এই স্টলই তুলে নেওয়া হয়।
তাদের ব্যানারে ছিল শহরের কিছু ‘অপ্রাপ্তি’র কথা। সেই ‘অপরাধে’ চন্দননগর বইমেলা থেকে স্টল গোটাতে হল ‘চন্দননগর হেরিটেজ’ নামে এখানকার একটি নামী সংস্থাকে। ঘটনায় বিচলিত শহরের বিদ্বজ্জনদের একাংশ। তাঁদের ক্ষোভ, বইমেলায় এটি ‘ফতোয়া’র শামিল, যা মত প্রকাশের স্বাধীনতার পরিপন্থী। এ নিয়ে বইমেলা কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত প্রতিবাদ জানিয়েছেন নাগরিকরা। ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে একটি মানবাধিকার সংগঠনও।
বইমেলা কমিটির মুখ্য পরিচালক সৌরভ চট্টোপাধ্যায়ের যুক্তি, ‘‘ব্যানারের লেখায় রাজনৈতিক বিতর্কের সম্ভাবনা ছিল। তাই, ব্যানার সরাতে বলেছিলাম। স্টল তুলে নিতে বলিনি। ওঁরাই বলেন, ব্যানার সরাতে হলে স্টল তুলে নেবেন। আমাদের কিছু করার ছিল না।’’
কী রয়েছে ওই ব্যানারে?
‘চন্দননগর হেরিটেজ’-এর দাবি, একসময়ের এই ফরাসি উপনিবেশের ক্লক টাওয়ার ধুঁকছে। ফরাসি জাদুঘরের পাঠাগারে বই আছে। অথচ, পড়ার উপায় নেই। শহরের হেরিটেজ সংরক্ষণে কমিটি নেই। রাসবিহারী বসুর জমিতে ওয়ার্ড কমিটির অফিস হয়েছে। কানাইলাল দত্তের বাড়ি সংস্কার হয়নি। এমনই কিছু বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছিল বইমেলায় তাদের স্টলের ব্যানারে।
এহেন ব্যানারে আপত্তি কিসে, বোধগম্য হচ্ছে না শহরের বহু বিদ্বজ্জনের। অনেকের বক্তব্য, আপত্তি থাকলে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে জানানো যেত। এ ক্ষেত্রে তা করা হয়নি। তাঁরা মনে করছেন, ওই সব সমস্যার সমাধান হলে এ শহর পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে।
গত ২৩ ডিসেম্বর বইমেলা শুরু হয় চন্দননগরের হাসপাতাল মাঠে। শেষ হল রবিবার, পয়লা জানুয়ারি। চন্দননগর হেরিটেজের কর্ণধার কল্যাণ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এ শহরের হেরিটেজ সংক্রান্ত কিছু সমস্যা সমাধানে মানুষ এবং কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যই বড় মাপের ওই ব্যানার লাগানো হয়েছিল। উদ্বোধনের আগের রাতে তথাকথিত জনপ্রতিনিধিরা এসে ব্যাপারটা দেখেছেন, ছবি তুলেছেন, গুঞ্জন করেছেন। পরের সকালে বইমেলার তরফে স্পষ্ট বলা হয়, ওই ব্যানার ওখানে রাখা যাবে না। তখন স্টল তুলে নেওয়া ছাড়া আমাদের কিছু করার ছিল না।’’ কল্যাণবাবু নিজেও বইমেলা কমিটির সঙ্গে যুক্ত।
গোটা বিষয়টি নিয়ে শহরে শোরগোল পড়েছে। শহরের বাসিন্দা, মানবাধিকার কর্মী শুভময় ঘোষাল বলেন, ‘‘ব্যানার সরিয়ে নিতে বলার বিষয়টি হয়েছে সম্পূর্ণ মৌখিক ভাবে। হুকুমের মতো মনে হয়েছে। যেটা হয়েছে, ভাল লাগেনি। আমার কাছে অন্তত এটা বিপদের বলে মনে হয়েছে।’’ মানবাধিকার কর্মী বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘কল্যাণবাবু ব্যানারে মিথ্যা কিছু লেখেননি। বই মত প্রকাশের একটা মাধ্যম। বইয়ের মেলায় বইয়ের মর্মার্থকে অপমান করা হয়েছে বলে মনে করি। এ জন্য বইমেলায় যাইনি।’’
প্রাবন্ধিক দেবাশিস মুখোপাধ্যায়ও মনে করেন, ওই ভাবে ব্যানার সরিয়ে নিতে বলা মত প্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ। তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘ব্যানারে এমন কিছু আবেদন ছিল, যার সমাধান হলে শহরের সম্মান বাড়ে। ওখানে তো রাষ্ট্রদ্রোহিতা বা সংবিধান বহির্ভূত কোনও কথা লেখা হয়নি। সেই ব্যানার সরিয়ে নিতে বলা চন্দননগরের সংস্কৃতির পরিপন্থী বলে মনেকরি। ভবিষ্যতে এমন কাজ থেকেওঁরা যাতে বিরত থাকেন, সে জন্য প্রতিবাদ দরকার।’’
চন্দননগরের ডেপুটি মেয়র তথা শহর তৃণমূল সভাপতি মুন্না আগরওয়াল মেলার বিশেষ পৃষ্ঠপোষকও। তিনি বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই। বইমেলা যাঁরা করছেন, তাঁরাই বলতে পারবেন।’’
তথ্য সহায়তা: তাপস ঘোষ।