সরেস: গুঁফো সন্দেশ। ছবি: বিশ্বজিৎ মণ্ডল
এ তল্লাটে তার নামডাক বহুকাল। কেউ বলেন, ‘গুঁফো সন্দেশ’, কেউ ‘গুপো সন্দেশ’। জোড়া সন্দেশ হিসেবেও পরিচিতি আছে।
হুগলির প্রান্তিক জনপদ গুপ্তিপাড়ার ‘ট্রেডমার্ক’ ওই সন্দেশও এবার জিআই তকমা পেতে চায়। লাভ করতে চায় রসগোল্লা, সীতাভোগ, মিহিদানা, জয়নগরের মোয়ার মতো ‘কৌলিন্য’।
ওই মিষ্টি বিক্রেতাদের সংগঠন না থাকায় বিষয়টি দানা বাঁধছিল না। বৃহস্পতিবার জিআই প্রাপ্তির বিষয়ে তত্বাবধানের দায়িত্বপ্রাপ্ত ন্যাশন্যাল ইউনিভার্সিটি অব জুরিডিক্যাল সায়েন্সেস (এনইউজেএস)-এর লোকজন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করেন। সেখানেই কমিটি গঠনের আশ্বাস মিলেছে। জিআই তকমার অর্থ, কোনও একটি অঞ্চলের জনপ্রিয় পণ্যকে ভৌগোলিক ভাবে স্বীকৃতি দেওয়া।
গুপ্তিপাড়া-১ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান বিশ্বজিৎ নাগ মিষ্টি ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান। তাঁদের দোকানে ওই সন্দেশ তৈরি হয়। বৈঠকে বিশ্বজিৎ ছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘জিআই তকমা পেলে গুঁফো সন্দেশকে কেন্দ্র করে গুপ্তিপাড়ার নামডাক বাড়বে। গুপ্তিপাড়ার মুকুটে পালক জুড়বে। ব্যবসায়ীরা আর্থিক লাভবান হবেন। আশা করছি, শীঘ্রই ব্যবসায়ী-কারিগরদের নিয়ে কমিটি তৈরি করা যাবে।’’
বৈঠকে আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক তথা কলেজ-শিক্ষক পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও ছিলেন। তিনি গবেষণার কাজ করছেন। তাঁর কথায়, ‘‘জিআই পেলে দেশ-বিদেশের মানুষের জিভে জল আনবে আমাদের এই সন্দেশ। ইতিহাস রক্ষিত হবে। ব্যবসা বাড়বে। সব দিক থেকেই লাভ।’’
এনইউজেএস-এর উপাচার্য নির্মলকান্তি চক্রবর্তীর নেতৃত্বে জিআই সংক্রান্ত বিষয়ে অধ্যাপক পিনাকী ঘোষের তত্বাবধানে কাজ করছেন পার্থ চক্রবর্তী, জয়ন্ত ঘোষ, শ্রেয়সা পাল, বিশ্বজিৎ বসু। পিনাকী বলেন, ‘‘গবেষণা অনেকটা এগিয়েছে। সমিতি গঠন হলেই পদ্ধতির পরবর্তী ধাপ শুরু হবে। জিআই ট্যাগ সেই জিনিসের গুণমান নিশ্চিত করে। বিদেশে বাণিজ্যের দরজা খুলে দিতে পারে। এলাকার অন্য মিষ্টির দোকানও এই সন্দেশ বানাতে উৎসাহী হবে।’’
গুঁফো সন্দেশের উৎপত্তি কবে, ব্যবসায়ীরা জানেন না। অনেকে মনে করেন, আগে এই সন্দেশ থকথকে থাকত। খাওয়ার সময় গোঁফে লেগে যেত। তাই ‘গুঁফো’। আবার, গুপ্তিপাড়া থেকে ‘গুপো’ নাম হয়, এই ধারণাও চালু আছে।
বেশ গর্ব করে মিষ্টি ব্যবসায়ী তারকনাথ নাগ শোনান, ‘‘আমাদের দোকানে সাত পুরুষ ধরে গুঁফো সন্দেশ তৈরির হিসাব আমার কাছেই ছিল। বন্যায় সে কাগজ নষ্ট হয়ে যায়। জিআই পেলে, ভালই হয়। দেশে-বিদেশে বিক্রি হলে আমাদেরই তো লাভ।’’ গোপাল ঘোষ নামে এক ব্যবসায়ী জানান, তিনিও উৎসাহী।
ব্যবসায়ীরা জানান, গরুর দুধের ছানা থেকে জল চেপে বের করা হয়। নিরেট ছানায় মেশানো হয় খেজুর গুড় আর চিনি, সামান্য ছোট এলাচ। সেই মিশ্রণ পাক দেওয়া হয়। নরম অথবা কড়া পাক— দুইই করা যায়। হাতের কারিকুরিতে নির্দিষ্ট আকৃতি পায়। একটার উপরে একটা সন্দেশ চাপিয়ে দেওয়া হয়। দু’টো সন্দেশ একত্রিত হয়ে তৈরি হয় গুঁফো সন্দেশ। গুপ্তিপাড়ার বড়বাজার বা স্টেশন সংলগ্ন কয়েকটি দোকানের শোকেস থেকে উঁকিদেয় তারা।
কবিয়াল ভোলা ময়রার জায়গা গুপ্তিপাড়ার গুঁফো সন্দেশের স্বাদ আরও ছড়িয়ে পড়বে কি না,সময়ই বলবে।