শিশু কোলে বিউটি। নিজস্ব চিত্র।
তমলুকের এক সদ্যোজাতের পেটের নানা প্রত্যঙ্গ শরীরের থেকে বেরিয়ে এসেছিল। প্রমাদ গুনেছিলেন সেখানকার একটি নার্সিংহোমের চিকিৎসকেরা। তড়িঘড়ি ‘রেফার’ করেছিলেন কলকাতার হাসপাতালে। কিন্তু কলকাতায় নয়, স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের মাধ্যমে নিরখচায় গত ১ নভেম্বর শিশুটির জটিল অস্ত্রোপচার হল হাওড়ার ফুলেশ্বরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সে দিনই শিশুটির জন্ম হয়েছিল। সফল অস্ত্রোপচার শেষে ৩৮ দিন হাসপাতালে কাটানোর পর সুস্থ সন্তানকে নিয়ে বৃহস্পতিবার বাড়ি ফিরলেন মা বিউটি বিবি।
ফুলেশ্বরের ওই হাসপাতালের ডিরেক্টর তথা চিকিৎসক শুভাশিস মিত্র জানান, সদ্যোজাতের এই সমস্যাকে চিকিৎসার পরিভাষায় বলা হয় ‘গ্যাস্ট্রোকাইসিস’। ভ্রূণের গঠনগত ত্রুটির জন্য বড়, মাঝারি বা ছোট ছিদ্রের মাধ্যমে অনেক সময় লিভার, যকৃতের মতো প্রত্যঙ্গ পেটের বাইরে বেরিয়ে আসে। তাঁর কথায়, ‘‘মহিলার কাছে আলট্রা-সাউন্ডের কোনও রিপোর্ট ছিল না। শিশুটির অবস্থা সঙ্কটজনক বুঝে আট চিকিৎসকের দল তৈরি করে প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে চলে অস্ত্রোপচার। সব চিকিৎসক ও কর্মীদের সহযোগিতায় অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে। শিশুটি সুস্থ আছে।’’
এ দিন হাসপাতাল থেকে বেরনোর সময় বিউটি বলেন, ‘‘প্রমাণ পেলাম চিকিৎসকেরাই আসলে ঈশ্বর। ছেলেকে ফিরে পাবভাবিনি। চিকিৎসকদের এই ঋণ কখনও মেটাতে পারব না।’’আর শিশুটির বাবা, পেশায় দিনমজুর মোস্তাকের কথায়, ‘‘এত বড় জায়গায় নিখরচায় এমন পরিষেবা পেলাম। মুখ্যমন্ত্রীর স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের কোনও তুলনা নেই। সে দিন আনার সময়ে ছেলেটা নিস্তেজ হয়ে পড়ছিল। তাই কলকাতা পর্যন্ত আর যাইনি। এখানেই ভর্তি করিয়েছিলাম।’’
চিকিৎসকদের প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানিয়ে গ্রামীণ হাওড়ার শিশু চিকিৎসক অনুপ মঙ্গল বলেন, ‘‘এমন জটিল অস্ত্রোপচার সম্ভবত জেলায় প্রথম। ওই বেসরকারি হাসপাতালের উন্নত মানের যন্ত্রপাতি ও অপারেশন থিয়েটারও এই কাজে অনেকটা সাহায্য করেছে।’’
শিশু চিকিৎসক অনিরুদ্ধ ঘোষের কথায়, ‘‘গর্ভাবস্থায় বেশ কয়েকটি আলট্রাসাউন্ড সোনোগ্রাফি টেস্টের (ইউএসজি) প্রয়োজন রয়েছে। সেগুলো দেখলে অনেক সময় গর্ভস্থ শিশুর কিছু ত্রুটি থাকলে চিকিৎসা করা যায়। কিন্তু এখনও অনেকের মধ্যেই ইউএসজি নিয়ে ভুল ধারণা রয়েছে। সরকারি হাসপাতালে কিন্তু নিরখরচায় এই পরিষেবা মেলে।’’