প্রসেনজিৎ মাঝি। ফাইল ছবি।
বটানিক্যাল গার্ডেন থেকে গঙ্গায় ঝাঁপ দিয়েছিলেন তিন তরুণ। তাঁদের মধ্যে দু’জন উঠে আসতে পারলেও তলিয়ে গেলেন তৃতীয় জন। ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার দুপুর তিনটে নাগাদ। রাত পর্যন্ত তল্লাশি চালিয়েও ওই তরুণের সন্ধান মেলেনি। অভিযোগ, তিন বন্ধু মিলে বটানিক্যাল গার্ডেনে বসে নেশা করার সময়ে উদ্যানের নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁদের তাড়া করেন। সেই সময়ে ভয় পেয়ে দৌড়ে পালাতে গিয়ে তাঁরা ওই কাণ্ড ঘটান। যদিও রক্ষীদের তাড়া খেয়েই তিন বন্ধু গঙ্গায় ঝাঁপ দেন, এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন উদ্যান কর্তৃপক্ষ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বটানিক্যাল গার্ডেনের পূর্ব দিকের যে অংশে ভাঙন ধরেছে, সেখানে জঙ্গলের মধ্যে বসে এ দিন গল্প করছিলেন প্রসেনজিৎ মাঝি, সোনু মাঝি এবং আকাশ মাহাতো নামে ওই তিন তরুণ। প্রত্যেকের বয়স ১৮ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। সকলেই স্থানীয় বাসিন্দা। অভিযোগ, নেশাও করছিলেন তাঁরা। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিদিনই তিন বন্ধু যেতেন বটানিক্যাল গার্ডেনে। পরিবারের লোকেদের অভিযোগ, এ দিন প্রসেনজিৎ, আকাশ ও সোনু যখন ওই উদ্যানের এক দিকে এক নম্বর জেটিঘাটে বসে ছিলেন, সেই সময়ে তাঁদের তাড়া করেন নিরাপত্তারক্ষীরা। তিন জন ভয় পেয়ে গঙ্গায় ঝাঁপ দেন। কিছু ক্ষণ পরে আকাশ ও সোনু উঠে এলেও প্রসেনজিৎ উঠতে পারেননি। বেশ কিছু ক্ষণ খোঁজাখুঁজির পরেও বন্ধুর সন্ধান না পেয়ে আকাশ ও সোনু পাড়ায় ফিরে বিষয়টি জানান। খবর যায় প্রসেনজিতের বাড়িতেও। ছুটে আসেন পাড়ার লোকজন। খবর পেয়ে বটানিক্যাল গার্ডেনে পৌঁছন হাওড়া সিটি পুলিশের পদস্থ কর্তারা। লঞ্চ নিয়ে শুরু হয় প্রসেনজিতেরখোঁজে তল্লাশি। কিন্তু সন্ধ্যা পর্যন্ত তল্লাশি চালিয়েও তাঁর সন্ধান মেলেনি। তবে ওই জেটিঘাট থেকে প্রসেনজিতের চটিজোড়া উদ্ধার করেছে পুলিশ।
যদিও নিরাপত্তারক্ষীদের তাড়াতেই গঙ্গায় ঝাঁপ দিয়েছেন তিন তরুণ, এই অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন বটানিক্যাল গার্ডেনের যুগ্ম-অধিকর্তা দেবেন্দ্র সিংহ। তিনি বলেন, ‘‘ঘটনাটি উদ্যানের মধ্যে ঘটেনি। ঘটেছে আমাদের এলাকার বাইরে। আমাদের রক্ষীরা বাইরে গিয়ে কাউকে তাড়া করেন না। তবে মাঝেমধ্যে উদ্যানে অসামাজিক কাজ চলায় তাঁদের ব্যবস্থা নিতে হয়। এ দিনের ঘটনার সঙ্গে তাঁরা কোনও ভাবেই জড়িত নন।’’ হাওড়া সিটি পুলিশের এসিপি মৃত্যুঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা লঞ্চ নিয়ে তল্লাশি শুরু করি। ডুবুরিকেও খবর পাঠানো হয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে আবার তল্লাশি শুরু হবে।’’
এ দিকে, ছেলের গঙ্গায় তলিয়ে যাওয়ার খবর শুনে কথা বলার অবস্থায় নেই প্রসেনজিতের মা চম্পা মাঝি। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘‘ওরা তিন বন্ধু রোজই ওখানেআড্ডা মারতে যেত। অন্যায়ভাবে ওদের তাড়া করার কী প্রয়োজন ছিল? এ দিন বিকেলে দুই বন্ধু এসে খবর দেয়, ছেলে গঙ্গায় তলিয়ে গিয়েছে।’’ পুলিশ জানিয়েছে, আকাশ ও সোনুকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার পরেই পুরো বিষয়টি স্পষ্ট হবে।