Arambagh

Independence Day: স্বাধীনতার ৭৫-এ সংস্কারে হাত পড়ল সাগর কুটিরে

আরামবাগের বড়ডোঙ্গল গ্রাম সংলগ্ন দ্বারকেশ্বর নদের তীরে তৎকালীন ঘন বেনাবনে ঘেরা দুর্ভেদ্য স্থানটি ১৯২১ সালে বন্যা ত্রাণের কাজে গিয়ে বেছেছিলেন প্রফুল্লচন্দ্র।

Advertisement

পীযূষ নন্দী

আরামবাগ শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০২২ ১০:০৭
Share:

আরামবাগের বড়ডোঙ্গলে ‘সাগর কুটির’। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ

প্রায় পঁয়তাল্লিশ বছর আগে একবার সংস্কার হয়েছিল। স্বাধীনতা আন্দোলনে হুগলি জেলার অন্যতম গোপন ঘাঁটি আরামবাগের ‘সাগর কুটির’ আবার আমূল সংস্কার শুরু হয়েছে।

Advertisement

সংশ্লিষ্ট সালেপুর-২ পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকেই সংস্কারের কাজ করা হচ্ছে। স্বাধীনতা সংগ্রামী প্রফুল্লচন্দ্র সেনের (পরে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী) বাছাই করা ওই আস্তানা এ বছর শতবর্ষ পূরণ করল বলে জানান পঞ্চায়েত প্রধান তথা সাগর কুটির উন্নয়ন কমিটির সম্পাদক সঞ্জিৎ অধিকারী।

প্রধান বলেন, “স্থানীয় হেরিটেজ হিসাবে পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের বরাদ্দে সংস্কারের কাজ চলছে। প্রথম দফায় ৩ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়। দফায় দফায় আরও কাজ হবে। সেখানে গান্ধীজি, নেতাজি এবং ক্ষুদিরাম বসুর মূর্তিও স্থাপন করার পরিকল্পনা আছে।”

Advertisement

আরামবাগের বড়ডোঙ্গল গ্রাম সংলগ্ন দ্বারকেশ্বর নদের তীরে তৎকালীন ঘন বেনাবনে ঘেরা দুর্ভেদ্য স্থানটি ১৯২১ সালে বন্যা ত্রাণের কাজে গিয়ে বেছেছিলেন প্রফুল্লচন্দ্র। অনুকুল চক্রবর্তী নামে এক গ্রামবাসী তাঁর পতিত জায়গা আস্তানা বানাতে ছেড়ে দেন। ব্রিটিশ পুলিশের অভিযান হলে যাতে দ্রুত পালানো যায়, সেইমতো তিন দিকে তিনটি দরজা রেখে পাকা দেওয়াল ও খড়ের ছাউনি দেওয়া ঘর বানানো হয়।

তখন থেকেই স্বাধীনতা আন্দোলনে শ্রদ্ধার প্রতীক এই ‘সাগর কুটির’। সেই নিভৃত কুটিরেই ১৯৩০ সালে আইন অমান্য আন্দোলনের প্রস্তুতি হিসাবে জেলা সম্মেলন হয়। জেলার আইন অমান্য আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় হিসাবে ঘোষণা করা হয় ‘সুগার কুটির’কে। সেই সম্মেলনের কয়েকদিন আগে মারা যান স্বাধীনতা সংগ্রামী প্রফুল্লচন্দ্র সেনের সঙ্গী সাগরলাল হাজরা। তাঁর স্মৃতিরক্ষার্থেই হুগলির স্বাধীনতা আন্দোলনের ওই পীঠস্থানটির নামকরণ হয় ‘সাগর কুটির’।

১৯৩১ সালের ২৭ ফেব্রয়ারি ব্রিটিশ সরকার আরামবাগের আইন অমান্য কমিটিকে বেআইনি ঘোষণা করে। পরের দিন ‘সাগর কুটির’ দখল করে নেয় ব্রিটিশ পুলিশ। এলাকায় শুরু হয় ‘সাগর কুটির ফিরিয়ে দাও’ আন্দোলন। বড়ডোঙ্গল গ্রামের মৃগেনবালা রায় মহিলাদের সংগঠিত করে ‘সাগর কুটির’ দখল করতে গেলে পুলিশ লাঠি চালায়। মৃগেনবালা-সহ আহত হন বহু নারী-পুরুষ। মৃগেনবালা ছাড়াও ওই এলাকার বাসি্ন্দা বরদামণি হাইত, সুশীলাবাসী দাসী প্রমুখ নানা ভাবে স্বাধীনতা আন্দোলনে শামিল হয়েছিলেন।

নানা সময়ে ‘সাগর কুটির’-এ এসে থেকেছেন প্রফুল্ল ঘোষ, বিজয় মোদক, হেমন্ত বসু, অতুল্য ঘোষ, প্রাণকৃষ্ণ মিত্র, বিপ্লবী ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত প্রমুখ। ওখান থেকেই পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে মহিলা বা শিশুদের হাত দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে যেত প্রফুল্লচন্দ্র সেন বা অন্য কারও গোপনসাঙ্কেতিক চিঠি।

সাগর কুটির-সহ সংশ্লিষ্ট জায়গাটি প্রফুল্লচন্দ্র সেন মৃত্যুর কয়েক বছর আগে স্থানীয় বড়ডোঙ্গল রমানাথ ইনস্টিটিউশনকে দান করেন। এখনও সেটি স্কুলের অধীনে রয়েছে। কিন্তু স্কুলের তহবিল না-থাকায় সালেপুর-২ পঞ্চায়েত থেকে ‘সাগর কুটির উন্নয়ন কমিটি’ গড়ে তদারক করা হয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement