উত্তরপাড়ার একটি ‘ফিভার ক্লিনিকে’ ভর্তি রোগীরা। নিজস্ব চিত্র
করোনা তো আছেই। তার সঙ্গে এ বার হুগলি জেলা স্বাস্থ্য দফতরের ঘুম কাড়তে শুরু করল ঘরে ঘরে জ্বর। কোথাও কোথাও আবার ম্যালেরিয়া-ডেঙ্গিও উঁকি দিচ্ছে। সমস্যা বেশি হুগলি শিল্পাঞ্চলের।
সোমবার সকালে এলাকার ওষুধের দোকানে প্যারাসিটামল ট্যাবলেট কিনতে গিয়েছিলেন উত্তরপাড়ার শিবমন্দির ক্লাব লাগোয়া একাকার এক বাসিন্দা। তিনি জানান, বাড়িতে সকলের জ্বর। এমনকি, বাড়ির খুদেটারও। ওষুধের দোকানের কর্মীরা প্রমাদ গোনেন।
উত্তরপাড়া এলাকার চিকিৎসক মহল এবং হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, এখন কোভিড বাদেও ম্যালেরিয়া এমনকি ডেঙ্গিরও দেখা মিলছে এলাকায়। আবহাওয়ার কারণে (কখনও বৃষ্টি, কখনও প্রবল গরম) ভিজে বা ঘাম বসে প্রতিবারের মতো জ্বরেও আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। সাবধানে থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা।
জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘এই জেলায় মহকুমা হাসপাতালগুলি ছাড়াও প্রতিটি ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই জ্বর নিয়ে আসা মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। আমরা প্রতিটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে সতর্ক করেছি। কারণ, এই জ্বরের পিছনে কোভিডও বাসা বাঁধতে পারে। এ বছর যে ভাবে টানা বর্ষা হচ্ছে, তাতে যে কোনও ধরনের জ্বরই আর উপেক্ষা করার নয়।’’
দিন কয়েক আগেই উত্তরপাড়ার এক চিকিৎসকের কাছে বালিখাল লাগোয়া এলাকা থেকে জ্বর নিয়ে এসেছিলেন এক রোগী। পরে তাঁর ম্যালেরিয়া ধরা পড়ে। উত্তরপাড়ার চিকিৎসক ঐশ্বর্যদীপ ঘোষ বলেন, ‘‘এখন ম্যালেরিয়া-ডেঙ্গির দেখাও মিলছে। আর প্রতিদিন জ্ববের রোগী পাচ্ছি নিয়ম করে। আমার পরামর্শ, যে কোনও ধরনের জ্বর হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া খুব জরুরি। কারণ, এখন কোভিডের ভয়ও রয়েছে। বর্ষার সাধারণ জ্বর ভেবে কেউ যদি নিজের মতো করে ওষুধ খান, তা হলে বিপদ হতে পারে।’’
কিছুদিন ধরেই এই জেলায় করোনা ফের মাথা তুলছে। গুটি গুটি পায়ে জ্বরের রোগীর সংখ্যাও প্রতিদিন বাড়ছে। উত্তরপাড়া হাসপাতালের ‘ফিভার ক্লিনিকে’ সপ্তাহখানেক আগেও জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা মেরে কেটে সাত-দশ জন মিলছিল। সেই সংখ্যা এখন বাড়তে বাড়তে প্রতিদিন ৩০-৩৫ জনে ঠেকেছে বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর।
শ্রীরামপুরেরও বিভিন্ন এলাকার চিকিৎসকদের কাছে জ্বরের উপসর্গ নিয়ে প্রতিদিন মানুষ আসছেন। যদিও শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালের ‘ফিভার ক্লিনিকে’ এই মুহূর্তে জ্বরের উপসর্গ নিয়ে ভর্তি থাকা রোগীর সংখ্যা ততটা উদ্বেগের নয় বলে জানিয়েছেন এক স্বাস্থ্যকর্তা। চন্দননগরের মহকুমা হাসপাতালের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘এর আগে চন্দননগরে কোভিড পরিস্থিতি মারাত্মক হয়েছিল। তাই আমরা কোনও ঝুঁকি নিতে রাজি নই। জ্বর নিয়ে অনেকেই আসছেন। সবাইকে পরীক্ষা করাতে বলছি।’’
চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, জ্বর-সর্দি-কাশি নিয়ে অনেক রোগীই আসছেন। হাসপাতালের এক কর্তা বলেন, ‘‘জ্বরে আক্রান্তদের অনেকেই চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারেও যাচ্ছেন। স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে জেলার প্রতিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে জ্বর নিয়ে বিশেষ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সতর্ক করা হয়েছে।’’