ঘটনাস্থলে স্থানীয়দের জটলা। ছবি: তাপস ঘোষ।
তাড়াতাড়ি ফেরার কথা বলে বেরিয়েও বৃহস্পতিবার রাতভর বাড়ি ফেরেননি মানকুণ্ডুর লেকভিউ এলাকার এক যুবক। শুক্রবার দুপুরে এলাকার একটি পুকুর থেকে অমিত কারক (২৭) নামে ওই যুবকের ক্ষতবিক্ষত দেহ মিলল। দেহটি একটি প্রতিমার কাঠামোর সঙ্গে বাঁধা ছিল। তাঁকে খুনে জড়িত অভিযোগে রাতে মানকুণ্ডু ষষ্ঠীতলার বাসিন্দা অজয় মণ্ডল এবং প্রান্তিকের বাসিন্দা বুদ্ধদেব রায়কে পুলিশ গ্রেফতার করে। তার আগে দুপুরে দেহ উদ্ধারের পরে মানকুণ্ডু স্টেশন রোডে একটি ক্লাবের সামনে অজয়ের বাবার চায়ের দোকানে ভাঙচুর চালায় জনতা। অজয় প্রায়ই ওই দোকানে বসত।
তবে, কী কারণে খুন এবং ধৃতেরা কী ভাবে ওই ঘটনায় যুক্ত তা রাত পর্যন্ত জানায়নি পুলিশ। চন্দননগর কমিশনারেটের এক কর্তা বলেন, ‘‘ধৃতদের জেরা করা হবে। নিহতের পরিবারের লোকেরা খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন। সব দিক খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’’
তদন্তকারী পুলিশ অফিসারদের অনুমান, মারধর করে অমিতকে খুনের পরে দেহটি যাতে সহজে ভেসে না ওঠে, সে জন্যই কাঠামোর সঙ্গে বেঁধে পুকুরে ফেলা হয়েছে। নিহতের বাড়ির লোকজন গোটা ঘটনায় ধন্দে।
পুলিশ ও ওই পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, অমিত নানা অনুষ্ঠানে ফুলসজ্জা এবং আলোকসজ্জার কাজ করতেন। বৃহস্পতিবার রাতে সেই কাজের টাকা দিতে বাড়ি এসেছিলেন তাঁর এক বন্ধু। তিনি চলে যেতেই ৮টা নাগাদ মা আল্পনাদেবীকে তাড়াতাড়ি ফেরার কথা বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন অমিত। রাত ১১টা নাগাদ আল্পনাদেবী ছেলেকে ফোন করেছিলেন। অমিত তাঁকে ‘একটু পরেই’ ফিরবেন বলে জানান। কিন্তু মধ্যরাতেও অমিত না-ফেরায় পরিবারের লোকজন বারবার ফোন করতে থাকেন। কিন্তু অমিতের মোবাইল বন্ধ ছিল। তখন পড়শিদের কয়েকজনকে নিয়ে তাঁরা খুঁজতে বের হন। কিন্তু অমিতের সন্ধান মেলেনি।
শুক্রবার বেলা ১২টা নাগাদ ওই পুকুরপাড়ে কিছু রক্তের দাগ দেখে স্থানীয় বাসিন্দাদের সন্দেহ হয়। তাঁদের নজরে পড়ে পুকুরে পড়ে থাকা প্রতিমার কাঠামোর ফাঁকে মানুষের পা। খবর পেয়ে অমিতের বাড়ির লোকেরা ঘটনাস্থলে হাজির হন। পুলিশ দেহটি উদ্ধার করলে তাঁরা শনাক্ত করেন।
নিহত মৃত অমিত কারক।
অমিতের এহেন পরিণতি মানতে পারছেন না এলাকাবাসী। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে মানকুণ্ডু স্টেশন রোডে এক মন্দিরের সামনে দুই যুবকের বচসা এবং হাতাহাতির কথা শুনেছেন অনেকেই। যুযুধান দুই যুবকের একজন অমিত ছিলেন কি না, তা নিয়েও জল্পনা চলে এ দিন।
নিহতের বাবা রঞ্জনবাবু বলেন, ‘‘ছেলে কাজ নিয়েই থাকত। ঝগড়া-বিবাদ এড়িয়ে চলত। কারা কেন ওকে এ ভাবে হত্যা করল, বুঝতে পারছি না। দোষীদের যেন উপযুক্ত শাস্তি হয়।’’ অমিতের পড়শি রঞ্জিৎ দাস বলেন, ‘‘ছেলেটা খুব শান্ত স্বভাবের ছিল। ওর খুন হওয়া মানতে পারছি না। দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া উচিত।’’