(উপরে বাঁ দিক থেকে) প্রণয় দে এবং সুদেষ্ণা দে। (নীচে বাঁ দিক থেকে) প্রসূন দে এবং রোমি দে। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
ট্যাংরার দে বাড়িকে ঘিরে রহস্য আরও ঘনীভূত হচ্ছে। খুনের কারণ নিয়ে প্রশ্ন ছিলই, কে বা কারা ওই বাড়ির তিন সদস্যকে খুন করলেন, তা-ও এখনও স্পষ্ট নয়। খুনি কি দুই ভাই? না বাইরের কেউ এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত? সেই প্রশ্নও উঠছে। যদিও সিসিটিভি ফুটেজে অন্য কাউকে দেখা যায়নি বলেই পুলিশ সূত্রে খবর। বাড়ির তিনতলায় পাওয়া গিয়েছে রক্তমাখা ছুরি। কিন্তু তিন জনের দেহ পড়ে ছিল দোতলায়। সে ক্ষেত্রে তিনতলায় ছুরি গেল কী করে, চারদিকে কেন রক্ত ছড়িয়েছিটিয়ে রয়েছে, সেই প্রশ্নও উঠছে।
দে বাড়ির তিনতলা থেকে বুধবার একটি কাগজ কাটার ছুরি উদ্ধার করে পুলিশ। তাতে রক্তমাখা ছিল। রোমি দে এবং সুদেষ্ণা দে-র হাতের শিরা কাটার পরেই ছুরিটি নিয়ে তিনতলায় যাওয়া হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। রক্তের নমুনা পরীক্ষা করছেন তদন্তকারীরা। বাড়ির বিভিন্ন অংশেই রক্ত ছড়িয়েছিটিয়ে ছিল। রক্ত পাওয়া গিয়েছে দে ভাইদের গাড়িতেও। তবে গাড়িটি দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল। প্রণয়, প্রসূন এবং ১৪ বছরের প্রতীপ— তিন জনই তাতে গুরুতর জখম হয়েছেন। ফলে গাড়িতে রক্ত থাকা স্বাভাবিক। দুর্ঘটনার আগে থেকে গাড়িতে রক্ত ছিল কি না, পুলিশ তা জানার চেষ্টা করছে।
বুধবার ট্যাংরার অটল শূর রোডের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় দুই বধূ এবং এক কিশোরীর দেহ। বৃহস্পতিবার ময়নাতদন্তের রিপোর্ট থেকে স্পষ্ট হয়েছে, তাঁদের তিন জনকেই খুন করা হয়েছে। কিশোরী প্রিয়ম্বদার মৃত্যু হয়েছে খাদ্যে বিষক্রিয়ার ফলে। রোমি এবং সুদেষ্ণার হাতের শিরা কাটা হয়েছে। কাটা হয়েছে তাঁদের গলাও। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ‘নিখুঁত ভাবে’ দুই বধূর হাতের শিরা কাটা হয়েছিল। ঘুমন্ত বা অচেতন অবস্থায় না থাকলে এত নিখুঁত ভাবে শিরা কাটা সম্ভব নয়। কাটার সময়ে দু’জনের কারও হাত সে ভাবে নড়েনি।
প্রণয় এবং প্রসূন বাইপাসের ধারের হাসপাতালে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। পুলিশের কাছে তাঁরা জানিয়েছেন, সোমবার রাতে তাঁরা ছ’জন মিলে ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। কিন্তু পরের দিন দুই ভাইয়ের ঘুম ভেঙে যায়। জেগে ওঠে প্রতীপও। তার পরেই ঘুমন্ত অবস্থায় দুই বধূর শিরা কাটা হয় বলে অনুমান পুলিশের।
ট্যাংরার এই দে পরিবার আর্থিক সমস্যায় ভুগছিল। বিভিন্ন ব্যাঙ্ক এবং সংস্থার কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা ধার নিয়েছিলেন তাঁরা। যা পরিশোধ করতে পারেননি। এমনকি, বাড়িটিও বন্ধক রাখা হয়েছিল। অনটনের কারণেই একসঙ্গে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন তাঁরা, অনুমান পুলিশের। কিন্তু সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি। তার পরেই দুই বধূ এবং কিশোরীকে খুন করা হয়।