তেহট্ট বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয়। নিজস্ব চিত্র
ক্লাসরুম খুলতেই শিক্ষকের চোখে পড়ল, বেঞ্চে বোমা। মেঝেতে ছড়িয়ে বারুদ। ততক্ষণে ক্লাসে ঢুকেছে খুদে পড়ুয়ারাও। বিপদ বুঝে পত্রপাঠ তাদের বের করে দেন শিক্ষক। বোমা দু’টি উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার উলুবেড়িয়া ২ ব্লকের তেহট্ট বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঘটনা। বোমা দু’টি ফাটেনি। তবে, ঘটনায় রীতিমতো আতঙ্ক ছড়িয়েছে পড়ুয়া, শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং অভিভাবকদের মধ্যে। উদ্বিগ্ন স্থানীয়েরাও। ভাঙা জানলা-দরজা বড়সড় প্রশ্ন তুলছে স্কুলের পরিকাঠামো মেরামতে সরকারি উদ্যোগ নিয়ে।
শিক্ষকের চোখে পড়ার আগে
যদি ছাত্রছাত্রীরা বোমাকে বল ভেবে খেলতে যেত, তা হলে কী ঘটত,
ভেবেই শিউরে উঠছেন সকলে। অনেকেরই অনুমান, ভাঙা জানলা দিয়ে ক্লাসরুমে ঢুকে বোমা তৈরি করছিল এক বা একাধিক দুষ্কৃতী। বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কেউ অবশ্য ধরা পড়েনি। হাওড়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান কৃষ্ণকুমার ঘোষ বলেন, ‘‘পুরো ঘটনা পুলিশকে জানানো হয়েছে।’’ হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিশ সুপার সুবিমল পাল বলেন, ‘‘তদন্ত করা হচ্ছে।’’ পরিকাঠামোগত খামতি যে অনেক স্কুলেই রয়েছে, প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের আধিকারিকেরা মানছেন।
বিদ্যালয় সূত্রের দাবি, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ দোতলায় দ্বিতীয় শ্রেণির ওই শ্রেণিকক্ষ খোলেন এক শিক্ষক। ঢুকেই বোমা-বারুদ দেখে তাঁর চোখ কপালে ওঠে। তড়িঘড়ি তিনি পড়ুয়াদের নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে বোমা দু’টি নীচে নামিয়ে আনেন। ততক্ষণে অন্য শিক্ষকেরা পৌঁছেছেন। প্রধান শিক্ষক রিয়াজুল হক জলভর্তি বালতিতে বোমা দু’টি রাখেন। খবর পেয়ে উলুবেড়িয়া থানার পুলিশ এসে বোমা দু’টি সরিয়ে নিয়ে যায়। খবর চাউর হতে অভিভাবকেরা হাজির হন। কোথা থেকে বোমা এল, শুরু হয় গুঞ্জন। রাতে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন প্রধান শিক্ষক।
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানান, গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে স্কুলে ভোটকেন্দ্র হয়েছিল। সেই সময় গোলমালে স্কুলের পিছনের দরজা এবং কয়েকটি ক্লাসরুমের জানালার গ্রিল ভাঙা হয়। মেরামত হয়নি। প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘ওই ঘরটির জানলার পাল্লা নেই। জানালার গ্রিল বেশ ফাঁকা, অনায়াতেই ঢোকা-বেরোনো সম্ভব। আমাদের ধারণা, পিছনের দরজা দিয়ে স্কুলে ঢুকে জানলা গলে ক্লাসরুমে গিয়ে দুষ্কৃতী বোমা বাঁধছিল।’’
শিক্ষকদের বক্তব্য, খালের পাশে স্কুল। পাছে সাপ ঢুকে থাকে, সে জন্য রোজই শিক্ষকেরা ক্লাসরুম ভাল করে দেখে তবেই পড়ুয়াদের ঢোকান। যদি পড়ুয়ারা নিজের মতো ক্লাসরুমে ঢুকত এবং বোমাকে বল ভেবে খেলত, বিপদ ঘটত। প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘জানলার পাল্লা না থাকায় বর্ষায় ছাত্রছাত্রীদের সমস্যা হয়েছে, শীতেও হবে। জানলা-কপাট সারানোর জন্য বহু বার দফতরে জানানো হয়েছে। কিছুই হয়নি। এখন ভয় লাগছে এতগুলো শিশুকে নিয়ে কী ভাবে স্কুল চালাব!’’ আমিরুল কাজী নামে এক অভিভাবক বলেন, ‘‘প্রায় ৭৫ বছরের স্কুল। এমন ঘটনা প্রথম। এরপরে ভয় লাগছে ছেলেকে
স্কুলে পাঠাতে।’’
জানলা-দরজার মেরামতের প্রসঙ্গে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘বেশ কিছু স্কুলে পরিকাঠামোগত সমস্যা আছে। সেই সমস্ত স্কুল পরিদর্শনে আমরা ইঞ্জিনিয়ার পাঠাচ্ছি। শীঘ্রই মেরামতের কাজ শুরু হবে।’’