বন্ধ ঘর থেকে উদ্ধার তরুণীর ঝুলন্ত দেহ। প্রতীকী চিত্র।
আদালতের নির্দেশে স্বামীর চাকরি গিয়েছে দিন কয়েক আগে। রবিবার স্ত্রীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হল বন্ধ ঘর থেকে। এই ঘটনা ঘটেছে হুগলির বলাগড়ের সিজা-কামালপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের গৌরনই গ্রামে। পুলিশ তরুণীর দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে ইমামবাড়া সদর হাসপাতালে। একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে শুরু হয়েছে তদন্ত।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার গৌরনই গ্রামের বাসিন্দা প্রতাপ ঘোষের স্ত্রী মৌমিতা (৩২)-র ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় ঘর থেকে। প্রতাপ বলেন, ‘‘আমি মাঠে গিয়েছিলাম। আমার সঙ্গে স্ত্রীর কোনও অশান্তি হয়নি। সকাল ৯টা নাগাদ বাড়ি ফিরে দেখলাম এই অবস্থা।’’ সুচাঁদ ঘোষ নামে প্রতাপের এক প্রতিবেশী বলেন, ‘‘চাকরি যাওয়ার জন্য দুশ্চিন্তা ছিল পরিবারে। তাই এমন ঘটনা ঘটেছে বলে মনে হয়।’’
গৌরনই গ্রামের বাসিন্দা প্রতাপ ২০১৮ সালে গ্রুপ ডি পদে চাকরি পেয়েছিলেন নিকটবর্তী ডুমুরদহ ধ্রুবানন্দ হাই স্কুলে। সম্প্রতি হাই কোর্টের নির্দেশে যে গ্রুপ ডি কর্মচারীদের চাকরি বাতিল হয় সেই তালিকায় নাম রয়েছে প্রতাপের। মৌমিতা ভান্ডারটিকুরির একটি বেসরকারি কলেজে ডিএলএড পড়ছিলেন।
তবে মৌমিতাকে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করছেন তাঁর আত্মীয়রা। মৌমিতার দাদা বাবলু ঘোষ বলেন, ‘‘ওরা আমার বোনকে খুন করে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলিয়ে দিয়েছে। তার পর জানালা ভেঙে বেরিয়ে এসেছে। এর আগেও ওদের মধ্যে অশান্তি হয়েছিল। প্রতাপকে চাকরির জন্য ১০ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছিল। এই নিয়ে হয়তো বোনের সঙ্গে অশান্তি হয়েছে প্রতাপের। সেই সময় আমার বোনকে খুন করা হয়েছে। পুলিশকে বোকা বানানো হয়েছে।’’
এই ঘটনাকে ঘিরে রাজনৈতিক চাপান-উতোর শুরু হয়েছে তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে। বিজেপির হুগলি সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক সুরেশ সাউয়ের অভিযোগ, ‘‘এই মৃত্যুর জন্য তৃণমূল দায়ী। কারণ তারা শুধু চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা করেনি, যাঁরা টাকা দিয়ে চাকরি পেয়েছিলেন, তাঁদের সঙ্গেও প্রতারণা করেছে।’’
বিষয়টি নিয়ে সিজা কামালপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তথা স্থানীয় তৃণমূল নেতা অরিজিৎ দাস বলেন, ‘‘বলাগড়ে কয়েকটি বাড়িতে ইডির তল্লাশি হয়েছে। তাই চাকরিতে দুর্নীতির প্রসঙ্গ উঠবেই। কিন্তু চাকরি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে আদালত। বিষয়টিও বিচারাধীন। বিরোধীরা ঘোলা জলে মাছ ধরার চেষ্টা করছে।’’ তাঁর মতে, ‘‘এর আগেও উনি ২-৩ বার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। সেটা আমরা জানি। এ নিয়ে আমরা পঞ্চায়েতের তরফে বৈঠকেও বসেছিলাম ওঁর বাড়িতে।’’