মোবাইল কোম্পানির সস্তার অফার থেকে ততোধিক সস্তা বেগুনি প্যাকেটের গুঠকা— দুপুরভর দেওয়াল জুড়ে রাঙিয়ে তোলে ছেলেগুলি। ভোটের বাজারে তাদেরই হাতে কাস্তে হাতুড়ি থেকে ঘাস ফুলের ভরে ওঠে পাঁচিল আর ঘর-বাড়ির দেওয়াল। দলীয় কর্মীদের ব্যস্ততা আড়াল করে দিব্যি দেওয়াল ভরিয়ে শ’পাঁচেক টাকা নিয়ে ঘরে ফিরে যান কুপার্সের ছোট্ট সংস্থাটির তিন নিতান্তই ‘অরাজনৈতিক’ ‘দেওয়াল শিল্পী’।
গত ভোটেও যাঁদের দিন কয়েকের জন্য বরাত দিয়েছিল সিপিএম এ বার তারাই রানাঘাটের দেওয়ালে কপালের ঘাম মুছে ঘাসফুল ফোটাচ্ছেন। রং তুলি নিজের, ‘রেট’ সেই পাঁচশো টাকা।
রানাঘাটের (উত্তর-পশ্চিম) তৃণমূল প্রার্থী পার্থসারথী চট্টোপাধ্যায়কে ‘ভুল’ করে বিরোধী পক্ষের প্রার্থীর মতো ‘কমরেড’ লিখে খবরের শিরোনামে এসে গিয়েছেন যাঁরা। সে বিতর্কে শাসক দলের প্রার্থী তেমন আমল দিতে না চাইলেও কিঞ্চিৎ সন্ত্রস্তই দেখাচ্ছে ওই দেওয়াল-শিল্পী নাড়ুগোপাল দাসের চোখমুখ। বলছেন, ‘‘আসলে কী হয় জানেন, একটানা লিখছি তো এক সমযে আর মাথায় তাকে না। ভুলটা হয়েছে তা থেকেই। সত্যি বলছি দাদা আমাদের কোনও মতলব ছিল না!’’
রানাঘাটের দে-চোধুরী পাড়ায় ‘ভুল’টা নিয়ে সাসক দলের প্রার্থী পার্থবাবু অবশ্য় তেমন আমল দিচ্ছেন না তবে তাতে কী ভয় কাটে? নাড়ু বলছেন, ‘‘এখন তো কাজে করতেও হাত কাঁপছে দাদা!’’ কেন, কেউ কিছু বলেছে? কাচুমাচু মুখে ওই শিল্পীদের এক জন বলছেন, ‘‘তা বলেননি, কিন্তু গালমন্দ শুরু হতে কতক্ষণ!’’
ভুলটা ধরা পড়েছিল শনিবার দুপুরে। রানাঘাট পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের দে-চৌধুরী পাড়ার একটি দেওয়ালের লেখা দেখে চোখ কপালে উঠে ছিল তৃণমূল সমর্থকদের— টান টান দেওয়ালে নির্ভুল হাতের লেখায়, ‘কম. পার্থসারথী চট্টোপাধ্যায়কে জোড়াফুল চিহ্নে ভোট দিন।’ গোল বাদিয়েছে ওই কম. অর্থাৎ কমরেড। ভুলটা নজরে পড়ায় তৃণমূল অফিস থেকে কর্মীরা এসে অবশ্য ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই ওই অক্ষর দু’টোর উপরে বুলিয়ে দিয়ে গিয়েছেন সাদা রং। তবে দলীয় কর্মীরা বলছেন, ‘‘ততক্ষণে যা মুখ পোড়ার পুড়ো গিয়েছে আমাদের।’’ কেন, দলনেত্রী তো সভা-সমাবেশে সহিষ্ণুতার বার্তা দিয়ে চলেছেন ক্রমাগত? পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছেন পার্থবাবু নিজেই। বলছেন, ‘‘আমার মনে হয় না, ওঁরা ইচ্ছা করে কাজটা করেছেন। ও নিয়ে মাথা ব্যাথার কিছু নেই, দলের কর্মীদেরও এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে বারণ করেছি।’’
রানাঘাট পুরসভার লাগোয়া কুপার্স ক্যাম্প নোটিফায়েড এরিয়া অথরিটি। সেখানেই জনা কয়েক বেকার যুবক বছর কয়েক ধরে দেওয়াল লিখনের এই ছোট সংস্থাটি খুলেছেন। জানা গিয়েছে, গত বার বামেদের দেওয়াল লিখলেও এ বার তারা বরাত পেয়েছে তৃমমূলের। ওই শিল্পীদের এক জন জানাচ্ছেন, গত বারেরর পর আর নির্বাচনী প্রচারের দেওয়াল লেখেননি তাঁরা। তাই কমরেড লেখার অভ্যাসটি রয়ে গিয়েছিল। তাঁদের দাবি, ভুলটা সে কারণেই।
কুপার্সের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের থাকেন ওই শিল্পীদের অন্যতম নাড়ুগোপাল। তিনি বলেন, ‘‘আমরা ২২ জন শিল্পী রানাঘাটের বিভিন্ন জায়গায় তৃনমূল প্রার্থী পার্থদার দেওয়াল লিখছি। আমাদের মধ্যেই কেউ ভুলটা করেছেন। তবে তার কারণ, ওই যে বললাম অভ্যাস!’’
উদ্বাস্তু আন্দোলনের নেতা এবং একই সঙ্গে কুপার্সে সিপিএমের মুখ অসোক চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এক সময় ওরা আমাদের হয়ে প্রচার লিখত। এটাই ওদের পেশা। যারা লেখার জন্য ডাকে সেখানেই লিখতে যায়। ওদের কোনও দল নেই। এটা নিছকই ভুল।’’