খানাকুলের রেনেসাঁ ক্লাবের প্রতিমা। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ
বন্যা হলে অনেক সময় ঘটপুজো করে দুর্গাপুজো সারতে হয়। আবার কোথাও কোথাও পুজো হলেও দুর্গতির কারণে অনেক সময়েই গ্রামবাসীরা মেতে উঠতে পারেন না। তাই পুজোর আনন্দে মাততে দুর্গার বদলে ক্রমশ জগদ্ধাত্রী পুজোকেই বছরের মূল উৎসব হিসাবে বেছে নিচ্ছেন খানাকুল ২ ব্লক এলাকার বাসিন্দারা। পুজোর সংখ্যা এবং এলাকা ক্রমশ বাড়ছে। বন্যার্তদের সেবা এবং সমাজকল্যাণমূলক নানা সচেতনতা ও বার্তা দেওয়ার লক্ষ্যে পুজো কমিটিগুলি নিজেদের ‘সমন্বয় কমিটি’ও গড়েছে।
বছর ষাটেক আগে এখানকার রাজহাটিতে ‘আমরা সবাই ক্লাব’-এর উদ্যোগে ধুমধাম করে জগদ্ধাত্রী পুজোর সূচনা হয়েছিল। তারপরে এলাকায় পুজোর সংখ্যা বেড়েছে। এ বছর থেকেই পাশের জগৎপুর, মাড়োখানা এবং নন্দনপুরে পুজো শুরু হয়েছে। সব মিলিয়ে মোট ২৮টি পুজো ‘সমন্বয় কমিটি’র আওতায় এসেছে। কমিটির সভাপতি তথা রাজহাটির রয়্যাল বুলেট ক্লাবের সম্পাদক বাবলু মণ্ডল জানান, নানা সামাজিক দায়িত্ব পালনকে অগ্রাধিকার দিতেই পুজো কমিটিগুলিকে নিয়ে ‘সমন্বয় কমিটি’ গড়া হয়েছে।
পুজো কমিটিগুলির পক্ষে দিশারী গোষ্ঠীর কর্মকর্তা তথা রামনগর অবিনাশ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অমিত আঢ্য বলেন, “বন্যাপ্রবণ খানাকুলে দুর্গাপুজো মানুষ উপভোগ করতে পারেন না। পুজোর আনন্দ ফেরাতেই জগদ্ধাত্রী পুজোকে বেছেছি আমরা।”
মণ্ডপগুলিতে লেগেছে থিমের ছোঁয়া। অভিনন্দন গোষ্ঠীর থিম পরিবেশ সচেতনতা, উদয়ন গোষ্ঠী আস্ত আদিবাসী গ্রাম তুলে ধরছে। এ বছর নতুন পুজোর সূচনায় নন্দনপুরের ঐক্যধারা নিজেদেরর নামের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে থিম করছে ‘ঐক্য’। অঙ্কুর গোষ্ঠী ‘লেজ়ার লাইট শো’-র ব্যবস্থা করেছে। এ রকমই কোনও মণ্ডপে টেরাকোটা শিল্প, কোথাও দক্ষিণের কোনও মন্দিরের আদল ফুটে উঠেছে। পুজোর প্রথম দিন কুমারী পুজো হয় মণ্ডপগুলিতে। পুজোর আগে সব কুমারীকে একসঙ্গে নিয়ে গ্রাম পরিক্রমাও হয়।
রাজহটির শঙ্কর মালিক, সেনহাটের বিমল বন্দ্যোপাধ্যায়, ভীমতলার প্রৌঢ়া মালা দাস প্রমুখ জানান, রাজহটির পুজোগুলিতে চার দিন ধরে দুর্গতদের সেবা, মণ্ডপসজ্জা, আলোর কাজ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদি সব ক্ষেত্রেই প্রতিযোগিতা চলে। কোনও মণ্ডপে আবার পরিবেশ দূষণ নিয়ে সচেতনতার বার্তা থাকলে কেউ সবুজায়ন, স্বাস্থ্য, কুসংস্কার, বাল্যবিবাহ, নারী ও শিশু নিগ্রহ রোধ, ডেঙ্গি রোধ ইত্যাদি নিয়ে সচেতনতার ব্যবস্থা থাকে।