গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
শুধু নিট বা রাজ্যের স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ নয়। ২০১৮ সালে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের এলটি গ্রেডের প্রশ্নপত্র ফাঁসেরও অভিযোগ উঠেছিল। সেই প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের নামও।
পুলিশ সূত্রের খবর, ২০১৮ সালের সেই পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ছাপা হয়েছিল উত্তর ২৪ পরগনার মধ্যমগ্রামের এক ছাপাখানায়। সেই ছাপাখানার মালিক কৌশিক কর এবং কর্মচারী অশোক দেব চৌধুরীকে গ্রেফতার করেছিল উত্তরপ্রদেশের এসটিএফ। পুলিশের সেই বিশেষ দলের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন তৎকালীন ইউপি পিএসসি পরীক্ষার ‘কন্ট্রোলার’ অঞ্জুলতা কাটিয়ারও।
আপাতত জামিনে মুক্ত অশোক। এবং তাঁর দাবি, কৌশিকের কথাতেই তিনি মধ্যমগ্রাম থেকে উত্তরপ্রদেশে নিয়ে গিয়েছিলেন প্রশ্নপত্র। তবে তাঁর নিজের অজান্তে। তিনিই ‘প্রশ্নফাঁস’-এর বিষয়টি পুলিশকে জানিয়ে অভিযোগ করেন। কেস ক্রাইম নম্বর ১৭২ অফ ২০১৯ ইউ/এস ৪০৬, ৪০৯, ৪২০,২০১,১২০-বি আইপিসি এবং দুর্নীতি দমন আইনে ১৩(১) এ, ১৩(১) সি এবং ১৩(২) বারাণসীর চোলাপুর পুলিশ স্টেশনে অভিযোগ দায়ের হয়। গ্রেফতার হন অশোক নিজেও। কী ভাবে পরীক্ষার আগের দিন ফাঁস হয়ে গিয়েছিল প্রশ্নপত্র, আনন্দবাজার অনলাইনকে তা বিস্তারিত জানালেন অশোক নিজেই।
প্রশ্ন: আপনি কাজ করতেন মধ্যমগ্রামে ছাপাখানায়। উত্তরপ্রদেশে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে কী ভাবে জানলেন?
অশোক: ২০১৮ সালের এক দিন বারাণসীর পার্ক প্লাজ়া হোটেলে সঞ্জয়, গণেশরা এসে বলল, কৌশিক কর (ছাপাখানার মালিক) ফোন করেছেন। বলে একটা মোবাইল এগিয়ে দিল। আমি ফোনটা ধরতে কৌশিক বললেন, “অশোকদা, আপনি যে খামটা নিয়ে গিয়েছেন, তার মধ্যে দুটো প্রশ্নপত্র আছে। প্রশ্ন সমাধানের জন্য এক জন (সল্ভার) আসার কথা ছিল। কিন্তু তিনি আসতে পারছেন না। আপনি তো সল্ভিং জানেন। আপনি ওটা সল্ভ করে দিন। এরা ৪০-৫০ জন প্রার্থীর কাছ থেকে ২০-২৫ লক্ষ করে নিয়ে নিয়েছে। আপনি যে হোটেলে আছেন, তার থেকে চার-পাঁচ কিলোমিটার দূরে এসে জমায়েত হয়েছেন।” ওই ফোনটা পেয়ে প্রথম জানতে আর বুঝতে পারলাম ও (কৌশিক) প্রশ্নপত্র ‘লিক’ করে। আগে কোনও দিন বুঝতে পারিনি!
প্রশ্ন: কিন্তু আপনি প্রশ্নপত্র নিয়ে বারাণসীতে গেলেন কেন? সঞ্জয়-গণেশ কারা?
অশোক: কৌশিক আমায় বারাণসী পাঠিয়েছিল। এ সবের শুরু ২৫ জুলাই। ওই দিন কৌশিক আমাকে বলে ২৭ জুলাই ভোর ৫টায় মধ্যমগ্রামের অফিসে পৌঁছে যেতে। মধ্যমগ্রাম দোলতলায় কৌশিকের প্রিন্টিং প্রেস আছে। কৌশিক বলে, ওই দিন আমায় একটা খাম দেবে। সেটা নিয়ে সকাল ১০টার ফ্লাইটে আমায় বারাণসী যেতে হবে। আমার সঙ্গে আমাদের আর এক জন কনসালট্যান্ট রঞ্জিত কুমার সাউও যাবে। বারাণসীতে সঞ্জয় বলে এক জন আমার সঙ্গে দেখা করবে। আমি ওকে জিজ্ঞাসাও করেছিলাম, ফ্লাইট তো ১০টায়। ভোর ৫টায় অফিসে গিয়ে কী করব? ও বলেছিল, ও চায় না, আমায় কেউ দেখুক। ২৭ তারিখ ছাপাখানায় যাওয়ার পরে ও আমায় একটা সিল্-করা খাম দিল।
প্রশ্ন: কেমন দেখতে সেই খাম?
অশোক: যে রকম একটা বড় চৌকো খাম হয়। ওএমআর বা কোয়েশ্চেন পেপার তো দেখেছেন! ওই রকম কাগজ। যেটা ভাঁজ না করেও ওই খামে এঁটে যাবে। তবে রঞ্জিত ওই দিন আমার সঙ্গে বারাণসী যায়নি। প্লেন ছাড়ার ১০ মিনিট আগে রঞ্জিত এয়ারপোর্টে এসে বলে, ওর বদলে গণেশপ্রসাদ সাউ আর ভোলানাথ পাত্র নামে দু’জন প্লেনে আমার জন্য অপেক্ষা করছে। ওরা যাবে আমার সঙ্গে। বারাণসীতে আমরা পার্ক প্লাজ়া হোটেলে ছিলাম।
প্রশ্ন: খামটা কী করলেন? প্রশ্নফাঁস কী করে হল?
অশোক: ২৭ তারিখ বিকেল ৪টে নাগাদ সঞ্জয় আসে। ভোলানাথ আর গণেশের সামনে আমি সঞ্জয়কে খামটা দিয়ে দিই। কিন্তু আধ ঘণ্টা পরে একটা ফোন নিয়ে ওরা আমার ঘরে আসে। ফোনের ও দিকে ছিল কৌশিক। ও বলল, ‘‘আপনি যে খামটা নিয়ে গিয়েছেন, সেই খামে একটা সোশ্যাল সায়েন্স আর হিন্দির প্রশ্নপত্র আছে। ২৯ জুলাই ইউপিএসসির এলটি গ্রেডের পরীক্ষা আছে। সঞ্জয়রা ৪০-৫০ জনের কাছ থেকে ২০ লাখ করে নিয়ে নিয়েছে। কিন্তু সল্ভার আসেনি। আপনি কোয়েশ্চেন পেপারটা সল্ভ করে দিন।’’ আমি বলি, এটা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। ওরা ফোনটা নিয়ে চলে যায়। আধ ঘণ্টার মধ্যে আবার ওরা আমার কাছে কৌশিকের ফোন নিয়ে আসে।
প্রশ্ন: কৌশিক কী বললেন?
অশোক: ফোনটা ধরার পরে কৌশিক আমাকে কড়া গলায় বলল, ‘‘আমি প্রমাণ করে দেব, আপনি প্রশ্নপত্র চুরি করে নিয়ে গিয়েছেন। শুধু এ বার নয়, আপনি ত্রিপুরায় যে খাম নিয়ে গিয়েছিলেন, তাতেও প্রশ্নপত্র ছিল। ত্রিপুরা টেট পরীক্ষার ক্ষেত্রেও আপনি একই কাজ করেছেন বলেও প্রমাণ করে দেব!” কৌশিক অনেক প্রভাবশালীকে চেনে। তাঁদের সাহায্যে আমাকে গ্রেফতার করিয়ে দেওয়ার ভয় দেখায়। কিন্তু তাতেও আমি রাজি হইনি। তৃতীয় ফোনটা করেন কৌশিকের মাসি আরতি মিত্র। উনি আমাকে প্রার্থীপিছু দু’লক্ষ টাকা দেওয়ার কথা বলেন। তাতে ৫৪ জনের জন্য এক কোটি আট লক্ষ টাকা দেওয়ার কথা হয়। শুধু ফোন নয়, হোটেলের ঘরেও অপরিচিত কয়েক জন এসে আমাকে গালিগালাজ করতে থাকে। ওদের কথা না শুনলে আমাকে ওরা মেরে ফেলতে পারে বলে ওদের কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছিল। পরিস্থিতি দেখে আমি বলি, আমি কাজটা করে দেব। নিজের দর বাড়ানোর জন্য কৌশিকের সঙ্গে নাটক করছি।
প্রশ্ন: কী ভাবে পুরো কাজটা হল?
অশোক: সে দিন বিকেল থেকেই কাজ শুরু হয়ে গেল। আমি প্রশ্ন সমাধান করতে বসে গেলাম। সোশ্যাল সায়েন্স আর হিন্দির একটা করে প্রশ্ন আমি নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু হিন্দিটা আমি ভাল জানি না। সোশ্যাল সায়েন্স আর হিন্দির পরীক্ষার মধ্যে ৩০ নম্বর ‘কমন’ প্রশ্ন ছিল। ইংরাজির ৩০টা প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। ওই ৩০টা করেছিলাম। তা ছাড়া ওই সোশ্যাল সায়েন্সের ১২০টা প্রশ্ন। ২৭ তারিখ বিকেল থেকে উত্তর লিখতে বসেছিলাম। ১২০টা প্রশ্নের উত্তর লিখতে প্রায় ২৮ তারিখ দুপুর পর্যন্ত সময় লেগে যায়। ২৮ তারিখ ৪টে-৫টা নাগাদ যেখানে ওই প্রার্থীরা ছিল, সেখানে গেলাম। পর দিন রঞ্জিতও বারাণসীতে চলে এল। সে দিন বিকেলেও ওই দোতলা বাড়িতে গেলাম।
প্রশ্ন: গিয়ে কী দেখলেন?
অশোক: গিয়ে দেখলাম ৫০-৫৫ জন ছাত্রছাত্রী প্রশ্নপত্র পাওয়ার জন্য বসে আছে। সঙ্গে ওদের দালালরাও এসেছিল। প্রশ্নের উত্তর তো আমি তৈরি করে নিয়েই গিয়েছিলাম। সারা রাত চাকরিপ্রার্থীরা ওই প্রশ্ন-উত্তর ধরে পড়াশোনা করল। পরীক্ষাকেন্দ্রে যাওয়ার আগে পর্যন্ত ওই সব উত্তর মুখস্থ করল। তার পরে যে যার পরীক্ষাকেন্দ্রে চলে গেল। যাদের পরীক্ষাকেন্দ্র কানপুরে ছিল, তারা মাঝরাতেই বেরিয়ে গেল। প্রার্থীরা যখন আমার তৈরি উত্তর মুখস্থ করছে, তখন গণেশকে বললাম, এরা চাকরি পেল কি না কী করে জানব? পরে তো এরা টাকা দিতে অস্বীকারও করতে পারে। তুমি এদের নাম, রোল নম্বর লিখে দাও। ৫৪ জন চাকরিপ্রার্থীর নাম, রোল নম্বর গণেশ নিজে হাতেই লিখে দেয়। পরে সকালের দিকে ওখানে যে সব দালাল— সঞ্জয়, রঞ্জিতরা ছিল, তাদের বলি, এর আগে যত বার প্রশ্ন ফাঁস করেছি আমরা, সেই প্রশ্নপত্রে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছি। প্রশ্নপত্র পোড়ানোর ভিডিয়ো কৌশিককে পাঠাতে হবে বলেও জানাই। ওখানে প্রশ্নপত্র পোড়ানো হয়। সেই ভিডিয়োতে ওদের ছবিও ছিল। গণেশকে দিয়ে রোল নম্বর লেখানোর ভিডিয়োও তুলেছিলাম প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রমাণ রাখতে। যে বাড়িতে প্রশ্নের উত্তর মুখস্থ করানো হয়েছিল, সেই বাড়িও পরে পুলিশকে দেখিয়েছি।
প্রশ্ন: প্রশ্নের উত্তর তো ইন্টারনেটেও পাওয়া যায়!
অশোক: ওই প্রশ্নগুলোর উত্তর নেট থেকেই খুঁজতে হত। কিন্তু নেটে তো অনেক কিছুই থাকে। এর জন্য ছ’-সাতটা সাইট ঘেঁটে ঠিকটা বেছে প্রার্থীদের জন্য উত্তর তৈরি করতে হত। একটা সাইট দেখে উত্তর লিখলে ভুলও হতে পারে। তাই কয়েকটা সাইট দেখে নিশ্চিত হয়েই উত্তর বাছতে হয়। সেই অভ্যাসটা আমার ছিল। কৌশিকই শিখিয়েছিল, কী ভাবে চার-পাঁচটা সাইট ঘেঁটে সঠিক উত্তরটা জানতে হয়।
প্রশ্ন: হিন্দি প্রশ্নপত্রের কী হল?
অশোক: সঞ্জয় আর গণেশ দু’জনে মিলে সঞ্জয়ের বাড়ি গেল। সেখানে ওর দিদি আর জামাইবাবু এসেছিলেন। যাঁরা শিক্ষিত বলেই শুনেছিলাম। শুনেছিলাম, তাঁরা এসে সব উত্তর বলে দেবেন। পরীক্ষার দিন বিকেলের দিকে রঞ্জিতকে বলি আমার কলকাতা ফেরার টিকিট কেটে দিতে। কলকাতায় নেমেই কৌশিকের কাছ থেকে টাকা চাই। আসলে আমার পরিকল্পনা ছিল, ও টাকা আনলেই ওকে পুলিশে ধরিয়ে দেব। কিন্তু কৌশিক ১ কোটির বদলে তখন ২০-২৫ লক্ষ টাকা দেওয়ার কথা বলে। কিন্তু আমি ওই টাকা নিইনি। আর ও আমায় ১ কোটি টাকা দেবে-দেবে করেও দেয়নি।
প্রশ্ন: আপনি কতগুলো প্রশ্নপত্র নিয়ে গিয়েছিলেন?
অশোক: ৩০ পাতার দুটো প্রশ্নপত্র ছিল। একটা সোশ্যাল সায়েন্স আর একটা হিন্দি পিএসসি এলটি এগজ়াম ২০১৮।
প্রশ্ন: কিন্তু আপনাকে দিয়েই কেন প্রশ্ন সল্ভ করানো হল? অন্য কাউকে দিয়ে কেন নয়?
অশোক: আমায় দিয়ে তো করানোর কথা ছিল না! ওই কাজের জন্য সঞ্জয় যাকে ঠিক করেছিল, সে আসেনি। তাই কৌশিক আমায় বলেছিল।
প্রশ্ন: ওই রকম একটা জায়গা বাছা হয়েছিল কেন?
অশোক: ওটা গ্রামের মধ্যে একটা নির্জন জায়গা। ওখানে অনেক ক্লাসরুম আছে। ৬০-৭০ জন একসঙ্গে ওখানে এলেও কেউ খুব একটা সন্দেহ করবে না। তখন প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে পারে সন্দেহে পুলিশ গোটা উত্তরপ্রদেশ তছনছ করছিল। টিভিতেও দেখাচ্ছিল প্রশ্নফাঁসের খবর। তাই ওরা এমন একটা জায়গা বেছেছিল, যেটা নির্জন আর ছাত্রছাত্রীদের দেখে কেউ কোনও সন্দেহ করবে না।
প্রশ্ন: আপনি উত্তরপ্রদেশেই পুলিশকে ৫৪ জন প্রার্থীদের নাম, রোল নম্বর দিয়ে দিলেন না কেন?
অশোক: সত্যি বলতে, আমি তখন ভরসা পাইনি। ভাবছিলাম, আরও প্রমাণ দরকার। পরে তো সেটাই হল! অত প্রার্থীর তালিকা দেওয়ার পরেও পুলিশ আমাকে বিশ্বাস করল না। উল্টে আমাকে গালিগালাজ করল। আগে আমি রাজনীতি করেছি। তাই ওই রকম যে হবে, সেটা আগেই আঁচ করেছিলাম। তাই আমি আরও প্রমাণ জোগাড় করতে চাইছিলাম।
প্রশ্ন: আপনি এত প্রমাণ জোগাড় করলেন তো পুলিশে জানাতে এক মাস সময় নিলেন কেন?
অশোক: প্রথমে আমার কাছে দুটো প্রমাণ ছিল। তার মধ্যে ভিডিয়োতে ছিল যে, আমি প্রশ্নপত্র পোড়াচ্ছি। অর্থাৎ, মনে হবে আমি সরাসরি ওই ষড়যন্ত্রে যুক্ত। ওই ঘটনার এক মাস পরে বিধাননগর সাউথ থানায় প্রথম অভিযোগ করি। তখন আমার উপর হামলাও হয়। অগস্ট মাসে সল্টলেকে আমাকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। খুনের হুমকি পেয়ে আমি থানায় অভিযোগ জানাই।
প্রশ্ন: আপনার উপর কেন হামলা হল?
অশোক: বারাণসী থেকে ফিরে কৌশিকের অফিসে যাঁরা উঁচু পদে ছিলেন, তাদের ফোনে মেসেজ করতে থাকি প্রশ্নফাঁসের ঘটনা জানিয়ে। তখন কয়েক জনের কাছ থেকে জানতে পারি, ওঁরা অনেকেই প্রশ্নফাঁসের ব্যাপারটা জানতেন। এক জন তো আমাকে এ-ও জানিয়েছিলেন যে, এর আগে ওঁরা ওএমআর কারচুপিও করেছেন। এক সহকর্মী জানিয়েছিলেন, মেরিট লিস্ট তৈরির আগে ৪০০-৫০০ রোল নম্বর পেয়ে যেতেন। ওই সব প্রার্থীকে সাদা খাতা জমা দেওয়ার কথা বলা থাকত। পরে স্ক্যান করার সময় এমন ভাবে করা হত, যাতে ওরাই চাকরি পায়। ১৫০ নম্বরের পরীক্ষা হলে প্রার্থীরা ১৩০-১৩৫ পেয়ে যেত। তখন বারাণসীর দুই দালালকে কলকাতায় ডেকে তাদের ভিডিয়ো তুলি।
প্রশ্ন: কিন্তু হামলা হল কেন?
অশোক: আমি যে এই সব যোগাযোগ করছি, সেটা কৌশিক জেনে যায়। প্রমাণ জোগাড় করার সময় একদিন রাতে তিন জন মিলে আমার উপর হামলা করে। কৌশিকের নাম করে হুমকিও দেয়। এর পরেই একে একে আদালত, থানা, উত্তরপ্রদেশ এসটিএফ-এ চিঠি পাঠিয়ে অভিযোগ করি। উত্তরপ্রদেশে তদন্ত শুরু হয়। তার মধ্যে আমি একাধিক বার উত্তরপ্রদেশে যাই। যা জানতাম সব পুলিশকে জানিয়েছিলাম। আমার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ২০১৯-এর মে মাসে কৌশিক গ্রেফতার হয়। অক্টোবরে আমাকেও চোলাপুর থানায় ডেকে পাঠানো হয়। ২৪ অক্টোবর আমায় গ্রেফতার করে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। এর পরে ৪৪ মাস জেলে ছিলাম। কিন্তু আমি প্রাণে বাঁচতে ওই প্রার্থীদের সাহায্য করেছিলাম। কোনও টাকা পাইনি। অথচ যে প্রশ্নফাঁসের ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে আমাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, সেই পরীক্ষার ভিত্তিতে ১০ হাজার নিয়োগ কী করে হয়ে গেল?