অভিযুক্ত: খানাকুল-১ পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য জিয়ামুন্নেসা দরগা। নিজস্ব চিত্র
এ বার চাকরি করে দেওয়ার নামে ৫ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা নিয়ে প্রতারণার অভিযোগ উঠল খানাকুলের এক তৃণমূল নেত্রীর বিরুদ্ধে। খানাকুল-১ পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য জিয়ামুন্নেসা দরগাই নামে ওই নেত্রীর বিরুদ্ধে এক আনাজ চাষি পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন। নেত্রী অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
ক’দিন আগে ঠিক একই রকম অভিযোগ উঠেছিল বলাগড় ব্লক তৃণমূল সভাপতি নবীন গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। তবে এ ক্ষেত্রে ‘প্রতারিত’ চাকরিপ্রার্থীর বাবা পুলিশের নয়, দ্বারস্থ হয়েছিলেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের। দলীয় নেতাদের মধ্যস্থতায় গত শুক্রবার সুনীল দাস নামে বলাগড়ের রুকেশপুরের ওই ব্যক্তিকে এক লক্ষ টাকা ফিরিয়ে দেন নবীন। আশ্বাস দেওয়া হলেও এখনও নবীনের বিরুদ্ধে দলের পক্ষ থেকে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে, গত শনিবার অভিযোগের কথা জানাজানি হওয়ায় জিয়ামুন্নেসাকে দলের রামমোহন-২ অঞ্চলের সহ-সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
গোবিন্দপুর গ্রামের আনাজ চাষি ব্রজমোহন আদকের ছেলের রাজ্য সরকারের ‘গ্রুপ-সি’ পদে চাকরির জন্য জিয়ামুন্নেসা ওই টাকা ২০১৮ সালে নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। তিনি তখন খানাকুল-১ পঞ্চায়েত সমিতির শিশু ও নারী উন্নয়ন স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ ছিলেন। এতদিনেও ছেলের চাকরি হয়নি। চেয়েও টাকা ফেরত পাননি, এই অভিযোগ তুলে ব্রজমোহন ওই নেত্রীর বিরুদ্ধে সম্প্রতি এসডিপিও (আরামবাগ) অভিষেক মণ্ডলের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। এসডিপিও জানান, অভিযোগের তদন্ত চলছে।
অভিযোগে ব্রজমোহন জানিয়েছেন, ছেলের ‘গ্রুপ-সি’ পদে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০১৮ সালে ৮ লক্ষ টাকা চেয়েছিলেন জিয়ামুন্নেসা। পরে ৫ লক্ষ ৮০ হাজারে রফা হয়। পৈতৃক জমি বন্ধক রেখে সেই টাকা দেওয়ার সময় ওই নেত্রী কথা দিয়েছিলেন, চাকরি না হলে টাকা ফেরত দেবেন। কিন্তু চাকরিও হয়নি, টাকাও ফেরত পাওয়া যায়নি।
ওই আনাজ চাষি বলেন, ‘‘চাকরি না হওয়ায় ২০১৯ সালের মাঝামাঝি থেকে আমি এবং ছেলে টাকা চেয়ে নেত্রীর বাড়িতে বহুবার গিয়েছি। উনি ফেরতের আশ্বাস দিতেন। গত বছর থেকে সুর বদলান। টাকা চাইতে গেলে অন্য মামলায় ফাঁসিয়ে জেল ঢোকানোর হুমকি দিয়ে বের করে দিচ্ছিলেন। এখন নিয়োগ-দুর্নীতিতে নেতাদের ধরা হচ্ছে। তাই সাহস করে অভিযোগ করেছি।”
জিয়ামুন্নেসার বাড়ি কায়বা এলাকায়। তিনি বাড়ির কাছে আটঘড়া শিশু শিক্ষাকেন্দ্রের শিক্ষিকাও। ওই কেন্দ্রে মিড-ডে মিলের আনাজ সরবরাহ করার সূত্রেই তাঁর সঙ্গে ব্রজমোহনের আলাপ হয়। নেত্রীর দাবি, ‘‘ব্রজমোহনবাবু আমরা পরিচিত ঠিকই। কিন্তু তাঁর ছেলের চাকরি নিয়ে আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে আমরা কোনও যোগ নেই। উনি অভিযোগ প্রমাণ করুন। চাকরির জন্য আমি কিছু যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছিলাম। সেখানে ওঁরা কোনও লেনদেন করেছেন কি না, জানা নেই।”