এখনও মঙ্গলাহাটে ধোঁয়া বার হতে দেখা গিয়েছে। —নিজস্ব চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশে মঙ্গলাহাট অগ্নিকাণ্ডের তদন্তভার হাতে নিয়েছে সিআইডি। শুক্রবার রাতভর ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছেন গোয়ান্দারা। অন্য দিকে, ঘটনাস্থলে গিয়ে ব্যবসায়ীদের ক্ষোভের মুখে পড়লেন রাজ্যের সমবায় মন্ত্রী অরূপ রায়। ক্ষতিপূরণের দাবি এবং আগের স্থানেই যাতে তাঁরা ব্যবসা করতে পারেন, এই দাবি নিয়ে বিক্ষোভ দেখান ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের দাবি, নতুন দোকান তৈরি করতে যেন প্রশাসনের সহায়তা করে। পাশাপাশি তাঁদের অভিযোগ, এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা একটা ‘চক্রান্ত’। পরিকল্পিত ভাবেই হাটে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। দোষীদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি করেছেন তাঁরা। অবস্থানে বসা ওই ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দেখা করতে বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ সেখানে যান আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি। তিনিও সরকারের কাছে ওই ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আর্জি জানান। ভাঙড়ের বিধায়কের কথায়, ‘‘চাই, আবার মূল স্রোতে ফিরে আসুন ব্যবসায়ীরা। তাঁদের যে ক্ষতি হয়েছে, তা শুধু তাঁরাই জানেন। সামনে পুজোর মরসুম। এত আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়া ব্যবসায়ীরা সরকারি সহযোগিতা ছাড়া ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন না।’’
মঙ্গলাহাটে আগুন লাগে বৃহস্পতিবার রাতে। তবে শনিবারও ঘটনাস্থল থেকে ধোঁয়া বার হতে দেখা গিয়েছে। এখনও সেখানে দমকলের দু’টি ইঞ্জিন কাজ করছে। এ নিয়ে দমকল আধিকারিক সৌম্য বসু জানান, কিছু জায়গায় ভিতরে আগুন রয়েছে। সেখান থেকেই ধোঁয়া বেরোচ্ছে। দমকলকর্মীরা কাজ করছেন। আর ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভ প্রসঙ্গে মন্ত্রী অরূপ বলেন, তিনি এ ব্যাপারে জেলাশাসকের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন।
মঙ্গলাহাটে বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর শুক্রবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন। পাশাপাশি হাওড়া সিটি পুলিশের সঙ্গে সিআইডি তদন্ত করবে বলে জানিয়েছেন তিনি। ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, জমির বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট নিয়ে যদি দেখা যায় যে জমি সরকারের, তা হলে সেখানে হাটের জন্য বিল্ডিং করে দেওয়া হবে। আর জমির পূর্বতন চুক্তির মেয়াদ শেষের পর যদি নতুন করে মালিকানার ক্ষেত্রে কোনও সঠিক তথ্য পাওয়া না যায়, সে ক্ষেত্রে সরকার জমি অধিগ্রহণ করতে পারে। কিন্তু যদি অন্য কারও মালিকানা থাকে, সে ক্ষেত্রে আবার ভাবনাচিন্তা করতে হবে। এর পর ব্যবসায়ীদের দোকান সংক্রান্ত সমস্ত নথি চেয়ে পাঠায় সিআইডি।
বৃহস্পতিবার গভীর আগুন ছড়ায় প্রায় পাঁচ হাজার বর্গফুট এলাকা জুড়ে। দমকল সূত্রে খবর, ১২টি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে এনে প্রায় সাত ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়। এর পরই উঠে এসেছে অন্তর্ঘাতের তত্ত্ব। সেই কথা শোনা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর গলাতেও। হাট সমিতির যুগ্ম সম্পাদক সাগর জয়সওয়ালের অভিযোগ, ‘‘পুলিশ-প্রশাসনকে বার বার জানানো হয়েছে, মঙ্গলাহাটে যে কোনও দিন বড় কিছু ঘটতে পারে। ২০০৪ সাল থেকে আমরা অভিযোগ জানিয়ে আসছি। কিন্তু লাভ হয়নি। ১৯৮৭ সালে এই হাটে আগুন লেগেছিল। আবারও সেই ঘটনা ঘটল। প্রায় আড়াই হাজার দোকান ভস্মীভূত হয়েছে।’’ মঙ্গলাহাট সংগ্রাম ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক দিলীপ দত্তের অভিযোগ, ‘‘চক্রান্ত করে এই হাটে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করার জন্যই ঘটানো হয়েছে এই অগ্নিকাণ্ড। তবে আমরা লড়াই চালিয়ে যাব।’’ দিলীপের দাবি, এই অগ্নিকাণ্ডের নেপথ্যে রয়েছেন শান্তিরঞ্জন দে নামে এক ব্যবসায়ী। তাঁর কথায়, ‘‘শান্তিরঞ্জন দে নিজেকে হাটের মালিক বলে দাবি করেন। উনি চক্রান্ত করে আগুন লাগিয়েছেন।’’ শান্তিরঞ্জনকে গ্রেফতারের দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা। শান্তিরঞ্জন অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর পাল্টা বক্তব্য, ‘‘হাট নিয়ে প্রচুর মামলা-মোকদ্দমা চলছে। কিন্তু কী ভাবে আগুন লাগল, তা আমি জানি না।’’