Pradhan Mantri Awas Yojana

আবাসের ঘর মেলেনি, কিস্তির টাকা ঢুকল কার অ্যাকাউন্টে?

প্রশাসন সূত্রে খবর, ওই প্রকল্পে পাকা বাড়ি তৈরির জন্য তিন কিস্তিতে যথাক্রমে ৬০ হাজার, ৫০ হাজার এবং ১০ হাজার টাকা উপভোক্তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢুকবে।

Advertisement

সুদীপ দাস

দাদপুর শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২৪ ০৮:৪৭
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

উপভোক্তা রয়েছেন টিনের চালের একফালি ঘরে। কিন্তু সরকারি নথি বলছে অন্য কথা!

Advertisement

বছর চারেক আগে ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা’য় আবেদন জানিয়েছিলেন হুগলির পোলবা-দাদপুর ব্লকের সাটিথান পঞ্চায়েতের ৫ নম্বর বুথের মল্লিকপাড়ার বাসিন্দা সাকিলা বিবি। সরকারি নথি বলছে, ২০২০-২১ অর্থবর্ষে মোট ৩ কিস্তিতে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা পেয়েছেন সাকিলা, যা দিয়ে তিনি পাকা বাড়িও করে ফেলেছেন। কিন্তু আদতে তিনি এক টাকাও পাননি। বাড়িও হয়নি। ফলে, তাঁর টাকা কার অ্যাকাউন্টে গেল, সেই প্রশ্ন উঠছে। বিরোধীরা বিষয়টিতে ‘দুর্নীতি’র গন্ধ পাচ্ছেন। শাসকদল তৃণমূলও ‘দুর্নীতি’র সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না।

সাকিলার স্বামী আবদুর রহমান খেতমজুর। মাটির ঘর ভাঙতে থাকায় ধারদেনা করে তিনি পাঁচ ইঞ্চির পাকা দেওয়াল তুলেছেন। উপরে টিনের চাল। ছোট্ট সেই ঘরেই দম্পতি থাকেন। তিন বছর আগে সরকারি প্রকল্পে বাড়ি তৈরির অনুমোদন মিলেছে, ঘুণাক্ষরেও টের পাননি তাঁরা। সম্প্রতি পঞ্চায়েতের তরফে আবাস যোজনার বাড়ি দেখতে আসেন প্রতিনিধিরা। তখনই বিষয়টি তাঁরা জানতে পারেন। তড়িঘড়ি যান স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য ঝুমা চক্রবর্তীর বাড়িতে। অভিযোগ, ঝুমা তাঁদের কথায় কর্ণপাত করেননি। এর পরে গত ২৪ মার্চ সাকিলা দাদপুর থানায় ঝুমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। আবাসের টাকা ওই পঞ্চায়েত সদস্যা আত্মসাৎ করেছেন বলে এফআইআরে দাবি করা হয়েছে।

Advertisement

ঝুমা অভিযোগ মানেননি। তাঁর দাবি, সাকিলা-সহ বেশ কয়েক জন তাঁর বাড়িতে এসে হট্টগোল করেন। তিনিই বলেছিলেন, কোনও অভিযোগ থাকলে থানায় গিয়ে জানাতে। তাঁর বক্তব্য, গরিব মানুষ আবাসের টাকা পান, তিনিও চান। তাই পঞ্চায়েতগত ভাবে বিষয়টি তিনি দেখবেন। বিডিওকে জানাবেন। ঝুমা ওই এলাকারই চার বারের পঞ্চায়েত সদস্য।

বিডিও জগদীশচন্দ্র বারুই বলেন, ‘‘এমন কোনও অভিযোগ পাইনি। পেলে গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি দেখা হবে।’’ ওই এলাকার জেলা পরিষদ সদস্য তথা জেলা সভাধিপতি রঞ্জন ধারার আশ্বাস, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

প্রশাসন সূত্রে খবর, ওই প্রকল্পে পাকা বাড়ি তৈরির জন্য তিন কিস্তিতে যথাক্রমে ৬০ হাজার, ৫০ হাজার এবং ১০ হাজার টাকা উপভোক্তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢুকবে। প্রতি কিস্তির টাকায় নির্মাণ হচ্ছে কি না, সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতের তা পরিদর্শনের (ইনস্পেকশন) কথা। সাকিলার বাড়ির ক্ষেত্রে সরকারি নথিতে দেখা যাচ্ছে, মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে ২০২১ সালের ১৮ জুলাই নির্মাণকাজ পরিদর্শন করা হয়েছে।

প্রকৃত উপভোক্তার টাকা গেল কোথায়?

ব্লক প্রশাসনের এক কর্তা জানান, উপভোক্তা-সহ তাঁর পরিবারের কারও নাম মিলে গেলে অন্যের অ্যাকাউন্টে ভুলবশত টাকা চলে যেতে পারে। তবে, এমন ভুল সচরাচর হয় না।

হুগলির বিদায়ী বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এ রাজ্যে আবাস যোজনায় দুর্নীতি নতুন কিছু নয়। গরিব মানুষরা বাড়ি পাননি। অথচ, তৃণমূল নেতাদের সম্পত্তি বেড়েছে। এ ক্ষেত্রেও হয়তো কারচুপি করে তৃণমূল নেতারা নিজেদের অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকিয়ে নিয়েছেন!’’

আবাস যোজনায় ‘দুর্নীতি’ যে হয়েছে, মানছেন সাটিথান অঞ্চল তৃণমূলের চেয়ারম্যান তথা ঝুমার স্বামী অসিত চক্রবর্তীও। তবে, এ ক্ষেত্রে তিনি বলেন, ‘‘শুধু সাকিলা নয়, এলাকার আরও কয়েক জনের ক্ষেত্রে এমনটা হয়েছে। কী ভাবে এমনটা হচ্ছে, দলের কেউ যুক্ত কি না, সে বিষয়ে দলগত ভাবে দেখা হচ্ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement