নিরুপায়: নবান্ন অভিযানের জেরে দিনের একটা বড় অংশই বন্ধ ছিল হাওড়া সেতু। অগত্যা হেঁটেই গন্তব্যের দিকে রওনা দেন বহু মানুষ। মঙ্গলবার। ছবি: সুমন বল্লভ।
একটি ছাত্র সংগঠনের ডাকা নবান্ন অভিযানে গোলমালের আশঙ্কায় মঙ্গলবার সকাল আটটা বাজার আগেই হাওড়ামুখী সব রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছিল পুলিশ। এর ফলে শহরতলির লোকাল এবং দূরপাল্লার ট্রেনে হাওড়া স্টেশনে এসে নামা অসংখ্য যাত্রীর কাছে কলকাতায় পৌঁছনো কঠিন পরীক্ষা হয়ে দাঁড়ায়। হাওড়া সেতু বন্ধ থাকায় এ দিন সকালে স্টেশনে অন্যান্য দিনের মতো বাস, ট্যাক্সি, অ্যাপ-ক্যাব— কিছুই ছিল না। এমনকি, সাতসকালে হাওড়া ডিপো থেকে সরকারি পরিবহণ নিগমের বাসও রাস্তায় নামানো যায়নি।
এই পরিস্থিতিতে যাত্রীদের কাছে কার্যত ত্রাতা হয়ে দেখা দেয় ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো এবং গঙ্গার ফেরি পরিষেবা। সকাল থেকেই গণপরিবহণের ওই দুই মাধ্যম বিপুল সংখ্যায় লোক টেনেছে। এ দিন ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর হাওড়া প্রান্তের দুই স্টেশনে যাত্রীদের ভিড় উপচে পড়ে। দূরপাল্লার ট্রেনের বহু যাত্রীকে দেখা যায় ভারী মালপত্র নিয়ে মেট্রোয় উঠতে। রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যোগ দিতে আসা কর্মীদের ভিড়ে যাতে কোথাও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি না হয়, তা নিশ্চিত করতে ইস্ট-ওয়েস্ট এবং উত্তর-দক্ষিণ মেট্রোর বিভিন্ন স্টেশনে ছিল পুলিশের কড়া নজরদারি।
ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর হাওড়া ময়দান থেকে এসপ্লানেড পর্যন্ত পথে এ দিন দুপুর ২টো পর্যন্ত সফর করেছেন প্রায় ৩৪ হাজার যাত্রী। যা ওই একই সময়ে গত মঙ্গলবারের তুলনায় প্রায় ১৪ হাজার বেশি। বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত এ দিন ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোয় চেপেছেন প্রায় ৪৭ হাজার যাত্রী। যা ওই একই সময়ে গত সপ্তাহের ২৮ হাজার যাত্রীর তুলনায় অনেকটাই বেশি বলে জানিয়েছেন কলকাতা মেট্রোর মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র।
একই ভাবে, যাত্রীদের প্রবল ভিড় চোখে পড়েছে গঙ্গার ফেরি পরিষেবাতেও। হাওড়া থেকে শিপিং, ফেয়ারলি প্লেস, বাবুঘাট, আর্মেনিয়ান ঘাটগামী লঞ্চে এ দিন ছিল অন্যান্য দিনের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি ভিড়। দুপুর পর্যন্ত ওই পথে প্রায় ৬৬ হাজার যাত্রী সফর করেছেন। অন্যান্য দিন এই সংখ্যা থাকে ৪০ হাজারের কাছাকাছি। রাত পর্যন্ত প্রায় দেড় লক্ষ যাত্রীতে ফেরিতে সফর করেছেন বলে হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতি সূত্রের খবর। যা অন্যান্য দিনের তুলনায় ৫০ হাজারেরও বেশি।
নবান্ন ঘিরে রাজনৈতিক কর্মসূচি শুরু হওয়ার পরে দুপুরের মধ্যে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ এবং ধর্মতলা চত্বরে গোলমাল শুরু হয়ে যাওয়ায় ওই এলাকা থেকে সরকারি এবং বেসরকারি বাস চালানো যায়নি। দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম এসপ্লানেড থেকে তাদের
পরিষেবা সরিয়ে নিয়ে যায় করুণাময়ীতে। ওই বাস স্ট্যান্ড থেকে দিনের নির্ধারিত পরিষেবার পাশাপাশি আরও ১৮টি বাস নিবেদিতা সেতু হয়ে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় চালানো হয়। সন্ধ্যার পরে হাওড়া থেকে ফের বাস পরিষেবা শুরু করে রাজ্য পরিবহণ নিগম।