Oppression

‘প্রতিবাদ করলেই জোটে হুমকি-মার’

এলাকার মতো এখানেও গত পঞ্চায়েত ভোটে বিরোধী দলের কাউকে মনোনয়ন জমা দিতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে।

Advertisement

সুব্রত জানা

জগৎবল্লভপুর শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৩ ০৭:১১
Share:

ঘটনার পর শুনশান গ্রাম। — নিজস্ব চিত্র।

‘মুলুক’ যারই হোক না কেন ‘জোর’ খাটবে শুধু শেখ ইব্রাহিমের। ‘বিরোধীশূূন্য’ জগৎবল্লভপুরের পোলগুস্তিয়ায় কান পাতলে শোনা যায় এ কথা। মঙ্গলবার আমতা মুন্সিরহাট রোডের পাশে পোলগুস্তিয়ার ইমামতলায় বাড়ি তৈরি নিয়ে বিবাদের জেরে বোমা-গুলি চলে বলে অভিযোগ। ওই ঘটনায় জড়িয়ে গিয়েছে স্থানীয় তৃণমূল নেতা ইব্রাহিমের নাম, যাঁকে ‘গোরা’ নামে এক ডাকে চেনেন সকলে।

Advertisement

অনেক এলাকার মতো এখানেও গত পঞ্চায়েত ভোটে বিরোধী দলের কাউকে মনোনয়ন জমা দিতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এ বার তৃণমূলের অন্দরমহল থেকে অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে, অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে ইব্রাহিমের লোকজন ‘ছেড়ে কথা বলে না’ দলের কর্মীদেরও। ‘হুমকির’ পাশাপাশি জোটে ‘মারধরও’। ঠিক যেমন জুটেছে এ দিন।

অভিযোগ, এ দিন গ্রামে যারা হামলা চালায়, তাদের অনেকেই ইব্রাহিমের ঘনিষ্ঠ। সেই দলে ছিলেন ইব্রাহিমের ছেলেও। বৃন্দাবন মাইতি ওই এলাকার তৃণমূল কর্মী বলে পরিচিত। তাঁর কথায়, ‘‘গ্রামে কোনও প্রতিবাদ করা যাবে না। শেখ ইব্রাহিম যা ইচ্ছা, তা-ই করবে। তার মুখের উপরে কোন কথা বলা যাবে না। প্রতিবাদ করতে গিয়ে তৃণমূল কর্মী হয়েও মার খেয়েছি। ইব্রাহিমের লোকজন আমার মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে।’’ এ দিনের ঘটনার পরে মুখ খুলেছেন অনেকেই। তাঁদের মধ্যে বিভাস জানা, বিষ্ণুপদ মাইতির দাবি, ‘‘গ্রামে বিরোধীপক্ষ না থাকায় শাসক দল যা ইচ্ছা তাই করছে।’’ অরুণ গায়েন নামে আর এক গ্রামবাসী বলেন, ‘‘ভয় দেখিয়ে গ্রামসভা ও পঞ্চায়েত সমিতির আসনে বিরোধীদের এ বার মনোনয়ন জমা দিতে দেয়নি তৃণমূল।’’

Advertisement

স্থানীয় বিজেপি নেতা অশোক সিংহের অভিযোগ, ‘‘এলাকায় প্রচুর মানুষ আছেন, যাঁরা প্রকৃত অর্থে তৃণমূল-বিরোধী। তাঁদের ভয় দেখিয়ে দমিয়ে রাখে ইব্রাহিম। প্রতিবাদ করলেই তাঁদের কপালে জোটে মার। শাসক দল চায়, তাদের কোনও অন্যায়ের প্রতিবাদ করা যাবে না। তাদের একশ্রেণির নেতা যা ইচ্ছা তাই করবে। গ্রামের মানুষ এ দিন প্রতিবাদ করতে গিয়েছিলেন। তাঁদের মারধর করা হয়েছে।’’

এ দিকে, তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন ইব্রাহিম। তাঁর দাবি, ‘‘হয়তো না বুঝেই এ সব কথা আমার নামে বলেছে কেউ কেউ। গ্রামবাসী হয়তো কারও প্ররোচনায় পা দিয়েছে। আলোচনা করে মিটিয়ে নেব।’’ সঙ্গে জোড়েন: ‘‘এ দিন ঘটনা ঘটার পরে আমি নিজেই ওই জায়গায় গিয়েছিলাম। মানুষকে শান্ত করেছি। পুলিশকে বলেছি, যেন কোনও ভাবেই দোষীরা রেহাই না পায়। আমার ছেলের নামে যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তা ঠিক নয়। এটা বিজেপির চক্রান্ত। ঘটনার সময় ছেলে ওই জায়গায় ছিল না।’’ ইব্রাহিমের দাবি, ‘‘এক জন প্রোমোটারের সঙ্গে গ্রামবাসীর ঝামেলা হয়েছে। এর সঙ্গে রাজনীতির যোগ নেই।’’ বিজেপির অভিযোগ নিয়ে ইব্রাহিমের প্রতিক্রিয়া, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটে বিরোধীরা প্রার্থী খুঁজে পায়নি। তাই তারা মনোনয়ন জমা দিতে পারেনি।’’ পাঁচলার তৃণমূল বিধায়ক গুলশান মল্লিক মনে করেন, ‘‘হয়তো ব্যক্তিগত কোনও আক্রোশ থেকে ইব্রাহিমের নামে এ সব কথা কেউ বলেছে। ইব্রাহিম ঘটনাস্থলে যায়নি। দলের কোনও কর্মীর কোনও কারণে ওর উপরে রাগও থাকতে পারে। তাই হয়তো ইব্রাহিমের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement