শুভেন্দুর অভিযোগ, মমতার ‘নাটকের’ জন্য টাটাকে সিঙ্গুর থেকে ন্যানো কারখানা গুটিয়ে সরে যেতে হয় গুজরাতের সানন্দে।পাল্টা দিয়েছেন কুণাল ঘোষ। —ফাইল চিত্র।
সিঙ্গুরের স্বপ্ন ধূলিসাৎ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার হুগলির সিঙ্গুরের সভা থেকে এমনই মন্তব্য করলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর অভিযোগ, মমতার ‘নাটকের’ জন্য টাটা সংস্থাকে সিঙ্গুর থেকে ন্যানো কারখানা গুটিয়ে সরে যেতে হয় গুজরাতের সানন্দে। বিজেপি বাংলায় ক্ষমতায় এলে আবার টাটাকে ফিরিয়ে আনবেন তাঁরা। শুভেন্দুর এই আক্রমণের পর পাল্টা কটাক্ষ করেছে তৃণমূল। দলের মুখপাত্র কুণালের বক্তব্য, সিঙ্গুর আন্দোলনের সময় তো মমতার সঙ্গেই ছিলেন শুভেন্দু। তখন কেন কিছু বলেননি।
সিঙ্গুরের সভায় শুভেন্দু বলেন, ‘‘কৃষি জমি ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্দেশে মমতা সিঙ্গুর আন্দোলন করেননি। তিনি সবথেকে বড় সর্বনাশ করে গিয়েছেন টাটার কারখানা ধ্বংস করে।’’ তবে শুভেন্দু যে সময়ের কথা বলছেন, তখন তিনি নিজেও তৃণমূলে ছিলেন। এ নিয়ে বিজেপি বিধায়কের যুক্তি, তিনি শিল্পের বিরোধী ছিলেন না। সিপিএমের জমি নীতির বিরোধিতা করেছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘কারণ, ১৮৯৪ সালের ব্রিটিশদের জমি আইন বস্তাপচা ছিল। আমরা কিন্তু শিল্পের পক্ষে।’’
কয়েক বছর আগে তৎকালীন বিজেপি নেতা মুকুল রায় সিঙ্গুর আন্দোলন নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন তুলেছিলেন। বলেছিলেন সিঙ্গুর আন্দোলন করা ঠিক হয়নি। এ বার সিঙ্গুর থেকে টাটাদের চলে যাওয়ার জন্য সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দায়ী করলেন মমতার প্রাক্তন রাজনৈতিক সতীর্থ শুভেন্দু। তিনি বলেন, ‘‘১৬ দিন এখানে বসে ‘ড্রামা’ (নাটক) করে টাটাকে তাড়িয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে বিজেপি যদি রাজ্যে ক্ষমতায় আসে তা হলে টাটাকে ফুলের মালা পরিয়ে রাজ্যে আনা হবে।’’
রাজ্যে একাধিক শিল্প বন্ধ হয়ে যাওয়া নিয়ে মমতার সরকারের দিকে আঙুল তোলেন শুভেন্দু। একই সঙ্গে নিয়োগ দুর্নীতিতে গ্রেপ্তার হওয়া তৃণমূলের যুবনেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়, কুন্তল ঘোষের নাম তুলে শাসকদলের প্রতি ব্যঙ্গাত্মক আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, ‘‘এখন ১০০ দিনের প্রকল্পে দুর্নীতি ধরা পড়েছে। জলজীবন প্রকল্পকে নিজেদের নামে করতে চায় তৃণমূল সরকার। এখন তৃণমূলের দুয়ারে সিবিআই চলছে।’’ তিনি স্লোগান তোলেন, ‘‘চোর ধরো জেলে ভরো।’’
প্রসঙ্গত, কিছু দিন আগেই সিঙ্গুরে সভা করেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা। শুভেন্দু জানান, তাঁরই পাল্টা সভা করে জবাব দিতে এসেছেন তিনি। এ নিয়ে শুভেন্দুকে কটাক্ষ করেছেন তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘যদি কৃষিজমি রক্ষার আন্দোলন শিল্প তাড়ানো হয়, তা হলে নন্দীগ্রাম আন্দোলনের কৃতিত্ব কী ভাবে শুভেন্দু দাবি করেন?’’ কুণাল আরও বলেন, ‘‘২০০৯ সালে তো শুভেন্দু এবং তাঁর বাবা শিশির অধিকারী তৃণমূলের সাংসদ ছিলেন। যদি ভুল নীতির উপর দাঁড়িয়ে তৃণমূল ক্ষমতায় আসে তখন শুভেন্দু কেন তৃণমূলের সাংসদ ছিলেন? তখন কেন আপত্তি করেননি? এত বছর পর কেন বলছেন?’’