জাঙ্গিপাড়ার কর্মতীর্থ
বেকার যুবক-যুবতী, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কথা ভেবে বছর তিনেক আগেই তৈরি হয়ে গিয়েছিল হুগলির জাঙ্গিপাড়ার কর্মতীর্থ। কিন্তু ওই বাড়ি আজও কোনও কাজে লাগেনি। কর্মতীর্থের দোতলায় দোকান করতেই আগ্রহী নন কেউ। কারণ, ভূতের ভয়!
গ্রামের কিছু মানুষের বিশ্বাস, দোতলায় নাকি ‘অশরীরী’র উপদ্রপ রয়েছে! যদিও অনেকেই এই ‘অযৌক্তিক’ কথা মানতে নারাজ। তাঁদের বক্তব্য, কর্মতীর্থটি যে জায়গায় তৈরি করা হয়েছে, সেটি একটু ফাঁকা এলাকা। সেখানে ব্যবসা চলবে না বলেই ওই ধরনের ‘উদ্ভট’ কথা ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এলাকায়। বিজ্ঞানমঞ্চও ‘অশরীরীর উপদ্রপ’-এর দাবি মানতে চায়নি।
২০১৯ সালে জাঙ্গিপাড়ার বাহানা গ্রামে সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকার কথা ভেবে ওই কর্মতীর্থ তৈরি করেছিল রাজ্য সরকার। দোতলা ওই বাড়িটিতে সব মিলিয়ে ২৬টি দোকান ঘর তৈরি করা হয়। কিন্তু কর্মতীর্থটি সম্পূর্ণ তৈরি হয়ে পড়ে থাকলেও আজ অবধি কেউ সেখানে দোকান খুলতে রাজি নন বলে অভিযোগ উঠেছে। কারণ হিসাবে গ্রামবাসীদের একাংশের দাবি, কর্মতীর্থের উল্টো দিকে একটি ইদগাহ রয়েছে। তার আশপাশে দোতলা বাড়ি তৈরি করা বারণ। সেই কারণে কোনও দোতলা বাড়ি নেই ওই এলাকায়। প্রত্যেকের একতলা বাড়ি। কর্মতীর্থ তৈরির সময়েও প্রশাসনকে তা জানানো হয়। তা সত্ত্বেও এলাকায় কর্মতীর্থ তৈরি হওয়ায় দোতলায় ‘অশরীরী’রা ঘোরাফেরা করে বলে স্থানীয়দের দাবি।
আসরাফ আলি মল্লিক নামে এক গ্রামবাসী বলছেন, ‘‘এই গ্রামে দোতলা ঘরবাড়ি করা যায় না। দোতলা বাড়ি করেও থাকতে পারেননি, এমন উদাহরণ রয়েছে এলাকায়। দোতলা দোকানও চলেনি। সামনে পীরের আস্তানা রয়েছে বলে দোতলা কিছু তৈরি করায় বারণ আছে।’’ তাঁর আরও দাবি, এলাকার মানুষের ভয় দূর করতে কর্মতীর্থের পাশে কিছু দিন আগে পুলিশ ক্যাম্প বসানো হয়েছিল। পুলিশও ‘অশরীরী’র উপস্থিতি দেখে পাততাড়ি গুটিয়ে পালিয়েছে। দোকানঘর হওয়া তো দূর, কর্মতীর্থে ব্লক প্রশাসনের একটি দফতরের জন্য ঘর ভাড়া দেওয়ার কথাও হয়েছিল। ‘ভূতের উপদ্রপ’-এর ভয়ে তাতেও কেউ রাজি হননি দাবি প্রশাসনের একাংশের। তবে পাল্টা যুক্তিও রয়েছে। গ্রামবাসীদের অন্য একটি অংশের দাবি, ফাঁকা এলাকায় ব্যবসা চলবে না বলেই কর্মতীর্থে দোকান করতে চান না কেউ।
জাঙ্গিপাড়া পঞ্চায়েত সমিতির তরফে জানা গিয়েছে, কর্মতীর্থের একতলায় কেউ কেউ দোকান খুলতে রাজি হলেও দোতলায় কেউই দোকান খুলতে চান না। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তমাল চন্দ বলেন, ‘‘গ্রামবাসীদের এমন ধারণা আর বিশ্বাসের কারণেই ২০১৯ সালে তৈরি হওয়া কর্মতীর্থ আজও ফাঁকা পড়ে রয়েছে। তবে আমরা সাধারণ মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করছি। অনেকে দোকান নিতে আগ্রহী রয়েছে। ইতিমধ্যেই কয়েকটি আবেদন এসেছে। যাঁরা একতলায় দোকান নিয়েছেন, তাঁদেরই দোতলায় গোডাউন খুলতে বলা হয়েছে।’’
‘ভূতের উপস্থিতি’ নিয়ে গ্রামবাসীদের দাবিকে কুসংস্কার বলে ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছে বিজ্ঞানমঞ্চ। পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞানমঞ্চের হুগলি জেলা সভাপতি তরুণ মণ্ডল বলেন, ‘‘আমরা এই ঘটনার কথা জানতাম না। খোঁজ নিচ্ছি। সাধারণ মানুষকে কুসংস্কার সম্পর্কে বোঝাতে প্রশাসন যদি আমাদের সাহায্য চায়, আমরা তা করতে রাজি আছি।’’