Murder

Murder: স্ত্রীকে প্রেম-প্রস্তাবে যুবকের মুণ্ডচ্ছেদ গাড়িচালকের! গ্রেফতার স্ত্রী-সহ ৩ অভিযুক্ত

বান্ধবীর প্রতি স্বামীর আসক্তি জানতে পেরে তাঁকে খুনের ছক কষেন স্ত্রী। তাতে শামিল হয়েছিলেন সেই বান্ধবী এবং তাঁর স্বামীও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০২২ ০২:৪১
Share:

শুভজ্যোতি বসুকে খুনে গ্রেফতার সুবীর অধিকারী (ডান দিকে) শুভজ্যোতির স্ত্রী (বাঁ-দিক থেকে দ্বিতীয়) পূজা বসু এবং তাঁর বান্ধবী শর্মিষ্ঠা অধিকারী। —নিজস্ব চিত্র।

ইনস্টাগ্রামে পরিচয়ের পর বিয়ে। তবে বিয়ের দেড় মাসের মধ্যেই মোহভঙ্গ হয়েছিল যুবকের। স্ত্রীর বান্ধবীকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে বসেন তিনি। বান্ধবীর প্রতি স্বামীর আসক্তি জানতে পেরে তাঁকে খুনের ছক কষেন স্ত্রী। তাতে শামিল হয়েছিলেন সেই বান্ধবী এবং তাঁর স্বামীও।

Advertisement

চলতি মাসের গোড়ায় হুগলির শ্রীরামপুরে এক যুবকের মুণ্ডহীন দেহ উদ্ধারের পর তদন্তে নেমে এমনই অনুমান তদন্তকারীদের। ওই যুবককে খুনের অভিযোগে রবিবার তাঁর স্ত্রী, বান্ধবী এবং বান্ধবীর স্বামীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

পুলিশ সূত্রে খবর, ২ মে শ্রীরামপুরের রাজ্যধরপুরে দিল্লি রোডের পাশে এক যুবকের মুণ্ডহীন দেহ পাওয়া গিয়েছিল। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে দেহটি উত্তর ২৪ পরগনার পানিহাটির সুভাষ রোডের বাসিন্দা শুভজ্যোতি বসু (৩১)-র।

Advertisement

তদন্তে জানা গিয়েছে, পেশায় যৌনকর্মী উত্তরপাড়ার চন্দনা চট্টোপাধ্যায় ওরফে পূজার সঙ্গে ইনস্টাগ্রামে পরিচয় হয়েছিল শুভজ্যোতির। ১৩ মার্চ পূজার সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। তবে বিয়ের কয়েক দিন পর পূজা তাঁর বান্ধবী শর্মিষ্ঠা অধিকারীর বাড়ি উত্তরপাড়ায় চলে যান। স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে মাঝেমধ্যে উত্তরপাড়ায় যেতেন শুভজ্যোতি। ১ মে পূজার সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হন তিনি। পরের দিন শ্রীরামপুর থেকে তাঁর মুণ্ডহীন দেহ উদ্ধার হয়।

তদন্তে নেমে মুণ্ডহীন যুবকের দেহ সনাক্তকরণের জন্য বিভিন্ন থানায় মৃতদেহের ছবি পাঠানো হয়। ইতিমধ্যে ১৮ মে খ়ড়দহ থানায় শুভজ্যোতিকে অপহরণের অভিযোগ দায়ের করে তাঁর পরিবার। তত দিনে ওই থানায় মুণ্ডহীন দেহের ছবি পাঠানো হয়ে গিয়েছিল। এর পর শুভজ্যেতির হাতের ট্যাটু দেখে তাঁকে শনাক্ত করে তাঁর পরিবার। এর পরই শুভজ্যোতিকে খুনের মূল অভিযুক্ত সুবীর অধিকারীকে গ্রেফতার করা হয়। পাশাপাশি, উত্তরপাড়া থেকে গ্রেফতার করা হয় শর্মিষ্ঠা এবং পূজাকে। পুলিশের দাবি, তাঁরা দু’জনেই পেশায় যৌনকর্মী।

সোমবার শ্রীরামপুর থানায় চন্দননগর পুলিশের ডিসিপি অরবিন্দ আনন্দ বলেন, ‘‘১ মে কোন্নগরে ডাকা হয়েছিল শুভজ্যোতিকে। সেখানকার একটি ইটভাটায় সুবীর এবং শুভজ্যোতি মদ্যপান করেন। সে সময়ই শুভজ্যোতিকে খুন করে সুবীর। শুভজ্যোতির গলায় চপার চালিয়ে ধড় থেকে দেহ আলাদা করে দেয় অভিযুক্ত। মুণ্ডচ্ছেদ করার পর তা গঙ্গায় ফেলে দেয়। দেহটি প্লাটিক মু়ড়ে ট্রলি ভ্যানে চাপিয়ে শ্রীরামপুরে দিল্লি রোডের ধারে সেল কারখানার পাঁচিলঘেঁষা নর্দমায় ফেলে দেয়। পরের দিন দেহ উদ্ধার করে শ্রীরামপুর থানার পুলিশ।’’

মুণ্ডহীন দেহটি কার, তা জানতে প্রথমে বেগ পেতে হয়েছিল তদন্তকারীদের। শ্রীরামপুর থানার আইসি দিব্যেন্দু দাসের নেতৃত্বে একটি তদন্তকারী দল গঠন করা হয়। আইসি-র সঙ্গে থানার দুই এসআই সৌমেন নাথ এবং অনিমেষ হাজারি তদন্ত শুরু করেন। খড়দহ থানা থেকে খবর পেয়ে শ্রীরামপুর মর্গে গিয়ে মৃতের একটি ট্যাটু দেখে চিনতে ছেলেকে চিনতে পারেন শুভজ্যোতি বাবা ধ্রুবজ্যোতি বসু।

এর পরেই উত্তরপাড়ায় অভিযান চালায় পুলিশ। রবিবার শুভজ্যোতির স্ত্রী পূজা ও তাঁর বান্ধবী শর্মিষ্ঠাকে আটক করে চলে জেরা। এর পরই পেশায় গাড়িচালক সুবীর-সহ তিন জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মঙ্গলবার তিন জনকেই শ্রীরামপুর আদালতে পেশ করা হবে। ডিসি-র দাবি, খুনের প্রাথমিক কারণ জানা গিয়েছে।

তদন্তকারীদের দাবি, পূজার বান্ধবী শর্মিষ্ঠাকে কুপ্রস্তাব দেওয়াতেই শুভজ্যোতিকে খুনের পরিকল্পনা করেন তিন জন। স্ত্রীর সঙ্গে অন্য কারও সম্পর্ক মানতে পারত না সুবীর। এর আগে বরাহনগর থানা এলাকায় একই ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছিল সে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে শর্মিষ্ঠাকে প্রেমের প্রস্তাব দেওয়ায় এক জনকে চপার দিয়ে কুপিয়েছিল সুবীর। যুবকটি প্রাণে বেঁচে গেলেও সুবীর জেল খাটে। গত মাসে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে সে।

পুলিশ সূত্রের দাবি, পেশার তাগিদে অনেক সময় বাড়ির বাইরে থাকতেন পূজা। দিঘা বা তারাপীঠ হামেশাই যেতেন তিনি। সে কারণেই বিয়ের পরেই শুভজ্যোতিকে ছেড়ে উত্তরপাড়ায় শর্মিষ্ঠার ভাড়াবাড়িতে থাকতেন পূজা। যদিও তাঁর পেশা নিয়ে শুভজ্যোতির সঙ্গে অশান্তি ছিল কি না, সে বিষয়ে মন্তব্য করেননি তদন্তকারীরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement