পুরভোটের প্রচারে সব দলেরই পতাকায় ঢেকেছে শহর। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র।
পাড়ায় পাড়ায়, মোড়ে মোড়ে তিন পক্ষের পতাকার সহাবস্থান। বাড়ি বাড়ি ঘুরে ভোটভিক্ষা, অটো-টোটোর মাথায়, বাতিস্তম্ভে মাইক বেঁধে প্রচারে গলা ফাটানোর পালা শেষ হল বৃহস্পতিবার বিকেলে। রাত পোহালেই ভোট চন্দননগরে। তৈরি আলোর শহর।
ভোট হওয়ার কথা ছিল গত ২২ জানুয়ারি। করোনার কারণে তা পিছিয়ে কাল ১২ ফেব্রুয়ারি হচ্ছে। তবে, কোভিড আসার ঢের আগে থেকেই পুরভোট নিয়ে চর্চা চলছিল এ শহরে। কারণ, শাসক দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে ২০১৮ সালের অগস্ট মাসে পুরবোর্ড ভেঙে দেয় রাজ্য সরকার। তার পর থেকে নির্বাচিত পুরবোর্ড ছাড়াই চলেছে পুরপ্রশাসন। বিরোধীদের দাবি, পরিষেবা নিয়ে জনগণের উষ্মাতেও নির্বাচন হয়নি। অবশেষে, প্রতীক্ষার অবসান। গণতন্ত্রের উৎসবে শামিল জগদ্ধাত্রীর শহর।
ভোট পিছিয়ে যাওয়ায় প্রচারের সময় বেড়েছে। তাতে বিরোধীরা খুশি। করোনাকালে নানা বিধিনিষেধ নিয়ে প্রচার চলেছে। তৃণমূল, বিজেপি, সংযুক্ত নাগরিক কমিটির ছাতার তলায় থাকা সিপিএম, ফরওয়ার্ড ব্লক— সব দলই বাড়ি বাড়ি প্রচারের ‘সনাতন’ পদ্ধতির উপরে জোর দিয়েছিল। খাতায়-কলমে কংগ্রেসও আছে। তৃণমূল প্রচারে স্থানীয় নেতাদের উপরে ভরসা করেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ অন্য হেভিওয়েটরা ভিন্ রাজ্যের ভোটে উড়ে গিয়েছেন। চন্দননগরে দেখা মেলেনি। সিপিএমের সুজন চক্রবর্তী, পলিটবুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম একাধিক দিন প্রচারে এসেছেন। আর বিজেপির তরফে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, সাংসদ অর্জুন সিংহ, দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, তাঁর পূর্বসূরি দিলীপ ঘোষ, রাহুল
সিংহ— কে আসেননি। পুরশুড়ার বিধায়ক বিমান ঘোষ তো ছিলেনই। প্রচারের ঝড় আছড়ে পড়েছে গঙ্গাপাড়ের শহরে।
শাসক দল বলছে, ভোট হবে উন্নয়নের নিরিখে। কিসের উন্নয়ন? দলের নেতা-প্রার্থীরা গড়গড় করে বলছেন কন্যাশ্রী, যুবশ্রী, স্বাস্থ্যসাথী, রূপশ্রীর মতো একের পর এক রাজ্যের প্রকল্পের কথা। পুরসভার ক্ষেত্রে তাঁদের বক্তব্য, রাস্তা, আলো, পানীয় জল, স্বাস্থ্য— সবেতেই শহর অনেক এগিয়েছে। জল, বর্জ্য প্রতিস্থাপনের অসমাপ্ত প্রকল্প, নিকাশির ক্ষেত্রে গড় সংস্কার নিয়েও স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। তবে, প্রতি পদে শাসককে
বিঁধছেন বিরোধীরা। তারা তুলে ধরেছে, দীর্ঘ সময় জনপ্রতিনিধিহীন পুরসভার কথা। তুলছে দুর্নীতির অভিযোগ। ইস্তেহারে দিয়েছেন দুর্নীতিমুক্ত, স্বচ্ছ পুরবোর্ড গঠনের ডাক। অভিযোগ ফুৎকারে উড়িয়ে তৃণমূল বাহিনী বুক ঠুকে বলছে, দুর্নীতি এতটুকু হয়নি। শাসক-বিরোধী এমন তরজা নিয়েই ভোটের ময়দানে সাবেক ফরাসডাঙা।
গোন্দলপাড়া জুটমিল বন্ধ। শ্রমিক দুর্দশায়। শ্রমিক মহল্লা, বস্তির নাগরিক পরিষেবা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। পূর্বপাড়ের স্ট্র্যান্ড, রবীন্দ্রসদন, পাতালবাড়ি, ফ্রেঞ্চ ইনস্টিটিউট, কলেজ, হাসপাতাল, কোর্টকাছারি, পুলিশ-প্রশাসনের ভবন মিলে একদিকে সু্ন্দর শহরের ছবি থাকলেও পরে পুরসভার অন্তর্ভুক্ত রেললাইনের পশ্চিমপাড়ের বিস্তীর্ণ এলাকা তুলনায় গ্রাম। শাসক দল সেখানে ধারাবাহিক উন্নতির কথা শোনালেও বিরোধীরা মানেন না।
ফটকগোড়ার বাসিন্দা, অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিপ্লব ভাদুড়ি বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষ হিসেবে পুরসভার কাছে জল-রাস্তা-আলো-নিকাশির মতো ন্যূনতম পরিষেবা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে চাহিদা থাকবে। ঐতিহ্য, ইতিহাসের
উপরে ভিত্তি করে নস্টালজিক
স্মৃতি সংরক্ষণে নজর দেওয়া হোক, এটাও প্রত্যাশা।’’
দ্রুত বদলাতে থাকা শহরে আগামীর দায়িত্ব পাবে কে? কাল উত্তর দেবেন শহরবাসী।