(বাঁ দিকে) দেব। সাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতি। —ফাইল চিত্র।
১০০ দিনের কাজ তথা মনরেগা প্রকল্পে রাজ্যওয়াড়ি কত ভুয়ো জব কার্ড বাতিল হয়েছে, তা লিখিত ভাবে জানতে চেয়েছিলেন ঘাটালের তৃণমূল সাংসদ দেব। মঙ্গলবার অভিনেতা-সাংসদ দেবের সেই প্রশ্নের লিখিত জবাব দিলেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী সাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতি। তাতে দেখা যাচ্ছে, গত দু’টি অর্থবর্ষে সারা দেশে যে ভুয়ো জব কার্ড বাতিল হয়েছে, তাতে বাংলার সংখ্যা অনেক কম। তার চেয়ে অনেক বেশি সংখ্যায় জব কার্ড বাতিল হয়েছে উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, বিহার, মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্যগুলিতে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর দেওয়া খতিয়ান হাতে পেয়েই বিজেপির উদ্দেশে আক্রমণ শানিয়েছে তৃণমূল। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেছেন, ‘‘অবিলম্বে কুৎসা বন্ধ হোক।’’
দেব মূলত দু’টি প্রশ্ন তুলেছিলেন। এক, কোন রাজ্যে কত জব কার্ড বাতিল হয়েছে? দুই, ভুয়ো জব কার্ড রুখতে কেন্দ্রীয় সরকার কি কোনও পদক্ষেপ করেছে? রাজ্যওয়াড়ি খতিয়ান দেওয়ার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী লিখিত ভাবে জানিয়েছেন, ‘‘ভুয়ো কার্ড বাতিল করা এবং আপডেট করা একটি নিরন্তর প্রক্রিয়া। রাজ্যগুলি সেই অনুশীলন চালাচ্ছে। ভুয়ো কার্ড রুখতেই আধার সংযুক্তিকরণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।’’
কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়নমন্ত্রক যে পরিসংখ্যান দিয়েছে, তাতে ২০২১-’২২ এবং ২০২২-’২৩ অর্থবর্ষে সারা দেশে ভুয়ো জবকার্ড বাতিল হয়েছে ১০ লক্ষ ৫০ হাজার ৪০১টি। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভুয়ো কার্ড বাতিল হয়েছে উত্তরপ্রদেশে—তিন লক্ষ ৬৪ হাজার ৪০১টি। তার পরেই রয়েছে ওড়িশা— এক লক্ষ ৬৫ হাজার ১৫০টি। এর পর যথাক্রমে রয়েছে মধ্যপ্রদেশ এবং বিহার। দু’টি রাজ্যেই দু’বছরে এক লক্ষের বেশি ভুয়ো জব কার্ড বাতিল করা হয়েছে। সেখানে বাংলা? দেখা যাচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজ্যে গত দু’বছরে বাতিল হওয়া ভুয়ো জব কার্ডের সংখ্যা পাঁচ হাজার ৬৫১টি। বাংলার উপরে রয়েছে ঝাড়খণ্ড, রাজস্থান। ঝাড়খণ্ডে বাতিল হওয়া জব কার্ডের সংখ্যা ৯৪ হাজার ২০১টি। রাজস্থানে ৬০ হাজার ৪২৮টি।
১০০ দিনের কাজের টাকা কেন্দ্র আটকে রেখেছে, এই অভিযোগ তুলে রোজ বিজেপির বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাচ্ছে বাংলার শাসকদল। দলের সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে দিল্লি অভিযানও করেছিল তৃণমূল। প্রসঙ্গত, গত ৩ অক্টোবর দিল্লির কৃষি ভবনে এই মন্ত্রী নিরঞ্জন জ্যোতির সঙ্গে তৃণমূলের প্রতিনিধিদের দেখা করা নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড বেধেছিল। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, মহুয়া মৈত্র, বিরবাহা হাঁসদা-সহ তৃণমূলের নেতা, মন্ত্রী, সাংসদদের টেনেহিঁচড়ে মুখার্জি নগর থানায় তুলে নিয়ে গিয়েছিল দিল্লি পুলিশ। তার পর কলকাতায় ফিরে একই দাবিতে রাজভবনের উত্তর গেটের সামনে টানা ধর্নায় বসেছিলেন অভিষেক। গত ২৩ নভেম্বর দলনেত্রী মমতাও ঘোষণা করেছেন, ডিসেম্বরের দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় সপ্তাহে ফের দিল্লি যাবে তৃণমূল। নেতৃত্ব দেবেন তিনি। মমতা এ-ও বলেন, ‘‘আমরা প্রধানমন্ত্রীর সময় চাইব। সময় দিলে ভাল। না হলে রাস্তাই আমাদের রাস্তা দেখাবে।’’ উল্লেখ্য এর আগেও ১০০ দিনের কাজের বকেয়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন মমতা। একাধিক বার চিঠিও লিখেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
প্রসঙ্গত, অভিষেক-সহ তৃণমূলের নেতারা অনেক দিন ধরেই দাবি করছেন, ভুয়ো জব কার্ডের যে ‘গল্প’ বিজেপি বলছে, তা ভিত্তিহীন। টাকা আটকানোর মানদণ্ড যদি ভুয়ো জব কার্ড হয়, তাহলে যোগী আদিত্যনাথের উত্তরপ্রদেশের আগে টাকা বন্ধ হওয়া উচিত। অভিষেক এ-ও বলেছেন, যদি দুর্নীতি হয়ে থাকে তাহলে তদন্ত করে শাস্তি দেওয়া হোক। কিন্তু সবার টাকা বন্ধ করে দিয়ে বাংলার গ্রামীণ অর্থনীতিকে শুকিয়ে দিতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার। বিজেপির অবশ্য দাবি, শুধু ভুয়ো জব কার্ড নয়, আরও নানান অনিয়মের জন্য বাংলার টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্র। তবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর দেওয়া পরিসংখ্যানকে হাতিয়ার করে এ বার নতুন করে বিজেপির বিরুদ্ধে ময়দানে নামতে চাইছে তৃণমূল।