গাছ বাঁচানোর বার্তা সিপিএমের। — নিজস্ব চিত্র।
ভোট প্রচারের ব্যানারে গাছ বাঁচানোর বার্তা দিচ্ছে সিপিএম। হুগলির চুঁচুড়া-মগরা ব্লকের ব্যান্ডেল এবং কোদালিয়া-২ পঞ্চায়েতে এ ছবি দেখে মন ভরলেও এর পাশেই অন্য ছবি উদ্বেগ বাড়িয়েছে উদ্ভিদবিদ এবং পরিবেশকর্মীদের। গাছে গাছে পেরেক সেঁটে পতাকা ঝুলিয়েছে বিজেপি।
গাছের গায়ে পেরেকের আঘাতে উদ্বিগ্ন অনেকেই প্রশাসন এবং নির্বাচন কমিশনের হস্তক্ষেপ চাইছেন। তবে, বিজেপির হুগলি সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক সুরেশ সাউ এতে কোনও ভুল দেখছেন না। তাঁর যুক্তি, যে পেরেক বা পিন পোঁতা হয়েছে, তাতে গাছের কোনও ক্ষতি হবে না। তা ছাড়া, প্রচারে গাছ ব্যবহার করা যাবে না, নির্বাচন কমিশনের এমন কোনও নির্দেশ নেই।
গত বৃহস্পতিবার রাতে সুরেশের নেতৃত্বেই কোদালিয়া-২ পঞ্চায়েতের বিদ্যামন্দির স্কুল লাগোয়া নলডাঙায় রাস্তার একপাশে আম-জাম-নিম গাছ দলীয় পতাকায় ছেয়ে ফেলেন বিজেপি কর্মীরা। কোনও গাছে বড় আকারের স্টেপলারের সাহায্যে পিন দিয়ে লাগানো হয়েছে পতাকা। মোটা ডালের ক্ষেত্রে অবাধে গাঁথা হয়েছে পেরেক।
সম্প্রতি পোলবায় গাছ কাটার বিরুদ্ধে আন্দোলন করে বিজেপি। বন দফতরে বিক্ষোভ দেখানো হয়। গাছে পেরেক গাঁথার ক্ষেত্রে পরিবেশ-বার্তার কী হবে? সুরেশের জবাব, ‘‘ছাড়ুন তো! চতুর্দিকে যখন গাছ কাটা হয়, পরিবেশ দফতর, প্রশাসন কোথায় থাকে?’’
উদ্ভিদবিদ্যার শিক্ষক দেবাশিস মণ্ডল বলেন, ‘‘গাছের উপরের অংশে ফ্লোরিন থাকে, যার সাহায্যে খাবার মূলের অংশে নেমে আসে। ফ্লোরিনের ক্ষতি হলে খাবার বাধাপ্রাপ্ত হবে। আর, গাছের ছালের অংশকে ‘কর্ক’ বলা হয়। সেখানে ফুটো করলে, জীবাণুর আক্রমণে গাছের মৃত্যু হতে পারে। সর্বোপরি, গাছের প্রাণ আছে। তাই কোনও ভাবেই তাদের আঘাত করা উচিত নয়।’’ পরিবেশবিদ বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যে দলই করুক, অন্যায়। নির্বাচন কমিশনের হস্তক্ষেপ করা উচিত।’’
নলডাঙায় রাস্তার অপর পাড় ব্যান্ডেল পঞ্চায়েত এলাকা। সেখানে সিপিএম প্রার্থীদের ব্যানারে কোথাও স্লোগান ‘গাছ লাগিয়ে ভরব এ দেশ’, কোথাও ‘আর কেটো না গাছ’। দলের ব্যান্ডেল-কোদালিয়া এরিয়া কমিটির সম্পাদক মধুসূদন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘প্রার্থীরা সমাজে বার্তা দিচ্ছেন। ওঁদের ভাবনা দল স্বাগত জানায়।’’ ব্যান্ডেল পঞ্চায়েতের ৮৬ নম্বর বুথের সিপিএম প্রার্থী উত্তম সরকার বলেন, ‘‘গাছের গায়ে আঘাত কোনও রাজনৈতিক দলের তরফেই করা উচিত নয়। প্রতিবাদ দরকার।’’