Land Scam

বন্ধ মিলের জমি বিক্রি, অভিযুক্ত পুর প্রতিনিধি

নথি জাল করে জমি বিক্রি, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, একাধিক ব্যক্তি মিলে অপরাধ করা প্রভৃতি ধারায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি মামলা রুজু করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

Advertisement

প্রকাশ পাল

শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৮:৫৮
Share:

নথি জাল করে জমি বিক্রি করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। প্রতীকী ছবি।

নথি জাল করে দুষ্টচক্র জমি কেনাবেচা করছে, হুগলি জেলায় এমন অভিযোগ নতুন নয়। এ বার শ্রীরামপুর পুরসভার ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে একটি বন্ধ মিলের জমি বেআইনি ভাবে বেচে দেওয়ার অভিযোগ উঠল স্থানীয় নির্দল পুর প্রতিনিধি (কাউন্সিলর), তাঁর স্ত্রী তথা প্রাক্তন পুর প্রতিনিধি-সহ কয়েক জনের বিরুদ্ধে।

Advertisement

এক ব্যক্তির অভিযোগের প্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশে তদন্তে নেমেছে শ্রীরামপুর থানার পুলিশ। নথি জাল করে জমি বিক্রি, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, একাধিক ব্যক্তি মিলে অপরাধ করা প্রভৃতি ধারায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি মামলা রুজু করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘তদন্ত চলছে। সংশ্লিষ্ট সব জায়গায় যোগাযোগ করা হচ্ছে। নথিপত্র সংগ্রহ করে খুঁটিয়ে পরীক্ষা করা হবে। সেই অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।’’ মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি বলে পুলিশ জানিয়েছে।

Advertisement

অভিযোগ ঘিরে চর্চা শুরু হয়েছে এলাকায়। শোরগোল স্থানীয় রাজনীতিতেও। অভিযুক্ত নির্দল কাউন্সিলর আকবর আলি বা তাঁর স্ত্রী নাসিমা পারভিনের প্রতিক্রিয়া মেলেনি। আকবরের ফোন বন্ধ ছিল। নাসিমার সঙ্গেও যোগাযোগ করা যায়নি। এলাকায় খবর, কয়েক দিন তাঁদের বাড়িতে দেখা যাচ্ছে না। পুরসভার লোকেরা জানান, সোমবার আকবর পুরসভায় যাননি। পুরসভার এক কর্তা বলেন, ‘‘দরকারে সোমবার আকবরকে ফোন করেছিলাম। পাইনি। মোবাইল বন্ধ ছিল।’’ বন্ধ মিলের কারও সঙ্গেও যোগাযোগ করা যায়নি।

আফতাব আলম নামে এক ব্যক্তি সম্প্রতি শ্রীরামপুর আদালতে জানান, শহরের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের একটি জায়গায় কমবেশি ৪০ কাঠা জমি বেআইনি ভাবে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। ওই জমি আদতে ১৯৭২ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি কটন মিলের। জমিটি খালি পড়েছিল। এলাকার ছেলেমেয়েরা সেখানে ফুটবল-ক্রিকেট খেলতেন। জায়গাটি ‘লাল মাঠ’ নামে পরিচিত ছিল। আফতাবের দাবি, ওই জমি জালিয়াতির ঘটনা ঘটে ২০১৬ সালে। তখন নাসিমা ছিলেন এলাকার তৃণমূল পুর প্রতিনিধি।

অভিযোগ, কামারহাটির এক বাসিন্দা জমির মালিক সেজে রিষড়ার আর কে রোডের দু’জনকে ওই জমির ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’ (মোক্তারনামা) দেন। তাঁদের কাজে লাগিয়ে আকবর-নাসিমাই ওই বেআইনি কাজ করান। পরে জমি প্লট করে বেচে দেওয়া হয়। তার একাংশে বাড়ি হয়েছে। মিউটেশনও (নামপত্তন) করে দিয়েছে পুরসভা। কিছু বাড়ি তৈরির কাজ চলছে।

আফতাবের অভিযোগ, ‘‘বেআইনি ভাবে জমি বেচে কয়েক কোটি টাকা জালিয়াতি করা হয়েছে।’’ আদালতে এর স্বপক্ষে প্রমাণও দাখিল করা হয় বলে তিনি জানান। আফতাব বলেন, ‘‘কয়েক মাস আগে পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছিলাম। পুলিশ কিছু করেনি। তখন আদালতে যাই। ওই জমিতে মিউটেশন হল কী করে, সেটাও প্রশ্ন। পুর-প্রতিনিধির হাত না থাকলে হত?’’

পুরপ্রধান গিরিধারী সাহা বলেন, ‘‘আমাদের কাছে কোনও অভিযোগ এলে দেখব। কোনও পদক্ষেপ করতে হলে করব।’’ অভিযুক্ত কাউন্সিলর আকবর তৃণমূলে ছিলেন। গত পুরভোটে তৃণমূলের টিকিট না পেয়ে নির্দলে দাঁড়ান। তবে, নির্দল পুর প্রতিনিধি হলেও তৃণমূলের সঙ্গে সখ্য অটুট বলে রাজনৈতিক মহলে খবর।

তৃণমূলের শ্রীরামপুর শহর সভাপতি তথা পুর-পারিষদ সন্তোষ সিংহ বলেন, ‘‘পুর প্রতিনিধি হিসাবে আকবরের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক রয়েছে। তবে, উনি তৃণমূলের কেউ নন। নাসিমার বিরুদ্ধে অভিযোগের ক্ষেত্রে দল নজর রাখছে। আর, মিউটেশনের ক্ষেত্রে কোনও অভিযোগ প্রমাণিত হলে পুরসভাগত ভাবে নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement