গোঘাটের দিঘড়া এলাকায় কালীপুর-বালিদেওয়ানগঞ্জ রোডে জলস্রোত।
দেড় মাসও কাটেনি, ফের শনিবার দ্বারকেশ্বরের জলে ভাসল আরামবাগ মহকুমার ১৫টি পঞ্চায়েত এলাকার অন্তত ৯০টি গ্রাম এবং পুর এলাকার তিনটি (২, ১২ এবং ১৮ নম্বর) ওয়ার্ড। বিপদে পড়লেন কয়েক হাজার মানুষ। অন্য দিকে, মহকুমার অন্য দুই নদনদী— দামোদর এবং মুণ্ডেশ্বরী চরম বিপদসীমার কাছাকাছি চলে এসেছে। তার উপরে ডিভিসি এ দিন ১ লক্ষ ৩০ হাজার কিউসেক হারে জল ছাড়ায় শুধু এই মহকুমাতেই নয়, বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে হাওড়ার উদয়নারাণপুরেও।
হুগলি জেলা সেচ দফতরের পক্ষ থেকে আরামবাগের স্থানীয় প্রশাসনকে এ নিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। আজ, রবিবারই ডিভিসি-র জল চলে আসবে বলে সংশ্লিষ্ট ব্লক প্রশাসন এবং পঞ্চায়েতগুলিও প্রচার শুরু করেছে। ওই দফতরের এগ্জ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার তপন পাল বলেন, ‘‘ডিভিসি জল ছাড়ায় দামোদর-মুণ্ডেশ্বরীতে জল আরও বাড়বে। সব মিলিয়ে মহকুমা সঙ্কটপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।’’
উদয়নারায়ণপুরে বন্যার আশঙ্কায় মাঠে নেমেছে হাওড়া জেলা প্রশাসনও। মোট ১৯টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। সেগুলিতে এ দিন বিকেল থেকেই লোকজনকে নিয়ে যাওয়া হয় বলে জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর। সেচ দফতরও দামোদরের বাঁধের বিপজ্জনক অংশগুলি মেরামত করতে শুরু করে।
এ দিন আরামবাগে চরম বিপদসীমার উপর দিয়ে দ্বারকেশ্বর নদের জল বয়ে কোথাও বাঁধ ভেঙে ঢুকেছে, কোথাও উপচে গিয়েছে। খানাকুল-১ ব্লকের ঠাকুরানিচক, কিশোরপুর-১ এবং ধান্যগোড়ি পঞ্চায়েত এলাকায় দ্বারকেশ্বরের বাঁধ ভাঙে। জলবন্দি হয়ে পড়েন বহু মানুষ। অনেক বাড়িতে জল ঢুকে যায়। দুর্গতদের একাংশ স্কুলে বা পাকাবাড়ির ছাদে আশ্রয় নিয়েছেন। ত্রাণ নিয়ে অভিযোগও উঠছে। ঠাকারানিচকে পরিস্থিতি দেখতে যান জেলা তৃণমূল সভাপতি দিলীপ যাদব।
ঠাকুরানিচক পঞ্চায়েতের প্রধান শীতল মণ্ডল বলেন, “৬টি গ্রামের জলবন্দি মানুষের জন্য শুকনো খাবার এবং পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রয়োজনে তাঁদের নিরাপদ জায়গায় সরানোর সব রকম পরিকাঠামো রাখা হয়েছে।’’ বিডিও শান্তনু চক্রবর্তী বলেন, “প্রয়োজনমতো জলবন্দিদের উদ্ধার করার কাজ চলছে। নদ সংলগ্ন পঞ্চায়েত এলাকাগুলিতে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।”
দ্বারকেশ্বরের পাড় উপচে আরামবাগ শহরের জলমগ্ন ওয়ার্ডগুলি থেকে প্রায় ১৫০ পরিবারকে উদ্ধার করে কালীপুর কলেজ-সহ কয়েকটি জায়গায় রেখেছে পুরসভা। প্লাবিত হয়েছে আরামবাগ ব্লকের তিরোল, সালেপুর-১ ও ২ পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকাও। ১০৭টি পরিবারকে উঁচু জায়গায় সরানো হয়েছে। বিকেলে অবশ্য দ্বারকেশ্বরের জলস্তর কিছুটা নামে বলে জানিয়েছে সেচ দফতর।
দামোদরের জলে প্লাবিত হয়েছে ধনেখালি, জাঙ্গিপাড়া, পুরশুড়া এবং খানাকুল-২ ব্লকের কিছু এলাকা। তবে চিন্তা বাড়ছে নদের পশ্চিম পাড়ে হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরকে নিয়ে। সেচ দফতরের মতে, ডিভিসি ৮০ হাজার কিউসেকের উপরে জল ছাড়লে উদয়নারায়ণপুরে বন্যা হয়। এ দিন ডিভিসি যে হারে জল ছেড়েছে, তাতে বন্যার আশঙ্কা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসনের কর্তারা। তাঁরা যে যে এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন, সেগুলি হল— জঙ্গলপাড়া থেকে রামপুর জিরো পয়েন্টের মধ্যবর্তী জায়গায় থাকা রামপুর-ডিহিভুরসুট-আসন্ডা, কুর্চি-শিবপুর, সিংটি, কানুপাট-মনসুকা এবং হরালি-উদয়নারায়ণপুর পঞ্চায়েত। এই পাঁচ পঞ্চায়েত এলাকায় দামোদরের বাঁধের বেশ কিছু অংশ বিপজ্জনক হয়ে রয়েছে। হয় সেখানে ভাঙন আছে, নয়তো বাঁধ বেশ নীচু।
এ দিন উদয়নারায়ণপুরে আসেন জেলাশাসক মুক্তা আর্য-সহ জেলা প্রশাসন ও গ্রামীণ জেলা পুলিশের কর্তারা। জেলাশাসক ব্লক প্রশাসনের পদস্থ আধিকারিক এবং সেচ দফতরের বাস্তুকারদের সঙ্গে বৈঠক করেন। হাজির ছিলেন উদয়নারায়ণপুরের বিধায়ক সমীর পাঁজা-সহ পঞ্চায়েত সমিতির পদাধিকারীরা। বৈঠক শেষে জেলাশাসক সবাইকে নিয়ে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেন। তিনি বলেন, ‘‘সম্ভাব্য বন্যা মোকাবিলায় সব রকম প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’’ সমীরবাবু জানান, উপদ্রুত এলাকা থেকে মানুষজনকে সরিয়ে ত্রাণ শিবিরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পানীয় জল এবং শিশুখাদ্য মজুত করা হয়েছে।