Goghat

ভাবাদিঘি-জট কেটেছে, দাবি রেলের

রাজ্য সরকারের সঙ্গে ধারাবাহিক ভাবে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। অধিগ্রহণে কোনও অসুবিধা হবে না বলে রেলকে আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে। সেই ভরসায় কাজের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৯:৪১
Share:

গোঘাটের ভাবাদিঘি। নিজস্ব চিত্র

গ্রামবাসীদের আন্দোলনের জেরে দীর্ঘদিন ধরে গোঘাটের ভাবাদিঘিতে রেলপথ (তারকেশ্বর-বিষ্ণুপুর রেলপ্রকল্প) নির্মাণের কাজ থমকে রয়েছে। ৫২ বিঘার ওই দিঘির( দিঘির নামেই গ্রাম) একাংশ বুজিয়ে রেলপথ নির্মাণ হবে জানতে পেরে তাঁরা আপত্তি তোলেন। অবশেষে ওই প্রকল্পের জট কেটেছে বলে দাবি করল রেল। দিঘি বাঁচিয়েই রেলপথ হবে বলে জানিয়েছেন পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংয়োগ আধিকারিক একলব্য চক্রবর্তী। তবে, এ নিয়ে জেলা প্রশাসন এবং ‘দিঘি বাঁচাও কমিটি’র দাবি, তারা অন্ধকারে।

Advertisement

ওই রেলকর্তা বলেন, ‘‘দিঘি বাঁচিয়ে পাড় বরাবর রেলপথের কাজ হবে। এখনও জমি হস্তান্তর হয়নি। অনিচ্ছুকরা জমি দেবেন ধরে নিয়েই আমরা দরপত্র চূড়ান্ত করে ফেলেছি। বর্ষা শেষ হলেই আমাদের চূড়ান্ত পর্যায়ের কাজ শুরু হবে। জমির জন্য যা টাকা দরকার, তা-ও আমরা রাজ্য সরকারকে দিয়ে দিয়েছি। জমি পেলেই কাজ করব।”

একলব্যবাবু আরও জানান, জমি অধিগ্রহণ করে দেওয়ার কাজ রাজ্য সরকারের। এ নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে ধারাবাহিক ভাবে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। অধিগ্রহণে কোনও অসুবিধা হবে না বলে রেলকে আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে। সেই ভরসায় কাজের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

Advertisement

রেলের এই দাবির প্রসঙ্গে হুগলির অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি) বন্দনা পোখরিয়াল বলেন, “আমাদের কাছে এখনও এ রকম কোনও খবর নেই।” ‘দিঘি বাঁচাও কমিটি’র সম্পাদক সুকুমার রায় বলেন, “সরকারি স্তর থেকে আমাদের কাছে এ নিয়ে কোনও বার্তা আসেনি। আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি, দিঘি বাঁচিয়ে রেলপথ হোক। তা যদি হয়, আমরা সহযোগিতা করব। তবে, কী ভাবে হবে তা নিয়ে রেল আগে গ্রামবাসীর সঙ্গে আলোচনায় বসুক।” তবে, গোঘাটের প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক মানস মজুমদার বলেন, ‘‘রেলই ভুল জরিপের কাজ করে সমস্যা তৈরি করেছিল। সেটা সংশোধন করেছে বলে খবর পেয়েছি।’’

তারকেশ্বর থেকে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপর পর্যন্ত প্রস্তাবিত ৮২.৪৭ কিমি রেলপথটির জরিপের কাজ শুরু ২০০৬ সালে। গ্রামবাসীদের দাবি, তখন দিঘির উত্তর পাড় দিয়েই মাপ হয়ে অস্থায়ী সীমানা চিহ্নিত করা হয়। ২০০৮ সাল নাগাদ জমি অধিগ্রহণ চলাকালীন তাঁরা জানতে পারেন, দিঘির মাঝখান দিয়ে তা করা হচ্ছে। ২০১০ সালে ক্ষতিপূরণ বাবদ টাকা নেওয়ার জন্য রাজ্য সরকার নোটিস পাঠায়। তখন থেকেই ‘দিঘি বাঁচাও কমিটি’ গড়ে অনিচ্ছুক গ্রামবাসীরা আন্দোলন শুরু করেন। দিঘির মোট ২৬৮ জন অংশীদারের মধ্যে ১৭৭ জন ক্ষতিপূরণ নিলেও ৯১ জন নেননি। কমিটির দাবি, ভুল বুঝিয়েই তাঁদের চেক দেওয়া হয়েছিল। তবে, নকশার পরিবর্তন কী ভাবে হল, সে নিয়ে রেল বা রাজ্য— কোনও পক্ষের কাছ থেকেই উত্তর মেলেনি।

পূর্ব রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, রেলপথটির মধ্যে হুগলি জেলায় তারকেশ্বর থেকে আরামবাগ হয়ে গোঘাট পর্য্ত ৩৩.৯৪ কিমির কাজ সম্পূর্ণ হয়ে ট্রেন চলছে। অন্যদিকে, বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর থেকে ময়নাপুর পর্যন্ত ২২.৪৮ কিমিরও কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। সেখানেও ট্রেন চলছে। গোঘাট থেকে ভাবাদিঘির ৯৫০ মিটারের রেলপথের কাজ বাকি রয়েছে অনিচ্ছুকদের বাধায়। ভাবাদিঘির পরে কামারপুকুর পর্যন্ত ৫.৫০ কিমির কাজ হয়ে গিয়েছে। এ ছাড়া, হুগলি জেলার মধ্যে কাজ বাকি আছে কামারপুকুর থেকে বাঁকুড়ার জয়রামবাটী পর্যন্ত (৩.৩০ কিমি)। এর মধ্যে ০.৭৫৫ কিমি জমি রেলকে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি ২.৫৪৫ কিমি জমি অধিগ্রহণ করা হলেও ক্ষতিপূরণ বিলি করা হয়নি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement