ফাইল চিত্র।
তিন মাস পার। এখনও হুগলিতে ১০০ দিনের শ্রমিকদের বেশির ভাগকেই বিকল্প কাজ দিতে পারেনি জেলা প্রশাসন। পুজোর মরসুমেও তাই ওই শ্রমিকদের ঘরে অন্ধকার। কোথায় গেলে ওই কাজ মিলবে, তা-ও তাঁরা জানতে পারছেন না বলে অভিযোগ। জেলা প্রশাসনের দাবি, বিকল্প কাজে ১০০ দিনের চেয়ে শ্রমিকদের বেশি মজুরিই দেওয়া হচ্ছে।
কেন্দ্র টাকা না-দেওয়ায় ১০০ দিনের কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ওই প্রকল্পের শ্রমিকদের রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতরের মাধ্যমে কাজ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হুগলিতে ওই কাজ দেওয়ার কাজ গত জুন মাসের গোড়ায় শুরু করেছিল কৃষি দফতর। এখনও পর্যন্ত দফায় দফায় মোট ১৫টি দফতর কাজের ব্যবস্থা করেছে বলে জেলা প্রশাসনের দাবি।
কতজন বিকল্প কাজ পেয়েছেন?
জেলা প্রশাসনেরই একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, হুগলিতে ১০০ দিনের প্রকল্পে মোট জবকার্ডধারীর সংখ্যা ৮ লক্ষ ৭৪ হাজার ১৭৬। এর মধ্যে সক্রিয় কর্মী আছেন ৭ লক্ষ ৫১ হাজার ২০০ জন। গত সোমবার পর্যন্ত বিকল্প কাজ পেয়েছেন মাত্র ১ লক্ষ ২০ হাজার ১৩৪ জন। ওই ১৫টি দফতরে শ্রমিকদের সম্মিলিত কাজের দিন তথা শ্রমদিবস তৈরি হয়েছে ১৮ লক্ষ ৪৮ হাজার ৩৫১টি। মজুরি বাবদ শ্রমিকরা পাচ্ছেন ৫০ কোটি ৩৩ লক্ষ ৩৬ হাজার ১০০ টাকা।
অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) নকুলচন্দ্র মাহাতো বলেন, “বর্তমানে জেলায় ১৫টি সরকারি দফতর থেকে ১৭৭৬টি প্রকল্পের কাজ হচ্ছে। সোমবার পর্যন্ত ১ লক্ষ ২০ হাজার ১৩৪ জন শ্রমিকের কাজ এবং মজুরি নিশ্চিত করা গিয়েছে।”
তবে, মজুরি পরিশোধের অঙ্ক কত, তা যেমন জানা যায়নি, তেমনই কোন দফতর কত জনকে বিকল্প কাজ দিয়েছে, সেই পরিসংখ্যানও মেলেনি। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা দাবি করেছেন, অন্যত্রন্যূনতম মজুরি না-মেলার অভিযোগ উঠলেও হুগলিতে মজুরি বেশিদেওয়া হচ্ছে।
জেলার উপ-কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) সন্দীপ দে বলেন, “জেলার কৃষি-খামারগুলিতে চাষাবাদে যেখানে যেমন প্রয়োজন, সেই মতো ১০০ দিন প্রকল্পের শ্রমিকদের নেওয়া হচ্ছে। কৃষি ক্ষেত্রে শ্রম দফতরের ধার্য করা মজুরি তাঁরা পাচ্ছেন।” পূর্ত দফতরের (নির্মাণ) জেলা এগ্জ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার নিমাইচন্দ্র পাল বলেন, “ঠিকাদারদের বলে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা প্রয়োজনমতো ওই শ্রমিকদের কাজে নিচ্ছেন। তাঁরাই নাম নথিভুক্ত করছেন।” একই বক্তব্য সেচ দফতরের জেলা এগ্জ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার তপন পালেরও।
এর পরেও শ্রমিকদের অভিযোগের অন্ত নেই। বিশেষ করে যাঁরা ধারাবাহিক ভাবে ১০০ দিনের প্রকল্পে কাজ করেন বা ওই কাজের উপরেই নির্ভরশীল, তাঁদের কী হবে প্রশ্ন তুলে বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকায় ক্ষোভ-বিক্ষোভ আছে। খানাকুলের ঘোষপুরের শেখ মনির আলি, আরামবাগের বাতানলের রবীনমণ্ডল, গোঘাটের বালির শিখা মালিকের মতো অনেক শ্রমিকেরই অভিযোগ, তাঁরা কাজ পচ্ছেন না। কোথায় গেলে কাজ পাবেন, সেই দিশাও ব্লক প্রশাসন বা পঞ্চায়েত দেখাতে পারছে না।
বিভিন্ন পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ এবং ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সব জবকার্ডধারীদের নথি সরকারি রাজ্য সরকারের সব দফতরেই পাঠানো আছে। যখন যেখানে যে দফতরের কাজ হবে, সেই দফতরই ওই শ্রমিকদের ডেকে নেবে, এ রকমই ব্যবস্থা হয়েছে।
পঞ্চায়েত প্রধানদের একাংশের অভিযোগ, পঞ্চায়েত এলাকার ধারাবাহিক ভাবে কাজ করা একজন শ্রমিকও কাজ পাননি। সেচদফতর, পূর্ত দফতর বা জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের ঠিকাদাররা যে সব কাজ জানা শ্রমিকদেরনিয়ে বরাবর কাজ করাতেন, তাঁদের দিয়েই করাচ্ছেন। তিনি রাজ্যের যে জেলারই লোক হোক, জবকার্ড থাকায় সেটাই নথিভুক্ত হচ্ছে। ব্লক আধিকারিকরাও স্বীকার করেছেন, অন্য জেলার লোক এখানেকাজ পেলেও সেই তথ্য এখানেই নথিভুক্ত হবে।