ্চবাচ্য করেনি। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক একলব্য চক্রবর্তী বলেন, ‘‘কোন্নগর পুরসভা আগে পুরো বিষয়টি লিখিত ভাবে জানাক। ওঁদের কী বক্তব্য, তা থেকেই জানা যাবে।’’
ওই সাবওয়ে তৈরির দাবি অনেক দিন ধরেই জানিয়ে আসছিলেন সাধারণ মানুষ। প্রকল্প অনুমোদনের কথা শুনে নিত্যযাত্রীরা খুশি হয়েছিলেন। স্টেশন লাগোয়া জায়গায় ওই প্রকল্পের সমীক্ষার কাজও শুরু হয়ে গিয়েছিল। দ্রুত ওই কাজ শুরুর আর্জিও জানাচ্ছিলেন নাগরিকরা। এখন প্রকল্প বাতিলের কথা শুনে তাঁরা হতাশ। তাঁদের বক্তব্য, ওই জায়গায় সাবওয়ে জরুরি। প্রক্রিয়া অনেকটা এগিয়েও প্রকল্প বন্ধ হলে সাধারণ মানুষকেই যে ভুগতে হবে, সব পক্ষই তা মানছে।
বর্তমান পুরবোর্ডের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন পূর্বতন বোর্ডের তৃণমূল চেয়ারম্যান, অধুনা কংগ্রেস নেতা বাপ্পাদিত্য চট্টোপাধ্যায়। তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘খুবই দুঃখজনক সিদ্ধান্ত। কোন্নগর স্টেশনে বহু মানুষ ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যাচ্ছেন। টাকার সমস্যা হলে সাংসদ, বিধায়ক, রাজ্য সরকারের কাছ থেকেও চাওয়া যেত। প্রকল্প বাতিল করলে তো সমস্যা মিটবে না।’’
কোন্নগরের ক্রাইপার রোডের বাসিন্দা এক প্রবীণ শিক্ষক বলেন, ‘‘ট্রেনের জন্য সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা বিলম্বিত হবে, সেটা ঠিক নয়। ট্রেনের জায়গায় ট্রেন চলবে এবং একইসঙ্গে সড়কপথও চালু থাকবে, সেই ব্যবস্থাই জরুরি এবং আদর্শ। কোন্নগর স্টেশন চত্বর যানজটপ্রবণ এলাকা। ফলে, ওখানে সাবওয়ে খুবই দরকার।’’
সাবওয়ে তৈরি না হলে নাগরিক সমস্যা মিটবে কী ভাবে? এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে কোন্নগরে।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।