মামলার টাকা জোগাড়ে রক্ত বিক্রি করতে তারকেশ্বর গ্রামীণ হাসপাতালে হাজির হলেন হুগলির পুরশুড়া থানা এলাকার ভাঙামোরার বাসিন্দা মধুমিতা পাল।
স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতনের মামলা করে সুবিচার মেলেনি। এ বার মামলার টাকা জোগাড়ে রক্ত বিক্রি করতে তারকেশ্বর গ্রামীণ হাসপাতালে হাজির হলেন হুগলির পুরশুড়া থানা এলাকার ভাঙামোরার বাসিন্দা মধুমিতা পাল। এই ঘটনা জানার পরে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে হাসপাতালে। যদিও হাসপাতালকর্মীরা তাঁকে বুঝিয়ে বাড়ি ফিরিয়ে দেন।
মধুমিতার বাপেরবাড়ি পাণ্ডুয়া থানা এলাকায়। বছর দশেক আগে ভাঙামোরা গ্রামের বাসিন্দা দিলীপ পালের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। তাঁদের দুই সন্তানও রয়েছে। মধুমিতার অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই তাঁর উপর অত্যাচার শুরু হয়। বাপেরবাড়ি থেকে টাকা নিয়ে আসার জন্য দিনের পর দিন তাঁর উপর চাপ দেওয়া হয়েছে। তাঁকে মারধর করা হয়েছে। অভিযোগ, চলত মানসিক নির্যাতনও।
শেষমেশ বাধ্য হয়ে গত নভেম্বর মাসে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে পুরশুড়া থানায় অভিযোগ জানান তিনি। সোমবার মধুমিতা বলেন, ‘‘পুরশুড়া থানা কোনও পদক্ষেপ করেনি। মামলা পাণ্ডুয়া থানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখান থেকেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমায় দিনের পর দিন ঘোরানো হয়েছে।’’
পরে থানার এক মুহুরির পরামর্শে চুঁচুড়া আদালতে মামলা দায়ের করেন মধুমিতা। ওই মামলার খরচ চালাতেই সোমবার হাসপাতালে রক্ত দিতে চলে এসেছিলেন তিনি। তিনি বলেন, ‘‘ছেলেমেয়েদেরও দেখে না স্বামী। ওরা আমার বাপেরবাড়িতে রয়েছে। আমি একটা ভাড়া বাড়িতে থাকি। কিন্তু এ ভাবে সংসার চালাতে পারছি না। কী করব বুঝতে না পেরে এখানে রক্ত দিতে চলে এসেছি। এক কাপড়ে কদ্দিন থাকা যায়! আমার অনেক জিনিস, ডকুমেন্টস সব শ্বশুরবাড়িতে রয়েছে। ওঁরা ওগুলো আটকে রেখে দিয়েছে।’’
কিন্তু সরকারি হাসপাতালে যে এ ভাবে রক্ত দেওয়া যায় না, তা জানতেন না মধুমিতা। হাসপাতালের কিছু কর্মী ও আশপাশে থাকা অ্যাম্বুল্যান্সচালকেরাই তাঁকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে রক্ত দিতে বারণ করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি না জেনেই চলে এসেছি। এ বার কী করব বুঝতে পারছি না। সবাই শুধু টাকা চায়। কোত্থেকে এত টাকা পাব আমি জানি না।’’ তবে মধুমিতা জানান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁর সঙ্গে কোনও খারাপ ব্যবহার করেননি।
অ্যাম্বুল্যান্সচালক লাল্টু রায় বলেন, ‘‘আমরা কয়েক জন ওঁকে বোঝালাম যে, এ রকম ভাবে সরকারি হাসপাতালে রক্ত দেওয়া যায় না।’’ তারকেশ্বরের ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক তাপসকুমার দাস বলেন, ‘‘তারকেশ্বর হাসপাতালে তো ব্লাড ব্যাঙ্ক নেই। তাই কেউ রক্ত দিতে এলেও আমরা নিতে পারব না। কারও রক্তের প্রয়োজন হলে বাইরে থেকে রক্ত নিয়ে আসা হয়। আর আমার কাছে কেউ আসেননি।’’
পাণ্ডয়া থানার পুলিশ জানিয়েছে, আদালতে মামলা করেছেন ওই মহিলা। বধূ নির্যাতনের মামলা দায়ের হয়েছে। অভিযুক্তদের নোটিসও দেওয়া হয়েছে। মহিলার সব জিনিসপত্র উদ্ধার করে দেওয়া হবে।