আড়াল থেকেই লড়লেন মেঘনাদ মণ্ডল। —নিজস্ব চিত্র।
মেঘের আড়াল থেকে বাণ হেনেই মেঘনাদ হয়ে উঠেছিলেন রাবণ-পুত্র ইন্দ্রজিৎ! রানিগঞ্জে একই কায়দায় ডাকাতদলকে ঘায়েল করেছেন পুলিশ অফিসার মেঘনাদ মণ্ডলও। পোলের আড়াল থেকে একাই লড়ে গেলেন ডাকাতদের বিরুদ্ধে! তাঁর গুলিতে ঘায়েলও হয়েছেন ডাকাতদলের এক সদস্য।
রানিগঞ্জের সোনার দোকানে ডাকাতির ঘটনার সময় ওই এলাকায় একটি কাজে গিয়েছিলেন শ্রীপুর ফাঁড়ির ‘বড়বাবু’ (ইনচার্জ) মেঘনাদ। কিছু একটা গোলমাল চলছে আঁচ করে কোমর থেকে বন্দুক বার করে দোকানের দিকে এগিয়ে যান তিনি। ঠিক সেই সময়ই দোকান থেকে করে বেরিয়ে আসছিল বন্দুকধারী ডাকাতদলটি। সেই সময়েই মেঘনাদের মুখোমুখি পড়ে যান এক ডাকাত। চোখের পলক ফেলার আগে মেঘনাদও গুলি চালিয়ে দেন। সেই গুলিতেই জখম হন ওই ডাকাত। কোমরে গুলি লেগে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। তত ক্ষণে বাইরে চলে আসেন বাকি ডাকাতেরাও। মেঘনাদ একটি ট্রান্সফরমারের পিছনে লুকিয়ে ডাকাতদের লক্ষ্য করে গুলি চালাতে থাকেন। ডাকাতদলটিও পাল্টা গুলিবৃষ্টি শুরু করে মেঘনাদকে লক্ষ্য করে। কিছু ক্ষণ গুলির লড়াইয়ের পর একটি গাড়িকে ‘কভার’ বানিয়ে দু’টি বাইকে চেপে এলাকা ছেড়ে চম্পট দেয় সাত ডাকাত। মেঘনাদও পিছনে ছুটেছিলেন। কিন্তু নাগাল পাননি। পুলিশ সূত্রে খবর, পরে অবশ্য ডাকাতদলের সন্ধান মিলেছে। পড়শি রাজ্য ঝাড়খণ্ডে তারা গা ঢাকা দিয়েছে বলেই তদন্তে উঠে এসেছে। জখম হওয়া এক ডাকাতকে আটকও করা হয়েছে। বাকিদের হদিস পেতে তল্লাশি চলছে।
এই ঘটনার পরেই পুলিশমহলে চর্চার কেন্দ্র হয়ে উঠেছেন মেঘনাদ। পুলিশ সূত্রে খবর, তাঁর বাড়ি মুর্শিদাবাদের খড়গ্রাম থানার বেলে গ্রামে। কর্মজীবন শুরু বীরভূমে, কনস্টেবল হিসাবে। পরে সাব-ইন্সপেক্টরের পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে যোগ দেন পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুরের প্রান্তিকায়। তার পর রানিগঞ্জে সাব-ইন্সপেক্টর হিসাবে কাজ করেন। তিন বছর পর দুর্গাপুরের বিধাননগর থানার বড়বাবুও হন। এর পর লোকসভা নির্বাচনের আগে জামুড়িয়া থানার অন্তর্গত শ্রীপুর ফাঁড়িতে বদলি হয় মেঘনাদের। গোটা ঘটনা নিয়ে তিনি আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘পুলিশের যা কাজ, পুলিশ সেটাই করেছে। এতে বাহবা পাওয়ার মতো কিছুই আমি করিনি।’’ মেঘনাদের কাজের প্রশংসা করেছেন ডিসিপি ধ্রুব দাস। তিনি বলেন, ‘‘ঘটনার সময় ওখানেই কাজে গিয়েছিলেন। চটজলদি সিদ্ধান্ত নিয়ে উনি যা করেছেন, তা প্রশংসনীয়।’’
ডাকাতি করে বাইকে পালানোর সময়েও রানিগঞ্জ থেকে আসানসোল যাওয়ার রাস্তায় মহিশীলা কলোনির চক্রবর্তী মোড়ে তাণ্ডব চালিয়েছে ওই ডাকাতদলটি। মোড়েই গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন জনৈক নয়ন দত্ত। সপরিবার অন্নপ্রাশনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন তিনি। কিছু কিনতে চক্রবর্তী মোড়ে গাড়ি থামিয়েছিলেন। সেই সময় সেখানে উপস্থিত হয় সাত ডাকাত। তারা নয়নকে হিন্দিতে বলে, ‘‘একটু লিফ্ট দিতে হবে। পাশে জেলা হাসপাতালে আমাদের ছেড়ে দিন। পায়ে চোট লেগেছে।’’ কিন্তু সন্দেহ হওয়ায় নয়ন রাজি হননি। জানান, পরিবার নিয়ে তিনি অনুষ্ঠানবাড়ি যাচ্ছেন, তাই লিফ্ট দিতে পারবেন না। স্থানীয় সূত্রে খবর, এ কথা শুনেই কোমর থেকে বন্দুক বার করে নয়নের পায়ে গুলি চালিয়ে দেন ডাকাতেরা। গুলি চলার আওয়াজ পেয়ে স্থানীয় এক জন নয়নকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। তাঁরও পায়ে গুলি করা হয়। তার পর নয়নের গাড়ি নিয়ে চম্পট দেয় তারা।
পুলিশ সূত্রে খবর, নয়নের সেই গাড়িটি ডুমরি এলাকা থেকে উদ্ধার হয়েছে। সেই গাড়িতেই একা ছিল ডাকাতদলের জখম হওয়া সেই সদস্য। তদন্তকারীদের অনুমান, গুরুতর জখম হওয়ায় তাঁকে ওই গাড়িতে রেখেই পালিয়েছে বাকিরা। এর পরেই ঝাড়খণ্ড পুলিশের সাহায্য নিয়ে পার্শ্ববর্তী গ্রামে তল্লাশি শুরু হয়েছে। ডিসিপি বলেন, ‘‘ঝাড়খণ্ডের গিরিডি জেলায় ইতিমধ্যেই এক জনকে আটক করা হয়েছে। সঙ্গে মহিশীলা থেকে ছিনতাই হওয়া চার চাকার গাড়িটিও উদ্ধার হয়েছে।’’