Businessman

‘ছেড়ে দে কারখানা’, মন্ত্রীর অফিসে হুমকির অভিযোগ ব্যবসায়ীকে! আতঙ্কে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি

মানসের অভিযোগ, তাঁদের শরিকি বিবাদে শাসকদলের কিছু কর্মী যুক্ত হয়ে ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে। আর তার সহযোগিতায় রয়েছে স্থানীয় থানার পুলিশ।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শিবপুর শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০২৩ ২৩:১৮
Share:

আতঙ্কিত ব্যবসায়ী এবং তার স্ত্রী মুখ্যমন্ত্রী এবং মুখ্যসচিবকে চিঠি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। —নিজস্ব চিত্র।

রাজ্যের মন্ত্রীর অফিসে ব্যবসায়ীকে ডেকে হুমকি মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠদের। পুলিশের উপস্থিতিতেই তাঁর কারখানা ‘দখল’ করে নেওয়ার হুমকি দেওয়ার অভিযোগে মুখ্যসচিব ও মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিলেন ওই ব্যবসায়ী। হাওড়ার শিবপুর বিধানসভা কেন্দ্রের ঘটনা।

Advertisement

মধ্য হাওড়ার কাসুন্দিয়া এলাকার বাসিন্দা মানস রায় ও তাঁর স্ত্রী মৌমিতা রায়। শিবপুর বিধানসভা কেন্দ্রের কামারডাঙা এলাকায় ওই ব্যবসায়ী পরিবারের একটি পারিবারিক জমি রয়েছে। সেখানে বহু বছর ধরে তাঁদের লোহার ফ্যাব্রিকেশনের ব্যবসা চলে বলে দাবি মানসের। তবে জমিটি নিয়ে শরিকি বিবাদ রয়েছে। মানসের দাবি, গত ৩ মে হঠাৎই তাঁকে শিবপুরের বিধায়ক তথা রাজ্যের ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মনোজ তিওয়ারির কদমতলায় অফিসে ডেকে পাঠানো হয়। সেখানে মন্ত্রীর অনুগামীরা এবং তৃণমূলের কয়েক জন কর্মী পীযূষ মিশ্র নামে এক জনের সঙ্গে তাঁর পরিচয় করিয়ে দেন। ব্যবসায়ীর কথা মতো, ওই সময় সেখানে ছিলেন দাশনগর থানার এক পুলিশ আফিসার। অভিযোগ, সেখানে তাঁকে রীতিমতো হুমকি দেওয়া হয়। বলা হয় তাদের কারখানা ছেড়ে দিতে হবে। মানসের কথায়, ‘‘ওঁদের কাছে কারখানা কম দামে বিক্রি করে দিতে চাপ দেন পীযূষ মিশ্র এবং বিপ্লব দে নামে মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠরা। এমনকি, ‘যা দিচ্ছি তা নিয়ে কারখানা ছেড়ে দে’ বলে হুমকি দেওয়া হয়।’’

মানসের আরও দাবি, ওই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় আবার এক বার তাঁকে ডেকে পাঠানো হয়। এর পর গত ১০ মে তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীকে ইমেল করে করে অভিযোগ জানান।

Advertisement

এর পর সোমবার হাওড়া ডেপুটি কমিশনার ব্যবসায়ীকে ডেকে ঘটনার তদন্ত শুরু করেন। কিন্তু মঙ্গলবার মানসকে আবার দাশনগর থানায় ডেকে পাঠানো হয়। অভিযোগ, সেখানে পুলিশ তাঁর মোবাইল বন্ধ করতে বাধ্য করেন। এর পর বেশ কয়েক ঘণ্টা বসিয়ে রাখেন। ওই সময়ের মধ্যে তাঁদের কারখানায় তালা ঝুলিয়ে দেন কয়েক জন তৃণমূল কর্মীরা। ব্যবসায়ী ও তাঁর স্ত্রীর দাবি, ওই কাজের নেতৃত্বে ছিলেন রবিন রায় নামে স্থানীয় তৃণমূল নেতা।

বুধবার দুপুরে মানসকে আবার ডেকে পাঠান হাওড়া ডেপুটি কমিশনার। তিনি অবশ্য যথাযথ তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানান মানস। এর পর বিকেলে কারখানায় ঝোলানো তালা ভেঙে দেন ওই ব্যবসায়ী। মানসের অভিযোগ, তাঁদের শরিকি বিবাদে শাসকদলের কিছু কর্মী যুক্ত হয়ে ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে। আর তার সহযোগিতায় রয়েছে স্থানীয় থানার পুলিশ। ব্যবসায়ীর স্ত্রী বলেন,‘‘আমরা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি। শরিকি ঝামেলা আলোচনার মাধ্যমে অথবা আইনি পথে সমাধান হবে। কিন্তু এর মধ্যে কোনও রাজনৈতিক দল কেন হস্তক্ষেপ করবে!’’ তাঁরা পুলিশের পদস্থ কর্তাদের এ ব্যাপারে পদক্ষেপের আর্জি জানান।

এই ঘটনা নিয়ে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান একটি পরিবারের মধ্যে শরিকি বিবাদ চলছিল। অনেক জন শরিক রয়েছেন ওই জমির। মন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘কাউকে কোনও হুমকি দেওয়া হয়নি। বিষয়টি ভাল ভাবে মিটিয়ে নিতে বলা হয়েছিল।’’ অন্য দিকে, রাজ্যের সমবায় মন্ত্রী তথা হাওড়া মধ্য কেন্দ্রের বিধায়ক অরূপ রায় বলেন, ‘‘কোনও রকম অপরাধমূলক কাজ দল বরদাস্ত করে না। কেউ জড়িত থাকলে পুলিশ উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে।’’

ব্যবসায়ীর অভিযোগ প্রসঙ্গে হাওড়া ডিসিপি (সেন্ট্রাল) কে শবরী রাজকুমার বলেন, ‘‘বিষয়টি বিশদে জেনে তার পর বলব।’’ তার পরে কয়েক বার তাঁর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি আর ফোন তোলেননি। তাঁর প্রতিক্রিয়া পেলে প্রতিবেদনটি আপডেট করা হবে। অন্য দিকে, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের প্রেসিডেন্ট রবিন রায় সংবাদমাধ্যমকে দেখা মাত্র প্রায় পালিয়ে যান। কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি তিনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement