Students Union Election

কলেজে ফিরছে ভোটের লড়াই! কতটা তৈরি বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন? খোঁজ নিল আনন্দবাজার অনলাইন

২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে শেষ বার রাজ্যে ছাত্র সংসদের ভোট হয়েছিল। তার পর বিক্ষিপ্ত ভাবে যাদবপুর, প্রেসিডেন্সির মতো কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভোট হলে‌ও তা সার্বিক ছিল না।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৯:০০
Share:

শাসক, বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলির পতাকা। —গ্রাফিক সনৎ সিংহ।

লোকসভা ভোটের আগে ‘মিনি ভোট’ হতে পারে রাজ্যে। কয়েক মাস আগে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়েছিলেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ছাত্র সংসদের ভোট করানোর ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী ভাবছেন। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই কলেজে কলেজে ছাত্রভোট করানো নিয়ে মুখ খুলেছেন। গত ২৮ অগস্ট সারা রাজ্যে ছাত্র ভোট করানোর বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘আপনারা যদি শান্তিপ্রিয় ভাবে নির্বাচনটা করতে পারেন তা হলে আমি জেলায় জেলায় নির্দেশ দিয়ে দেব।’’ এর পর গত ৫ সেপ্টেম্বর হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, যে বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রভোট হয়নি, সেখানে সব দিক খতিয়ে দেখে নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে সময় মতো নির্বাচন করানোর জন্য কোনও নির্দেশিকা রাজ্যের তরফে জারি করা হয়েছে কি না, তা-ও হলফনামা দিয়ে রাজ্যকে জানাতে বলেছে আদালত। সব মিলিয়ে অনেকেই মনে করছেন, বছর ছয়েক পর আবার পুরোদস্তুর ছাত্র সংসদ নির্বাচনের পথে যেতে চলেছে রাজ্য।

Advertisement

ভোট হলে কতটা তৈরি বিভিন্ন কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগঠন? কেমন আশাবাদী যে যার ‘ক্ষমতা’ ধরে রাখার ক্ষেত্রে? আনন্দবাজার অনলাইন কথা বলল বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে।

• তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি)

Advertisement

সুদীপ রাহা, রাজ্য সহ-সভাপতি

‘‘আমরা, ছাত্র সংসদ ভোটে যাব এই বলে যে, রাজ্যপাল আচার্য হিসাবে যা শুরু করেছেন তাতে শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে। সেটা ফিরিয়ে আনাই আমাদের কাছে চ্যালেঞ্জ। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে বিরোধী ছাত্র সংগঠন হিসাবে এসএফআই, এবিভিপি, ছাত্র পরিষদ, ডিএসও—কারওরই কোনও অস্তিত্ব নেই। ওরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জায়গাতেই নেই।’’

(তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই কলেজে কলেজে তাদের ছাত্র সংগঠন টিএমসিপির একচ্ছত্র দাপট বাড়তে থাকে। ২০১৭ সালে শেষ বার পুরোদস্তুর ছাত্র সংসদের নির্বাচন হয়। সাড়ে পাঁচশোর মতো কলেজের মধ্যে হাতেগোনা কয়েকটি বাদে সবই দখলে ছিল টিএমসিপির।)

• ভারতের ছাত্র ফেডারেশন (এসএফআই)

সৃজন ভট্টাচার্য, রাজ্য সম্পাদক

‘‘ছাত্র সংসদ নির্বাচন মানে শুধু ভোটের দিনের বিষয় নয়। ভোটের আগে ক্যাম্পাসের মধ্যে প্রচার-সহ আরও অনেকগুলি বিষয় রয়েছে। সুষ্ঠু ভাবে ভোট করার বিষয়টি সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে। সেটা হলে রাজ্যের অধিকাংশ কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে সমানে সমানে লড়াই করার জন্য আমরা প্রস্তুত।’’

(বাম জমানায় রাজ্যের প্রায় ৯০ শতাংশ কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ চালাত সিপিএমের এই ছাত্র সংগঠন। সেই সময়ে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠত দখলদারির। যদিও সরকার বদলের পর থেকেই পরিস্থিতিটা বদলে যেতে থাকে। ২০১৭ সালে যখন শেষ বার ছাত্র ভোট হয়েছিল, তখন রাজ্যে ৮-৯টি কলেজে ইউনিয়ন জিতেছিল এসএফআই। তার মধ্যে ছিল নকশালবাড়ি কলেজ, কলকাতার ভিক্টোরিয়া কলেজ। মালদহের চাঁচল ও দক্ষিণ মালদহ কলেজে কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠন ছাত্র পরিষদের সঙ্গে জোট করে সংসদ জিতেছিল তারা।)

• ছাত্র পরিষদ (সিপি)

সৌরভ প্রসাদ, রাজ্য সভাপতি

‘‘পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যে কী হয়েছে সবাই দেখেছে। সে ভাবে ভোট হলে কেউ কিছুই করতে পারবে না। কিন্তু আদালতের তত্ত্বাবধানে যদি ভোট হয়, যদি অনলাইনে মনোনয়ন জমা হয়, তা হলে আমরা সর্বশক্তি দিয়ে লড়ব।’’

(বাম জমানায় কলকাতার কয়েকটি কলেজ ছিল ছাত্র পরিষদের ঘাঁটি। সেখানে দাঁত ফোঁটাতে পারত না এসএফআই। কিন্তু পালাবদলের পর সেই সমীকরণ বদলে যায়। যদিও ২০১৭ সালের ভোটে পুরুলিয়া, মুর্শিদাবাদ-সহ হাতে গোনা কয়েকটি কলেজে তাদের ইউনিয়ন ছিল।)

• অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি)

সঙ্গীত ভট্টাচার্য, রাজ্য সম্পাদক

‘‘সারা রাজ্যে আমাদের কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও নগর ইউনিটগুলি গঠনের কাজ চলছে। রাজ্যে সব কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে লড়ব। ৩০০ কলেজে আমরা ভাল ফল করব।’’ পাশাপাশিই তিনি বলেন, ‘‘লিংডো কমিশনের সুপারিশ মেনে ছাত্র ভোট করাতে হবে। পঞ্চায়েতের মতো ভোট হলে হবে না। ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। সেই দায়িত্ব রাজ্য সরকার তথা মুখ্যমন্ত্রীকে নিতে হবে।’’

(রাজ্যে বেশ কিছু কলেজে ইউনিট থাকলেও, কোথাওই ছাত্র সংসদের দখল এবিভিপির ছিল না। সঙ্ঘ পরিবারের এই ছাত্র সংগঠন রাজ্যে বিজেপির শক্তিবৃদ্ধির পর নিজেদের পরিসর কিছুটা হলেও বাড়িয়েছে।)

• ডেমোক্রেটিক স্টুডেন্টস অর্গানাইজেশন (ডিএসও)

গৌরাঙ্গ খাটুয়া, রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য

‘‘বাম আমলে ভোট হত। কিন্তু মনোনয়ন তুলতে দিত না। আমাদের প্রার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিত। আর তৃণমূল সরকার ভোট ব্যাপারটাই তুলে দিয়েছে। সঠিক ভাবে ভোট হলে আমরা আমাদের সর্বশক্তি দিয়ে লড়ব।’’

(শেষ বার ভোটে শ্রীরামপুর গার্লস, পুরুলিয়ার নিস্তারিনী কলেজ, কলকাতায় যোগমায়াদেবী, মুরলীধর গার্লস ও এসএসকেএম হাসপাতালের মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র সংসদ জিতেছিল এসইউসির ছাত্র সংগঠনটি।)

২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে শেষ বার রাজ্যে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ছাত্র সংসদ ভোট হয়েছিল। তার পর বিক্ষিপ্ত ভাবে যাদবপুর, প্রেসিডেন্সি, রবীন্দ্রভারতীর মতো কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচন হলে‌ও তা সার্বিক ছিল না। তবে গত জানুয়ারি মাসে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ছাত্রদের উদ্যোগে ভোট ঘিরে এক নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি হয়। শেষ পর্যন্ত বিজয়ী প্রার্থীদের ‘মনোনীত প্রতিনিধি’ হিসাবে মেনে নিয়েছিল কলেজ কর্তৃপক্ষ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement