পার্কিংয়ের দায়িত্বে থাকা পুরনো সংস্থাগুলিই এর দায়িত্ব পাবে। —ফাইল চিত্র।
পার্কিং নিয়ে দুর্নীতি রুখতে ইতিমধ্যেই উদ্যোগী হয়েছে হাওড়া পুরসভা। আর তাতেই পুরসভার ডাকা অনলাইনে নিলাম রুখতে তৎপর হয়ে উঠেছে দীর্ঘদিন ধরে হাওড়ায় চলা পার্কিংয়ের দুষ্টচক্র। আজ, বৃহস্পতিবার ও কাল, শুক্রবার পুরসভা ৩৩টি জায়গায় পুলিশের থেকে ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ নিয়ে পার্কিং লট তৈরি করতে উদ্যোগী হয়েছে। অভিযোগ, সেগুলির নিলামে যাতে কেউ অংশ নিতে না পারে, ওই চক্রটি সেই চেষ্টা শুরু করেছে বলে মনে করছেন পুরকর্তারা। ইতিমধ্যেই পার্কিং নিয়ে নিলাম যাতে না হয়, সে জন্য চক্রটি নিলামে আগ্রহীদের বোঝানোর চেষ্টা করছে যে, নিলামের ন্যূনতম দর অনেক বেশি রাখার ফলে এই প্রক্রিয়ায় কেউ অংশ নেবে না। তাই এটি বানচাল হয়ে যাবে। ফের আগের মতোই পার্কিংয়ের দায়িত্বে থাকা পুরনো সংস্থাগুলিই এর দায়িত্ব পাবে। যদিও পুরকর্তাদের দাবি, যত চেষ্টাই হোক না কেন, দু’দিনব্যাপী পুরসভার প্রস্তাবিত পার্কিংয়ের নিলাম হবেই।
হাওড়া পুরসভা এলাকায় পার্কিং নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। অভিযোগ, দিনের পর দিন পার্কিং নিয়ে নিলাম না করায় পুরসভার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে। এত দিন পুরসভার নথিভুক্ত সংস্থাগুলির সময়সীমা শেষ হওয়ার পরেও তারা নিজেরাই কুপন ছাপিয়ে পার্কিং ফি আদায় করে যাচ্ছিল। এক পদস্থ পুরকর্তা জানান, বার বার এই অভিযোগ আসার পরে ২০২১ সালে পুরসভার ৪৩টি জায়গায় (বালি-সহ) পার্কিং লট চিহ্নিত করে নিলাম ডাকা হয়। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে সেই নিলামে অংশ নিয়েছিল মাত্র দু’টি সংস্থা। শেষ পর্যন্ত যে সব পুরনো সংস্থা ওই নিলামে ইচ্ছাকৃত ভাবে অংশ নেয়নি, প্রায় বাধ্য হয়ে তাদের হাতেই ন্যূনতম মূল্যে পার্কিংয়ের দায়িত্ব তুলে দেন পুর প্রশাসকমণ্ডলী। সেই ব্যবস্থাই এত দিন বলবৎ ছিল।
সম্প্রতি পার্কিং থেকে পুরসভার ব্যাপক পরিমাণ রাজস্বের ক্ষতির কথা ভেবে এবং পার্কিং নিয়ে দুর্নীতি রুখতে উদ্যোগী হন হাওড়ার পুর চেয়ারম্যান সুজয় চক্রবর্তী। তাঁর নির্দেশে পুরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকেরা হাওড়া সিটি পুলিশের পদস্থ কর্তাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে হাওড়া শহরে মোট ৩৩টি পার্কিং লট ঠিক করেন। এক পদস্থ পুরকর্তা বলেন, ‘‘এই নিলামে অংশ নিতে মূলত দু’টি মাপকাঠি রাখা হয়েছে। প্রথমত, যে সব সংস্থার পার্কিং নিয়ে তিন বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে, তারা এতে অংশ নিতে পারবে। দ্বিতীয়ত, নিলামের ন্যূনতম মূল্য সংস্থাটির দেওয়ার ক্ষমতা আছে কিনা, তা দেখা হবে। অর্থাৎ, কোনও পার্কিং লটে ৭০টি মোটরবাইকের জন্য এক মাসে ৪০০ টাকা হারে মোট ২ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা নিলামে ডাকা হলে তা ওই সংস্থার দেওয়ার ক্ষমতা আছে কিনা, তা দেখা হবে। কারণ ওই টাকাটিই নিলামের ন্যূনতম মূল্য।’’
পুর চেয়ারপার্সন বলেন, ‘‘এ বারে যে পার্কিং লট চিহ্নিত হয়েছে, তা পুলিশ করেছে। পুরসভা থেকে সেই জায়গাগুলি সমীক্ষা করে দেখার পরে, পুলিশের থেকে ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ নিয়ে তবেই পার্কিংয়ের জন্য নিলাম ডাকা হয়েছে। বেআইনি ভাবে পার্কিং থেকে টাকা তোলার অভিযোগ আর বরদাস্ত করা হবে না। আমাদের ধারণা, এই ৩৩টি লটে নিয়ম মেনে পার্কিং হলে পুরসভায় রাজস্ব আদায় বহু গুণ বেড়ে যাবে।’’