ঘটনাস্থলে ভিড় স্থানীয়দের। নিজস্ব চিত্র।
দ্বারকেশ্বর নদে স্নান করতে নেমে শুক্রবার সকালে জলে তলিয়ে মৃত্যু হল আরামবাগের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের জয়দীপ রানা (৭) নামে এক বালকের। তাকে আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক মৃত বলে জানান। ৯ দিন আগে এ ভাবেই দ্বারকেশ্বরে তলিয়ে মৃত্যু হয়েছিল আরও একজনের। পরপর এই দুর্ঘটনায় অবৈধ বালি তোলাকে দায়ী করে সরব হয়েছেন পুরপ্রধান সমীর ভান্ডারী।
তাঁর ক্ষোভ, ‘‘স্রেফ লাগামহীন বালি চুরির জন্য এই বিপদ। বালি তুলে নেওয়া গর্তগুলোতে আচমকা পড়ে গিয়েই দুর্ঘটনা ঘটছে। এখন নদে ছোটদের স্নানে না নামার জন্য সচেতন করা চলছে।’’ তাঁর অভিযোগ, “বালি চুরি বন্ধ করতে ভূমি দফতর, পুলিশ বা সেচ দফতরের বিশেষ তৎপরতা নেই। শহরের ভিতর দিয়ে অতিরিক্ত বালি বোঝাই লরি-ট্রাক্টর ছুটতে দেখা যায়। বিষয়টা নিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনগুলির দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৫ মে শহরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের দৌলতপুরের রেলসেতু সংলগ্ন দ্বারকেশ্বর নদে স্নান করতে নেমে গর্তে তলিয়ে মৃত্যু হয়েছিল শেখ হামিরুদ্দিন নামে (১১) এক বালকের। আর শুক্রবার জয়দীপের এই ঘটনা।
এলাকায় কয়েক দিনের মধ্যে পরপর দু’টি মৃত্যুর ঘটনায় শহর জুড়ে বেআইনি বালি তোলা নিয়ে ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারাও। ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের দৌলতপুরের শেখ মনসুরের অভিযোগ, “দেদার বালি চুরি চলছে। তার জেরে হাঁটু জল দ্বারকেশ্বর নদের কোথায় গর্ত বা কুয়ো হয়ে মরণফাঁদ হয়ে আছে তা বোঝার উপায় নেই। গরমে নদে বাচ্চারা স্নানে নামে তো! এখন তো দুর্ঘটনা লেগেই রয়েছে।’’ একই অভিযোগ নদ সংলগ্ন এলাকার অন্য বাসিন্দাদেরও।
যথেচ্ছ বালি চুরি এবং তার জন্য দুর্ঘটনা নিয়ে সরব হয়েছেন গোঘাটের প্রাক্তন বিধায়ক মানস মজুমদারও। তাঁর কথায়, ‘‘বালি চুরির ফলে শুধু জলে তলিয়ে মৃত্যুই ঘটছে না, অতিরিক্ত গাড়ি বোঝাই করে দ্রুত তা পাচারে রাস্তা ভাঙছে। পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যুও ঘটছে। আবার সেচ দফতরের বাঁধেরও ক্ষতি হচ্ছে।” মানসের অভিযোগ, “স্থানীয় প্রশাসনগুলির গাফিলতিতে এক দিকে রাজস্ব যেমন আদায় হচ্ছে না, তেমনি নানা অনিয়ম এবং দুর্ঘটনাগুলোর জন্য বদনাম হচ্ছে সরকারের।”
ভূমি দফতরের মহকুমা আধিকারিক দিব্যসুন্দর ঘোষ বলেন, “বেআইনি বালি তোলার খবর পেলেই আমরা ধরছি। নিয়মিত অভিযানও চলে, রাজস্ব আদায় হয়।” নদের ভিতরে বালি তোলার জন্য গর্ত হওয়া এবং সেই গর্তে পড়ে শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ নিয়ে তিনি বলেন, “এখনও আমাদের কাছে এমন কোনও অভিযোগ আসেনি। তবে এমন হলে সেচ দফতর সহ সংশ্লিষ্ট দফতরগুলি মিলে যৌথ ভাবে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’