উদয়নারায়ণপুরে প্লাস্টিক বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ প্রকল্প। নিজস্ব চিত্র
হাওড়া জেলার মধ্যে উদয়নারায়ণপুর ব্লক বন্যাপ্রবণ। বিশ্বব্যাঙ্কের টাকায় জেলায় বন্যা নিয়ন্ত্রণের কাজ চলছে তিন বছর ধরে। আগামী বছরের মধ্যে কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। যতটুকু কাজ হয়েছে, তাতে উদয়নারায়ণপুরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই হয়েছে বলে সেচ দফতরের দাবি। গত বছর বন্যা হয়নি।বাসিন্দারা হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিলেন। ব্লকে আরও কিছু কাজে তাঁরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু প্রশ্ন রয়েছে নলবাহিত পানীয় জল সরবরাহ নিয়ে। সেই সমস্যা এ বারও মিটল না। কঠিন বর্জ্য প্রতিস্থাপনের কাজওসেই তিমিরে।
ডিভিসি গড়ে ৮০ হাজার কিউসেক জল ছাড়লেই দামোদর উপচে উদয়নারায়ণপুরকে ভাসায়। গত বছর ডিভিসি ৭৫ হাজার কিউসেক জল ছেড়েছিল। কিন্তু উদয়নারায়ণপুরবাসী তা টেরও পাননি জানিয়ে বিধায়ক সমীর পাঁজা বলছেন, ‘‘মনে হচ্ছে আমরা স্থায়ী ভাবে বন্যা থেকে মুক্তি পেতে চলেছি।’’
বন্যা নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই উদয়নারায়ণপুরকে নতুন ভাবে গড়ার কাজ শুরু করে পঞ্চায়েত সমিতি। হাতে নেওয়া হয় নানা প্রকল্প। তার মধ্যে গজাতে কুর্চি-শিবপুর পঞ্চায়েতের উদ্যোগে চালু হয়েছে প্লাস্টিক বর্জ্যি প্রক্রিয়াকরণ প্রকল্প। একমাত্র এখানেই হয়েছে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্পও। চালু হয়েছে তাঁত-হাট। তত্তুবায়দের উৎপাদিত পণ্য সেখান থেকে সহজে বিক্রি হচ্ছে। বাস স্ট্যান্ডের আধুনিকীকরণ হয়েছে। পাশেই করা হয়েছে কর্মতীর্থ। সেখানে অনেকের কর্মসংস্থান হচ্ছে।
জেলা পর্যটন মানচিত্রে নাম তুলতেও ঝাঁপিয়ে পড়েছে পঞ্চায়েত সমিতি। গড়ভবানীপুরে রায়বাঘিনী রানি ভবশঙ্করী পর্যটনকেন্দ্রকে নতুন ভাবে গড়া হয়েছে। রাজ্য পর্যটন দফতরও এতে বিনিয়োগ করতে রাজি। বকপোতায় দামোদরের বুকে চালু হয়েছে পাকা সেতু। সেতুর কাছেই আছে পরিত্যক্ত ইকো পার্ক। সেতু সংলগ্ন এলাকা এবং ইকো পার্ককে কেন্দ্র করে নতুন একটি পর্যটনকেন্দ্র গড়া হবে বলে জানান পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুলেখা পাঁজা।
স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতিতেও নানা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। উদয়নারায়ণপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালের শয্যাসংখ্যা বেড়েছে। উন্নত হয়েছে চিকিৎসা ব্যবস্থা। ৩৯টি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মধ্যে ২১টিকে সু-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পরিণত করা হয়েছে।
তবে এখনও অনেক কাজই বাকি আছে। বাড়ি বাড়ি নলবাহিত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া যায়নি। এই পঞ্চায়েত সমিতির অধীন ১১টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ১০টিতেই কঠিন বর্জ্যয় ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠেনি। বাস স্ট্যান্ড চালু হলেও সেখানে জল এবং শৌচাগারের ব্যবস্থা নেই। নিজস্ব আয় বাড়ানোর ক্ষেত্রেও সিংহভাগ পঞ্চায়েত উদাসীন।
পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির দাবি, ‘‘নলবাহিত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার জন্য জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের ২২টি প্রকল্পের কাজ চলছে। শেষ হলে পুরো ব্লকে প্রতিটি বাড়িতে নলবাহিত পানীয় জল যাবে। বাস স্ট্যান্ডের সব কাজ শেষ হয়নি। শৌচাগার ও পানীয় জলের ব্যবস্থা হবে। পঞ্চায়েতগুলিকে আয় বাড়ানোর কথা বার বার বলা হচ্ছে। কঠিনবর্জ্য ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনাও হাতে নেওয়া হয়েছে।’’