প্রতীকী ছবি।
দিনকয়েক আগেই এলাকার একটি গুদাম থেকে পাওয়া গিয়েছিল এক যুবকের ঝুলন্ত দেহ। এ বার সেই এলাকায় রাস্তার উপরেই পিটিয়ে খুন করা হল এক যুবককে। শুক্রবার গভীর রাতে হাওড়ার রামকৃষ্ণপুরে গঙ্গার ঘাট সংলগ্ন এলাকায় এই ঘটনার পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। খুনের অভিযোগে এক জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তার নাম রাজু রাও। নিহত যুবকের নাম মুসলি রাও (৩৬)।
পুলিশ জানিয়েছে, গঙ্গার ঘাটের কাছেই ফুটপাতে থাকতেন মুসলি। শুক্রবার রাতে খাওয়াদাওয়ার পরে মুসলির কাছ থেকে বিড়ি চেয়েছিল রাজু। মুসলি বিড়ি দিতে অস্বীকার করেন। তদন্তকারীদের দাবি, বিড়ি না পেয়ে সেই রাগে রাজু বাঁশ দিয়ে মাথায় মেরে মুসলিকে খুন করে। যদিও এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, কলকাতা বন্দরের গুদামের চোরাই লোহার ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে দু’জনের পুরনো শত্রুতা ছিল। এই খুনের ঘটনার পিছনে সেই কারণও থাকতে পারে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, শুক্রবার রাতে রামকৃষ্ণপুর ঘাটের কাছে ফুটপাতে বসে মুসলি, রাজু ও রঞ্জিত সিংহ নামে আর এক যুবক রাতের খাবার খান। খাওয়ার পরে রাজু মুসলির কাছ থেকে বিড়ি চায়। মুসলি তা দিতে অস্বীকার করেন। তখনই মুসলির সঙ্গে রাজুর বচসা বেধে যায়। যা গড়ায় হাতাহাতিতে। রঞ্জিত নামের অন্য যুবক দু’জনকে আটকানোর চেষ্টা করতে গিয়ে শরীরে চোট পান। এরই মধ্যে ঘাটের কাছে পড়ে থাকা বাঁশ তুলে নেয় রাজু। সজোরে আঘাত করে মুসলির মাথায়। রক্তাক্ত অবস্থায় মুসলি ফুটপাতে লুটিয়ে পড়েন। ওই অবস্থাতেও তিনি রাজুকে বাঁশ-ইট দিয়ে পাল্টা আঘাত করেন। এর পরে মুসলিকে সংজ্ঞা হারাতে দেখে এলাকার লোকজন পুলিশের টহলদারি ভ্যানে খবর দেন। পুলিশ এসে মুসলি ও রঞ্জিতকে উদ্ধার করে হাওড়া জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে মুসলিকে মৃত ঘোষণা করা হয়। রঞ্জিত এখন সেখানেই চিকিৎসাধীন। রামকৃষ্ণপুর ঘাট এলাকার অন্য ফুটপাতবাসীদের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ রাজুকে সেই রাতেই গ্রেফতার করে। এই ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শীকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, রাজু ও মুসলি, দু’জনেরই বাস ছিল রামকৃষ্ণপুর ঘাট সংলগ্ন ফুটপাতে। আশপাশের গুদামের লোহার জিনিস চুরি করে ও ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের বোতল বিক্রি করেই পেট চলত দু’জনের। মুসলি বা রাজুর পরিবারের কাউকে পাননি তদন্তকারীরা। শনিবার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, তখনও রাস্তায় রক্তের দাগ লেগে। এলাকায় ছিল চাপা উত্তেজনা। মণিলাল সিংহ নামে এক স্থানীয় যুবকের অভিযোগ, এলাকার বিভিন্ন গুদামে প্রতি রাতেই মদ, জুয়ার আসর বসে। নানা অসামাজিক কাজকর্মও চলে। অভিযোগ, কয়েক দিন আগেই জুয়া সংক্রান্ত অশান্তির জেরে এক ব্যক্তির ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় পাশের একটি গুদাম থেকে। একই অভিযোগ করেছেন ওই এলাকার প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর শৈলেশ রাই। তিনি বলেন, ‘‘পরিত্যক্ত গুদামগুলি দুষ্কৃতীদের আড্ডা হয়ে উঠেছে। জুয়ার ঠেক বসছে, নেশার আসরও বসছে। অসামাজিক কাজকর্ম চলছে। এ সব অবিলন্বে বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।’’ হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘পুলিশের টহলদারি ভ্যান যাতে ওই এলাকায় রাতে নিয়মিত ঘোরে, সেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও গুদামগুলির নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা করা হবে।’’