হাওড়ার খগেন্দ্রনাথ গাঙ্গুলি লেনের সেই অবৈধ বহুতল। —নিজস্ব চিত্র।
ঠিকা জমিতে তৈরি একটি ছ’তলা বাড়ির নির্মাণ নকশার অনুমোদন হাওড়া পুরসভা দেয়নি, বছর তিনেক আগেই এমনটা লিখিত ভাবে স্বীকার করেছিল পুরসভা। অভিযোগ, তবুও ওই অবৈধ বহুতলের নির্মাণ বন্ধ হয়নি। উপরন্তু আশপাশের জমিতেও কাজ শুরু করার প্রস্তুতি চলছে। এমনই অভিযোগ উঠেছে হাওড়া পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের খগেন্দ্রনাথ গাঙ্গুলি লেনের একটি ঠিকা জমিকে ঘিরে।
অভিযোগ, একাধিক বার বিষয়টি পুরসভাকে জানানোর পরেও কোনও ব্যবস্থা নেননি পুর কর্তৃপক্ষ। শুধু তা-ই নয়, ওই বাড়ি ঘিরে একটি মামলার প্রেক্ষিতে দু’বছর আগে কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অন্তরা সিংহ এক নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই নির্দেশে বলা হয়েছিল, ১২ সপ্তাহের মধ্যে বেআইনি বহুতলটির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। বছর দুই আগে এক প্রতিবেশীর করা ওই মামলায় বিচারপতির নির্দেশ অমান্য করার অভিযোগ উঠছে এ বার হাওড়া পুরসভার বিরুদ্ধে।
রাজ্য ভূমি ও ভূমি সংস্কার আইন অনুযায়ী, ঠিকা প্রজাসত্ত্ব জমি হস্তান্তরের অযোগ্য। একমাত্র বসবাসকারীরাই ওই জায়গায় ঘরবাড়ি বানিয়ে থাকতে পারেন। সেটাও একটি নির্দিষ্ট উচ্চতার মধ্যে। অথচ অভিযোগ, খগেন্দ্রনাথ গাঙ্গুলি লেনের ওই ঠিকানার প্রকৃত বসবাসকারীরা বহুতল তৈরি করাতে জমিটি এক প্রোমোটারকে দেন। ২০২০ সালে ওই বহুতল তৈরির সময় থেকেই প্রতিবেশী বাসিন্দা অমলেশ কাঁড়ার আপত্তি জানান। তিনি হাওড়া পুরসভা ও স্থানীয় গোলাবাড়ি থানায় অভিযোগও জানান। হাওড়া পুরসভার কাছে তথ্যের অধিকার আইনের বলে তিনি জানতে চান, বাড়িটির নির্মাণ নকশা পুরসভা অনুমোদন করেছে কি না।
অমলেশ জানান, ২০২০ সালের ১৬ ডিসেম্বর পুরসভা চিঠি দিয়ে জানায়, ওই বাড়ির কোনও ‘বিল্ডিং প্ল্যান’ গত ১০ বছরের মধ্যে পুরসভা অনুমোদন করেনি। এর পরেই তিনি ওই অবৈধ নির্মাণ বন্ধ করার জন্য পুরসভার কাছে আবেদন করেন। অভিযোগ, তার পরেও পুরসভা ব্যবস্থা নেয়নি। শেষে তিনি কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন। অমলেশ বলেন, ‘‘২০২১ সালের ৭ জুলাই কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অন্তরা সিংহ হাওড়া পুরসভাকে নির্দেশ দেন, ওই নির্মাণটি নিয়ে ১২ সপ্তাহের মধ্যে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। পুরসভা সেই নির্দেশও মানেনি। কয়েক মাস কাজ বন্ধ থাকার পরে ফের ওই নির্মাণ শুরু হয়েছে।’’
এ দিকে এই নির্মাণ নিয়ে এলাকাতেও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, মাত্র
আট ফুট রাস্তার ধারে ওই বহুতল হচ্ছে। পিছনেও কোনও ছাড় দেওয়া হয়নি। উপরন্তু সীমানা পাঁচিল না দিয়ে সেখানেও অবৈধ নির্মাণের চেষ্টা চলছে। ভবিষ্যতে আগুন লাগলে বা বাড়িটি ভেঙে পড়লে আশপাশের মানুষের বিপুল ক্ষতি হবে। দীর্ঘদিনের বাসিন্দা অমর রায় বলেন, ‘‘এ ভাবে কী করে ঠিকা জমিতে বাড়ি তৈরি হয় জানি না। শুধু এটিই নয়, এই এলাকায় এ ভাবে একাধিক অবৈধ বহুতল হয়েছে। পুরসভা কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।’’
বাড়িটির কোনও বিল্ডিং প্ল্যান নেই বলে পুরসভা লিখিত ভাবে স্বীকার করলেও গত তিন বছর ধরে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি? হাওড়া পুরসভার চেয়ারপার্সন সুজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আগে কেন হয়নি জানি না। তবে আমার কাছে যখন অভিযোগ এসেছে, সব খতিয়ে দেখে বাড়িটি ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দেব। এর বাইরে আর কোনও বিষয় থাকতে পারে না।’’