ধুন্ধুমার: বুধবার আন্দুলের প্রভু জগদ্বন্ধু কলেজে দু’পক্ষের হাতাহাতি। নিজস্ব চিত্র।
অভিযোগ, ক্ষমতাসীন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) পতাকা তুলবে কোন গোষ্ঠী, তা নিয়ে উভয় পক্ষের বচসা ঘিরে গোলমালের সূত্রপাত। মুহূর্তের মধ্যে সেই গন্ডগোলের চরম বিস্ফোরণ বুধবার দেখল হাওড়ার আন্দুলের প্রভু জগদ্বন্ধু কলেজ। অভিযোগ, ক্লাস থেকে বেরিয়ে এসে কয়েকশো পড়ুয়া একে অপরের উপরে লাঠি, রড, লোহার চেন, এমনকি ধারালো অস্ত্র নিয়ে চড়াও হন। বাদ যায়নি রাস্তায় ফেলে পেটানোও। সংঘর্ষের জেরে আহত হন তিন পড়ুয়া। তাঁদের মধ্যে এক জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ১২ বছর আগে আন্দুলের এই কলেজেই এসএফআই এবং তৃণমূল ছাত্র পরিষদের মধ্যে সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছিলেন স্বপন কোলে নামে এক এসএফআই সমর্থক। সেই ঘটনার এক দশক পরে ফের একই ধরনের ঘটনা ঘটায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়ায় কলেজ জুড়ে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সাঁকরাইল কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক প্রিয়া পাল কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি হওয়ার পর থেকেই টিএমসিপি-র দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে অশান্তির মেঘ ঘনাচ্ছিল। একটি গোষ্ঠী দাবি করে, এই কলেজটি যে হেতু দক্ষিণ হাওড়া বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত, তাই কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি হওয়ার কথা সেখানকার তৃণমূল বিধায়ক নন্দিতা চৌধুরীর। এ বিষয়ে নন্দিতারও দাবি, ‘‘কথাটা ঠিক। আমার সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। বিষয়টি শিক্ষামন্ত্রীকে জানিয়েছি। উনি প্রিয়া পালকে দু’মাসের মধ্যে সভাপতির দায়িত্ব থেকে সরে যেতে বলেছেন। ওঁর জন্যই এ দিন গোলমাল হয়েছে।’’ যদিও প্রিয়ার বক্তব্য, ‘‘এই দায়িত্ব দল আমাকে দিয়েছে। দক্ষিণ হাওড়ার বিধায়ক দেননি। ওঁর কিছু বলার থাকলে উনি দলকে বলতে পারেন। দল বললে আমি সরে যাব।’’
স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, দুই বিধায়কের মতানৈক্য ঘিরে গত এক মাস ধরে মাঝেমধ্যেই কলেজের টিএমসিপি-র দুই গোষ্ঠীর মধ্যে গন্ডগোল হচ্ছিল। এ দিন সেটাই চরম আকার নেয়। পুলিশি সূত্রে জানা গিয়েছে, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের একদল সমর্থক এ দিন কলেজের ইউনিয়ন রুমের সামনে একটি বেদিতে দলীয় পতাকা লাগাতে গিয়েছিলেন। অভিযোগ, তাঁদের বাধা দেন বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর কয়েক জন। ওই গোষ্ঠীর দাবি, তাঁরাই আসল টিএমসিপি সমর্থক। দাবি-পাল্টা দাবি ঘিরে দু’পক্ষে প্রথমে পতাকা নিয়ে টানাহেঁচড়া শুরু হয়। নিমেষের মধ্যে সেটাই গড়ায় সংঘর্ষে। অভিযোগ, ক্লাস থেকে বেরিয়ে এসে কয়েকশো পড়ুয়া লাঠি, রড, ধারালো অস্ত্র নিয়ে পরস্পরের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়েন। হামলায় তিন পড়ুয়া আহত হন। তাঁদের মধ্যে শুভম মাঝি নামে দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রের আঘাত গুরুতর হওয়ায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সৈকত নস্কর নামে তৃতীয় বর্ষের এক পড়ুয়া বলেন, ‘‘আমরা দলীয় পতাকা লাগাতে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদেরই বহিরাগত তকমা দিয়ে এক দল বাইরের ছেলে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আক্রমণ করে। আমাকে ও আরও দু’জনকে রাস্তায় ফেলে রড দিয়ে পেটায়।’’
যদিও কলেজে বহিরাগতেরা প্রবেশ করেছিলেন বলে মানতে নারাজ অধ্যক্ষ সুব্রতকুমার রায়। তিনি বলেন, ‘‘পাশ করে যাওয়া কয়েক জন ছাত্র এ দিন শংসাপত্র নিতে এসেছিলেন। তাঁরা বহিরাগত নন।’’ তবে দু’দল ছাত্রের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা প্রসঙ্গে অধ্যক্ষ জানান, বিষয়টি নিয়ে তিনি কিছু বলবেন না। পুলিশ ও কলেজের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে দেখছেন।
এ দিকে, কলেজে ছাত্র সংঘর্ষের খবর পেয়ে ছুটে যায় বিশাল পুলিশবাহিনী। সব পড়ুয়াকে বার করে আহতদের হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। হাওড়া সিটি পুলিশের এসিপি (দক্ষিণ) মাজিদ খান বলেন, ‘‘বুধবার রাত পর্যন্ত কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। তবে কলেজের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখছি।’’