—প্রতীকী চিত্র।
নেপথ্যে এলাকায় বছরের পর বছর ধরে চলা তোলাবাজির সিন্ডিকেটের দখলদারি। আর তার জেরেই বৃহস্পতিবার রাতে দু’দলের দফায় দফায় মারপিটের ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠল হাওড়ার দাশনগরের বালিটিকুরি এলাকা। স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশের একাংশের অভিযোগ, ওই গোলমালের মূল কারণ হাওড়ার অন্যতম শিল্পতালুক দাশনগর-বালিটিকুরিতে চলা সিন্ডিকেটের দখলদারি নিয়ে শাসকদলের দু’টি গোষ্ঠীর এলাকা দখলের লড়াই। সেখান থেকেই শুরু হয়েছে একে অপরকে টপকে যাওয়ার চেষ্টা। এর কারণ, শিল্পতালুকের বিভিন্ন কলকারখানা থেকে মাসে লক্ষ লক্ষ টাকার তোলা-সহ এলাকার সমস্ত পুকুর ভরাট, জমি-বাড়ি বিক্রি, সাট্টা, জুয়া, চোলাইয়ের ঠেকের একচ্ছত্র আধিপত্য পাওয়া। যা করতে গিয়েই শিবপুর বিধানসভা কেন্দ্রের দাশনগর এলাকা ক্রমাগত রক্তাক্ত হয়ে উঠছে বলে অভিযোগ।
দাশনগর থেকে বালিটিকুরির জাপানি গেট এলাকা পর্যন্ত রয়েছে অজস্র ছোট-বড় লেদ কারখানা ও বড় লোহার কারখানা। ওই এলাকায় আগে বাস করতেন বহু প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। কিন্তু বর্তমানে অনেকেই কারখানা বেচে অন্যত্র চলে গিয়েছেন। অভিযোগ, তার অন্যতম কারণ শাসকদলের বেপরোয়া তোলাবাজি। এলাকার ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, রীতিমতো সিন্ডিকেট তৈরি করে তোলাবাজি চালাচ্ছেন বালিটিকুরি এলাকার এক তৃণমূল নেতা। তাঁরই মদতে এলাকায় বেপরোয়া ভাবে বেড়ে গিয়েছে গাঁজা, চোলাই মদ, সাট্টার ঠেক। সেই সঙ্গে কারখানাগুলি থেকে তোলা হচ্ছে মোটা টাকা। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে পুকুর ভরাট, নির্মীয়মাণ বহুতল থেকে অবাধ তোলাবাজি। পুরসভার দেওয়া হিসাবই বলছে, গত দু’বছরে ২৫টি পুকুর ভরাটের অভিযোগ এসেছে শিবপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে। সব মিলিয়ে দাশনগর হয়ে উঠেছে তোলাবাজদের সোনার খনি।
বালিটিকুরি ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অসিত চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওই সিন্ডিকেটের জুলুমবাজিতে ইতিমধ্যেই ৪২টি কারখানার মালিক কারখানা তুলে দিয়ে অন্যত্র চলে গিয়েছেন। সেই সব কারখানার জায়গা এখন প্লট করে বিক্রি হচ্ছে বহুতল তৈরির জন্য। সেখানেও হাত বাড়িয়েছে ওই সিন্ডিকেট। প্রশাসনকে বার বার জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি।’’ ব্যবসায়ীদের আরও অভিযোগ, এলাকায় সিন্ডিকেটের দাপট এতটাই যে, এক প্রোমোটারের তৈরি করা বহুতলের সামনের অংশের বাধা হটাতে আস্ত একটি বাসস্ট্যান্ডের শেড ভেঙে উপড়ে নেওয়া হয়েছে। এমনকি, তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ও ভেঙে ফেলা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রের খবর, গত কয়েক বছরে ওই সিন্ডিকেটের দখল নিতে গড়ে উঠেছে শাসকদলেরই একটি পাল্টা গোষ্ঠী। তার পর থেকে আরও অশান্ত হয়ে উঠেছে বালিটিকুরি-দাশনগর এলাকা। কয়েক বছর আগে এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেওয়া পাল্টা গোষ্ঠীর লোকজন ফের এলাকায় ফিরে আসতে শুরু করায় শুরু হয়েছে রক্তপাত। মাঝে মাঝেই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে মারধর, গোলমাল, সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। বৃহস্পতিবারের ঘটনা তারই একটি ঝলক মাত্র।
এলাকার দখল নিতে চাওয়া তৃণমূলের বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর এক নেতা বলেন, ‘‘আমাদের দলের কর্মী শুভঙ্কর দাস নামে এক যুবককে
বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রথমে রাস্তায় ফেলে পেটানো হয়। এমনকি, ওই দিন সন্ধ্যায় যখন তিনি দাশনগর থানায় আক্রমণকারী নিশান সিংহের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে ফিরছিলেন, তখন তাঁকে বকুলতলা এলাকায় ঘিরে ধরে দ্বিতীয় বার পেটান নিশান ও তাঁর দলবল। উল্টে ওঁরাই আবার থানায় গিয়ে বিক্ষোভ দেখান।’’ এ বিষয়ে নিশানের বক্তব্য মেলেনি। পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবারের ঘটনার পরে ওই যুবক গা-ঢাকা দিয়েছেন। হাওড়া সিটি পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘ওই ঘটনায় এখনও কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। দু’পক্ষই অভিযোগ দায়ের করেছে। নির্দিষ্ট ধারায় মামলা করে তদন্ত শুরু হয়েছে।’’