ট্যাংরাকাণ্ডে নিহত রোমি এবং সুদেষ্ণা দে (ডান দিকে)। নিহত কিশোরী প্রিয়ম্বদা দে (ইনসেটে)। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
ট্যাংরাকাণ্ডে দে পরিবারের দুই বধূ এবং কিশোরীর মৃত্যু কী ভাবে হল, তার ময়নাতদন্তের রিপোর্ট প্রকাশ্যে এল। দুই মহিলারই মৃত্যু হয়েছে হাত এবং গলা থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে। কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে বিষক্রিয়ায়। তার হাত এবং পা নীল হয়ে গিয়েছিল। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে স্পষ্ট, তিন জনকেই খুন করা হয়েছে। এই রিপোর্টের জন্য বুধবার থেকে অপেক্ষা করে ছিলেন তদন্তকারীরা। এ বার তদন্তের অগ্রগতি আরও দ্রুত হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, রোমি দে-র দুই হাতের কব্জির শিরা কাটা অবস্থায় ছিল। গলায় ছিল একটি মাত্র কাটা ক্ষত। ধারালো কিছু দিয়ে তাঁর গলায় বাঁ দিক থেকে ডান দিকে এক বার আঘাত করা হয়েছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
সুদেষ্ণা দে-র দুই হাতেও শিরা কাটা ছিল। গলায় ছিল একটি গভীর ক্ষত। এই আঘাতের ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। অর্থাৎ, রোমি এবং সুদেষ্ণার মৃত্যুর ধরন প্রায় একই রকম।
১৪ বছরের প্রিয়ম্বদা দে-র মৃত্যু হয়েছে খাদ্যে বিষক্রিয়ার জেরে। তার বুক, দুই পা, ঠোঁট এবং মাথার তালুতে একাধিক আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। কিশোরীর দুই হাত এবং পা নীল হয়ে গিয়েছিল। পেটের ভিতরেও রক্তক্ষরণ হয়েছে তার।
কিশোরীর পেটে যে খাবার ছিল, তা পুরোপুরি হজম হয়নি। ওই খাবারে ছিল হলুদ এবং সাদাটে কিছু কণিকা, তাতে ওষুধের গন্ধ ছিল।
ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী, শেষ বার খাবার খাওয়ার তিন থেকে ছ’ঘণ্টার মধ্যে এই তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর সময় ময়নাতদন্তের অন্তত ৩৬ থেকে ৪৮ ঘণ্টা আগে।
বুধবার সকালে ট্যাংরার অটল শূর রোডের বাড়ি থেকে রোমি, সুদেষ্ণা এবং প্রিয়ম্বদার দেহ উদ্ধার করা হয়। বুধবার ভোর রাতে বাইপাসের ধারে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে দে পরিবারেরই একটি গাড়ি। তাতে ছিলেন রোমি এবং সুদেষ্ণার স্বামী প্রসূন ও প্রণয় দে। ছিল তাঁদের নাবালক পুত্র প্রতীপ দে। তাঁরা তিন জনই গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। প্রাথমিক ভাবে তাঁরা দাবি করেছিলেন, আর্থিক সমস্যার কারণে সকলে ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। পরে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে ইচ্ছাকৃত ভাবে আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে পিলারে ধাক্কা মারেন। রাতে খুনের মামলা রুজু হয়। কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা জানিয়েছেন, এই ঘটনায় আরও অনেক তথ্য-প্রমাণ তাঁদের হাতে এসেছে। কিন্তু তদন্তের স্বার্থে তা গোপন রাখা হচ্ছে।