অগ্নিদগ্ধ এক কর্মীকে আনা হয়েছে একবালপুরের সিএমআরআই হাসপাতালে। বুধবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
হাসপাতাল চত্বরে ঢুকছে একের পর এক অ্যাম্বুল্যান্স। পর পর নিয়ে আসা হচ্ছে আগুনে ঝলসে যাওয়া রঙের কারখানার কর্মীদের। শুধু অ্যাম্বুল্যান্সের জন্য তৈরি করা হয়েছে আলাদা একটি করিডর।
বুধবার বিকেলে একবালপুরের সিএমআরআইয়ের জরুরি বিভাগের সামনে ভিড়ে ভিড়াক্কার। দড়ি দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে প্রবেশপথ। যাঁদের নিয়ে আসা হচ্ছে, তাঁদের কারও হাত, কারও পা, কারও বা শরীরের অন্যান্য অংশ পুড়ে গিয়েছে। অগ্নিদগ্ধদের দ্রুত ভিতরে নিয়ে যেতে বাইরে রাখা হয়েছিল পর্যাপ্ত সংখ্যক ট্রলি। তাঁদের মধ্যে দু’জনের অবস্থা সঙ্কটজনক হওয়ায় বিকেলেই এসএসকেএমে নিয়ে যাওয়া হয়।
এ দিন দুপুরে হাওড়ার শালিমারে বার্জার পেন্টসের কারখানায় আগুন লেগে জখম হন মোট ২২ জন। তাঁদের প্রথমে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে ১৪ জনকে পাঠানো হয় একবালপুরের ওই বেসরকারি হাসপাতালে। এ দিন সেই হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, জখম কর্মীদের পরিজনেরা সকলেই উৎকণ্ঠায়। হাওড়ার শিবপুরের বাসিন্দা পিন্টু কোলে নামে এক কর্মীর দুটো হাত ঝলসে গিয়েছে। তাঁর ভাই রিন্টু বললেন, ‘‘দুপুরে আমিও কাজের জায়গায় ছিলাম। কারখানায় আগুন লাগার খবর পেয়ে দাদাকে ফোন করি। দাদা জানায়, ওর দুটো হাত পুড়ে গিয়েছে। ওকে দ্বিতীয় হুগলি সেতুর কাছে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’’ রিন্টু জানান, ওই হাসপাতালে পৌঁছে তিনি জানতে পারেন, পিন্টুকে কলকাতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। সে কথা শোনামাত্রই দাদার অ্যাম্বুল্যান্সের পিছনে মোটরবাইক নিয়ে রওনাদেন তিনি।
একবালপুরের ওই বেসরকারি হাসপাতাল থেকে অগ্নিদগ্ধ কয়েক জনকে নিয়ে আসা হচ্ছে বলে পুলিশের মাধ্যমে খবর পেয়েছিলেন এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ। সেই মতো তড়িঘড়ি ট্রমা কেয়ার সেন্টারের ‘ডিজ়াস্টার জ়োন’-এ শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়। বিকেল পাঁচটা নাগাদ ৫২ বছরের উত্তম দাস ও ২৭ বছরের তপন দেশাইকে নিয়ে আসা হয় সেখানে। চিকিৎসকেরা জানান, ওই দু’জনের অবস্থা বেশি সঙ্কটজনক হওয়ায় তাঁদের এসএসকেএমে স্থানান্তরিত করা হয়। সেই খবর পেয়ে ওই রং কারখানার অন্য কর্মীরা ট্রমা কেয়ারের সামনে চলে আসেন। বাইরে ভিড় জমতে শুরু করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। হাসপাতালের আধিকারিকেরাও উপস্থিত ছিলেন ট্রমা কেয়ারে।
উত্তম ও তপনকে প্রথমে ট্রমা কেয়ারের জরুরি বিভাগে পরীক্ষা করা হয়। তার পরে পাঠানো হয় ‘ডিজ়াস্টার জ়োন’-এ। সেখানে ইমার্জেন্সি মেডিসিন এবং প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকেরা মিলে ওই দু’জনের চিকিৎসা শুরু করেন। সূত্রের খবর, তপনের সারা শরীর ঝলসে যাওয়ায় তাঁর অবস্থা অতি সঙ্কটজনক। পাশাপাশি, শরীরের পিছনের অংশ ঝলসে গিয়ে সঙ্কটে উত্তমও। দু’জনকে নিয়েই উদ্বেগে রয়েছেন চিকিৎসকেরা।
শালিমারের ওই কারখানার যে এসি ঘরে আগুন লেগেছিল, সেখানে তাপমাত্রা মাইনাস ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখা হয়। সেখানে প্রচুর দাহ্য পদার্থও মজুত থাকে। অত্যধিক পরিমাণ দাহ্য পদার্থ মজুত থাকার ফলেই এ দিন আগুন নেভাতে গিয়ে ঝলসে গিয়েছেন অনেকে। আহতদের মধ্যে অশোক মণ্ডল নামে এক জনের মাথা পুড়ে গিয়ে চুল উঠে গিয়েছে। তিনি একবালপুরের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অশোকবাবুর প্রতিবেশী কল্যাণ পোলের কথায়, ‘‘আগুন লাগার খবর পেয়েই কারখানায় ছুটে যাই। সেখান থেকে হাওড়ার বেসরকারি হাসপাতাল ও পরে একবালপুরে আসি। অশোক দীর্ঘদিনের বন্ধু। ওর মাথা ও পিঠের কিছুটা অংশ পুড়ে গিয়েছে।’’
একবালপুরের ওই বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক অনুপম গোলাস বললেন, ‘‘আমাদের হাসপাতালে যাঁদের আনা হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে দু’জনের শরীরের বেশির ভাগ অংশ পুড়ে যাওয়ায় এসএসকেএমে স্থানান্তরিত করা হয়। আহতদের দেখে মনে হচ্ছে, কোনও ভাবে বিস্ফোরণজনিত কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। এখানেচিকিৎসাধীন দু’-তিন জনের শারীরিক অবস্থা একটু খারাপ। বেশির ভাগেরই হাত, পা, পিঠ পুড়ে গিয়েছে। কারও কারও শরীরের বেশির ভাগ অংশই ঝলসে গিয়েছে।’’