কিয়স্কে প্লাস্টিকের বোতল ফেলছে এক কিশোরী। শনিবার সন্ধ্যায়।
প্লাস্টিকের অতিরিক্ত ব্যবহার পরিবেশে দূষণ বাড়িয়ে চলেছে। বারবার সতর্ক করছেন পরিবেশবিদরা। কিন্তু তাতে যে বিশেষ কাজ হচ্ছে না, হুগলি জেলার একের পর এক শহর ঘুরলেই তা মালুম হয়। জন-সচেতনতা এবং পুর-প্রশাসনের উদ্যোগের অভাবে পরিস্থিতি ক্রমে জটিল হচ্ছে বলে পরিবেশকর্মীদের আক্ষেপ।
এই আবহেই শনিবার পেরিয়ে গেল ‘বিশ্ব প্লাস্টিক ব্যাগ মুক্ত দিবস’। জেলার কোনও পুরসভার তরফে বিশেষ দিনটি নিয়ে তেমন হেলদোল দেখা যায়নি। তবে, কোন্নগরের ‘যুক্তিমন কলা ও বিজ্ঞান কেন্দ্র’ প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো বা সুষ্ঠু উপায়ে তা প্রতিস্থাপনের জন্য শহরের বারোমন্দির ঘাটে কর্মসূচি পালন করে। প্লাস্টিক বোতল ফেলার জন্য সেখানে দু’টি কিয়স্ক বসানো হয়।
ওই সংস্থার সম্পাদক জয়ন্তকুমার পাঁজা জানান, ওই ঘাটে প্রচুর মানুষ বেড়াতে আসেন। জল বা ঠান্ডা পানীয় খেয়ে প্লাস্টিকের বোতল যত্রতত্র ফেলে দেন। তাতে দূষণ ছড়ায়। গঙ্গাও দূষিত হয়। জয়ন্ত বলেন, ‘‘সবাইকে অনুরোধ, তাঁরা যেন শুধুমাত্র কিয়স্কেই বোতল ফেলেন। আমরা সেগুলি সংগ্রহ করে কঠিন বর্জ্য প্রতিস্থাপন প্রকল্পে পাঠাব।’’
ওই সংস্থার সদস্যেরা জানান, প্রতি সপ্তাহে নির্দিষ্ট সময়ে তাঁরা কোন্নগরের নানা জায়গায় যাবেন। আশপাশের বাড়ি থেকে প্লাস্টিকের বোতল, দুধের প্যাকেট, পলিথিন, টুথব্রাশ, খেলনা-সহ নানা জিনিস সংগ্রহ করবেন। তার অধিকাংশই কঠিন বর্জ্য প্রতিস্থাপন প্রকল্পে পাঠানো হবে। বাকিগুলি দিয়ে ঘর সাজানোর জিনিস, টব, পাখির খাবার বা জলের পাত্র প্রভৃতি তৈরি করা হবে। কর্মসূচির নাম দেওয়া হয়েছে— ‘ফেলনা জিনিস ফেলনা নয়’। প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ব্যবহার বন্ধের জন্য এ দিনের অনুষ্ঠানে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা হয়। কাপড়ের ব্যগ বিলি করা হয়। বেশ কিছু স্কুলপড়ুয়া উপস্থিত ছিল। অতিথি হিসেবে ছিলেন পরিবেশবিদ সুদীপ্ত ভট্টাচার্য, কোন্নগর শ্রীঅরবিন্দ বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক আশিস ঘোষ হাজরা প্রমুখ।
প্লাস্টিকের বোতল, ক্যারিব্যাগ জমে নিকাশি ব্যবস্থার দফারফা হচ্ছে বলে অভিযোগ। প্রত্যেক শহরেই চোখে পড়ে, নর্দমায় প্লাস্টিকের বোতলের ছড়াছড়ি। বৃষ্টি হলেই আবর্জনা-সহ সেইসব বোতল আটকে নিকাশি নালা অবরুদ্ধ হয়। নোংরা জল উপচে প্রাণান্তকর পরিস্থিতি হয়। তার উপরে এক শ্রেণির বাসিন্দা পুরসভার গাড়িতে আবর্জনা না দিয়ে রাস্তায় ফেলেন। এতে সমস্যা বাড়ে।
শহরকে ‘প্লাস্টিকমুক্ত’ করে এক সময় বিদেশ থেকে শিরোপা পেয়েছিল উত্তরপাড়া পুরসভা। কোন্নগর, রিষড়া, বৈদ্যবাটী পুরসভাও শহর প্লাস্টিকমুক্ত করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু কোথাও ধারাবাহিকতা বজায় থাকেনি। করোনাকালে যখন বেশি পরিচ্ছন্নতা জরুরি, তখন শিথিলতা চোখে পড়ছে সর্বত্র। উত্তরপাড়া থেকে জেলা সদর চুঁচুড়া— সব জায়গাতেই একই চিত্র।
পরিবেশকর্মী শশাঙ্ক কর বলেন, ‘‘সরকারের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও উদ্যোগী হতে হবে নিজের এলাকা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার ক্ষেত্রে। সবাই মিলে চেষ্ট করলে তবেই প্লাস্টিকমুক্ত পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব।’’ উত্তরপাড়ার পুরপ্রশাসক দিলীপ যাদব বলেন, ‘‘নিকাশি ব্যবস্থার ক্ষেত্রে প্লাস্টিক বড় সমস্যা, এটা বাস্তব। তবে, বিশেষজ্ঞ সংস্থার পরামর্শ নিয়ে আমরা নিকাশি সমস্যার সুষ্ঠু সমাধানে পরিকল্পনামাফিক এগোতে চাইছি।’’