Mid Day Meal

‘সুর বদল’, ফেরানো হচ্ছে ছাঁটাই কর্মীদের

গত ১০ মার্চ ডিএ-র দাবিতে শিক্ষকদের কর্মবিরতির দিন স্কুলে না-আসায় কর্তৃপক্ষের রক্তচক্ষুর শিকার হন ওই ১০ কর্মী। তাঁদের বসিয়ে মঙ্গলবার নতুন ১০ জনকে নেওয়া হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০২৩ ০৬:০১
Share:

নিরাপত্তারক্ষী ও মিড ডে মিল কর্মী ছাটাইয়ের প্রতিবাদে স্কুলে বিক্ষোভ। বুধবার চুঁচুড়ায়।

ঘরে-বাইরে ‘চাপের মুখে’ ছাঁটাই করা ন’জন মিড-ডে মিল কর্মী এবং এক নিরাপত্তারক্ষীকে কাজে পুনর্বহালের কথা জানালেন হুগলি গার্লস স্কুল কর্তৃপক্ষ। এলাকার তৃণমূল বিধায়ক অসিত মজুমদার বুধবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের জানান, তিনি ওই কর্মীদের কাজ ফেরানোর জন্য স্কুল সভাপতিকে নির্দেশ দিয়েছেন। তবে, তাঁদের কাজ হারানোর পিছনে বিধায়ককেই দায়ী করছেনতৃণমূলেরই একাংশ।

Advertisement

গত ১০ মার্চ ডিএ-র দাবিতে শিক্ষকদের কর্মবিরতির দিন স্কুলে না-আসায় কর্তৃপক্ষের রক্তচক্ষুর শিকার হন ওই ১০ কর্মী। তাঁদের বসিয়ে মঙ্গলবার নতুন ১০ জনকে নেওয়া হয়। ঘটনা হচ্ছে, শাস্তির মুখে পড়া কর্মীদের কেউই মহার্ঘ্য-ভাতার আওতায় নেই। তাঁদের বক্তব্য, প্রধান শিক্ষিকার কথায় তাঁরা সে দিন গরহাজির ছিলেন। প্রধান শিক্ষিকা-সহ অধিকাংশ শিক্ষিকাও সে দিন আসেননি। অথচ, শুধু তাঁদের ‘বলি’ হতে হল।

বিষযটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পরে জনমানসে রীতিমতো প্রতিক্রিয়া হয়। সমাজমাধ্যমে নিন্দার ঝড় ওঠে। বুধবার স্কুলের সামনে বিক্ষোভ অবস্থান করে সিআইটিইউ। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং বিধায়কের বিরুদ্ধে পোস্টার সাঁটেন আন্দোলনকারীরা। কাজ হারানো কর্মীরাও পোস্টার হাতে অবস্থান করেন। তাঁদের মধ্যে এক মহিলা অসুস্থ হয়ে পড়েন। এলাকার তৃণমূল পুর প্রতিনিধি ঝন্টু বিশ্বাস এসে টোটোতে চাপিয়ে তাঁকে চুঁচুড়া হাসপাতালে নিয়ে যান। যাওয়ার সময় ঝন্টু চিৎকার করে বলেন, ‘‘চরম অমানবিক, হিটলারের থেকেও খারাপ পরিচালন সমিতি। বিধায়ক চুঁচুড়ার লজ্জা।’’

Advertisement

ঝন্টুর মন্তব্য নিয়ে বিধায়কের প্রতিক্রিয়া, ‘‘সকলের বাক্‌ স্বাধীনতা আছে। কেউ যদি কিছু বলে আনন্দ পান, ভাল।’’ নতুন নিযুক্ত অস্থায়ী কর্মীদের অন্যত্র কাজ দেওয়া হবে বলে বিধায়ক জানান।

প্রধান শিক্ষিকা গার্গী মিত্র মঙ্গলবার বলেছিলেন, ওই কর্মীরা শো-কজ়ের উপযুক্ত উত্তর দিতে না পারায় পরিচালন সমিতি কাজ থেকে সরানোর সিদ্ধান্ত নেয়। বুধবার তাঁর সুর ‘নরম’ ঠেকেছে। তিনি বলেন, ‘‘পরিচালন সমিতিতে আলোচনার মাধ্যমেই ওঁদের সরানো হয়েছে। প্রয়োজনে আলোচনা করেই পুনর্বহাল করা হবে।’’ প্রধান শিক্ষিকা ক্ষমতাবলে পরিচালন সমিতির সম্পাদক। পুনর্বহাল প্রসঙ্গে সমিতির সভাপতি সঞ্জনা সরকার বলেছেন, ‘‘দল আমাকে এই পদে বসিয়েছে। দলীয় নেতা হিসেবে বিধায়ক নির্দেশ দিতেই পারেন। পালন করব।’’

সিআইটিইউ-র জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শিক্ষিকাদের কথাতেই ওঁই কর্মীরা ওই দিন আসেননি। এখন কোনও শিক্ষিকাই ওঁদের পাশে দাঁড়ালেন না!’’ হুগলি জেলা সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের তরফেও ওই কর্মীদের ছাঁটাইয়ের তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে।

এ দিন বিভিন্ন ক্লাসের পরীক্ষা ছিল। বাইরের হট্টগোল অবশ্য ভিতরে পৌঁছয়নি। পরীক্ষা নির্বিঘ্নেই হয়েছে। অভিভাবকদের অনেকেই জানান, পরিচালন সমিতি এবং শিক্ষিকাদের মনোভাব জানলে মেয়েকে এখানে ভর্তি করাতেন না।

তৃণমূলের অন্দরে বিধায়কের বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর বলে ঝন্টু পরিচিত। আগে ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি ছিলেন ঝন্টু। গত পুরভোটের পরে বিধায়ক ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত সঞ্জনাকে ওই পদে বসানো হয়। সন্ধ্যায় ঝন্টু বলেন, ‘‘গরিবের উপরে ছড়ি ঘোরানো হচ্ছিল। সেটা আটকানোয়, ভাল লাগছে। দলেরই একাংশের জন্য দলের বদনাম হল।’’ গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের তত্ব মানেননি বিধায়ক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement