বিরামহীন: করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবার চাহিদাও। নিজস্ব চিত্র
বারবার ফোন করেও মিলছে না অ্যাম্বুল্যান্স। হাওড়া পুরসভা বা জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কন্ট্রোল রুমে ফোন করলেও অপেক্ষা করতে হচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ফলে প্রতিদিনই করোনা আক্রান্ত রোগীদের চরম সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। অন্য দিকে, বেসরকারি ক্ষেত্রে অ্যাম্বুল্যান্স পেলেও চড়া ভাড়া চাওয়া হচ্ছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে স্থানীয় ক্লাব, সমাজসেবামূলক সংস্থাগুলি সংক্রমণের আশঙ্কায় করোনা রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে চাইছে না। এই অবস্থায় এ বার হাওড়ায় পড়ে থাকা কয়েকশো বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্সকে কাজে লাগাতে তৎপর হল হাওড়া পুরসভা এবং প্রশাসন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই ক্লাবগুলিকে তাদের পড়ে থাকা অ্যাম্বুল্যান্সগুলি করোনা-যুদ্ধের কাজে লাগানোর জন্য আবেদন করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, কোভিড পরিষেবায় বর্তমানে গোটা হাওড়া জেলায় মোট ১১টি সরকারি অ্যাম্বুল্যান্স চলছে। যার মধ্যে হাওড়া পুরসভার তিনটি ও জেলা স্বাস্থ্য দফতরের আটটি অ্যাম্বুল্যান্স রয়েছে। এর মধ্যে ১০২ নম্বর ডায়ালের অ্যাম্বুল্যান্সও আছে। কিন্তু মাত্র ১১টি অ্যাম্বুল্যান্স গোটা জেলার চাহিদার তুলনায় যৎসামান্য। এক একটি অ্যাম্বুল্যান্স সারা দিন কাজ করেও পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। তাই অ্যাম্বুল্যান্স চেয়েও না-পাওয়ার অজস্র অভিযোগ জমা পড়ছে পুরসভা ও জেলা প্রশাসনের কাছে।
হাওড়া পুরসভার এক কর্তা বলেন, ‘‘গত বছর নবান্ন থেকে অনেক অ্যাম্বুল্যান্স বিভিন্ন সংস্থাকে দেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়াও তিনশোরও বেশি অ্যাম্বুল্যান্স বিভিন্ন ক্লাবের কাছে আছে। কয়েকটি ক্লাব, সংগঠন এগিয়ে এলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সেগুলি এখনও পর্যন্ত কোভিড রোগী নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে না। তাই সেগুলি স্বেচ্ছায় আমাদের ব্যবহার করতে দেওয়ার জন্য আমরা আবেদন করেছি।’’
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, অ্যাম্বুল্যান্স বাড়ন্ত হওয়ায় ইতিমধ্যে আরও অ্যাম্বুল্যান্স চেয়ে রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করা হয়েছে। পাশাপাশি হাওড়া শহরের বিভিন্ন ক্লাব ও সংগঠনগুলিকেও করোনা রোগীদের জন্য অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। যদিও কোনও ক্ষেত্রেই এখনও সাড়া মেলেনি।
জেলা প্রশাসনের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘পরিস্থিতি সামাল দিতে শহরে আরও কমপক্ষে পাঁচটি অ্যাম্বুল্যান্স প্রয়োজন। যে ভাবে দৈনিক এক হাজারেরও বেশি মানুষ শহরে আক্রান্ত হচ্ছেন, তাতে অবিলম্বে অ্যাম্বুল্যান্স না পেলে বহু মানুষ বিনা চিকিৎসায় মারা যাবেন।’’
গত বছর বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, স্থানীয় ক্লাব ও সংগঠন তাদের অ্যাম্বুল্যান্স দিয়ে সাহায্য করায় অনেকটাই সুরাহা হয়েছিল। করোনা পরিস্থিতিতে অনেকে অ্যাম্বুল্যান্স পাঠিয়ে সাহায্য করেছিলেন। এর মধ্যে তৎকালীন ক্রীড়ামন্ত্রী তথা উত্তর হাওড়ার প্রাক্তন বিধায়ক লক্ষ্মীরতন শুক্লর উদ্যোগ ছিল সব থেকে বেশি। তিনি একাই সাতটি অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করেছিলেন। কিন্তু এ বার রাজনৈতিক নেতা বা সংগঠনগুলির তরফে সেই উদ্যোগ খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। তবে কয়েকটি ক্লাব অর্থের বিনিময়ে মৃতদেহ বহনকারী গাড়ি দিয়ে সাহায্য করেছে। জেলা প্রশাসন ও পুরসভার আবেদন, হাওড়ায় কোভিড পরিস্থিতি এই মুহূর্তে মারাত্মক আকার নিয়েছে। এই অবস্থায় দলমত নির্বিশেষে সমস্ত সংগঠন ও রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের পাশে দাঁড়ানোর আর্জি জানাচ্ছে প্রশাসন।