ফাইল চিত্র।
দরকার শুধু দু’শো টাকা। আর তা দিলেই করোনা টিকার দু’টো ডোজ় নেওয়ার শংসাপত্র মিলছে হাতে হাতে। চাইলে মিলবে করোনা নেগেটিভ রিপোর্টও, পরীক্ষা ছাড়াই। সে ক্ষেত্রে দিতে হবে দেড়শো টাকা। নকল সেই নথি দেখিয়ে হোটেলের ঘরও মিলছে দিব্যি।
সৈকত পর্যটন কেন্দ্র মন্দারমণিতে পুলিশ-প্রশাসনের নজর এড়িয়েই চলছে নকল শংসাপত্র বা করোনা রিপোর্টের এই কারবার। করোনার বিধিনিষেধ এখন অনেকটাই শিথিল হয়েছে। স্বাধীনতা দিবসের আগে শুক্রবার থেকেই পর্যটকদের আনাগোনা শুরু হয়েছে দিঘা, মন্দারমণিতে। গত জুলাইয়ে নির্দেশিকা জারি হয়েছে, করোনা প্রতিষেধকের দু’টি ডোজ় নেওয়ার শংসাপত্র বা কোভিড নেগেটিভ রিপোর্ট না দেখালে পূর্ব মেদিনীপুরের সৈকত পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে হোটেলে ঘর মিলবে না। দিঘায় হোটেল মালিক সংগঠনের উদ্যোগে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা হচ্ছে। তবে মন্দারমণিতে এমন কোনও বন্দোবস্ত নেই। সেই সুযোগেই ডালপালা মেলছে ভুয়ো নথির কারবার।
শুক্রবার চাউলখোলা বাসস্টপে এক অটোচালকই বললেন, ‘‘কোনও পরীক্ষা করাতে হবে না। টাকা দিলেই নেগেটিভ রিপোর্ট হাতে চলে আসবে।’’ সাংবাদিক পরিচয় গোপন রেখে দাদনপাত্রবাড়ে গিয়ে এক খেলনার দোকানিকে সব কিছু জানাতেই তিনি ফোন করলেন এক জনকে। আর চাইলেন আধার কার্ড (জেরক্সও চলবে)। সেই সঙ্গে দিতে হল নগদ দু’শো টাকা। তার পরে দু’ঘণ্টার মধ্যেই কোভিশিল্ডের দু’টি ডোজ় নেওয়ার শংসাপত্রের পিডিএফ চলে এল হোয়াটসঅ্যাপে। ওই দোকানি বললেন, ‘‘রোজই পর্যটকেরা এমন শংসাপত্র নিয়ে যাচ্ছেন। শনি-রবি চাহিদা অনেকটাই বেশি।’’
নিয়মমতো এই শংসাপত্রের ‘বেনিফিশিয়ারি রেফারেন্স আইডি’ কোউইন পোর্টাল বা আরোগ্য সেতু অ্যাপে যাচাই করে দেখার কথা হোটেলগুলির। কিন্তু তা যাচাই করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। মন্দারমণির হোটেল মালিক সংগঠনের সম্পাদক দেবরাজ দাস বলছেন, ‘‘আমরা শুধু পর্যটকদের কাছে প্রয়োজনীয় কাগজ রয়েছে কি না দেখে নিই। তার পরে তা জমা দিয়ে দিই থানায়। এই ধরনের চক্র চলছে বলে জানি না।’’
বিষয়টি অজানা প্রশাসনেরও। ইতিমধ্যে কয়েক বার প্রশাসনের আধিকারিকেরা হোটেলে, সৈকতে অভিযান চালিয়েছেন। অনিয়ম দেখলে ব্যবস্থা নিয়েছেন। তবে বেশ কিছু দিন হল অভিযান বন্ধ রয়েছে। অনিয়মের কথা শুনে কাঁথির মহকুমাশাসক আদিত্য বিক্রমমোহন হিরানি বলেন, ‘‘ওই সব শংসাপত্র প্রাথমিক ভাবে স্বাস্থ্য দফতর যাচাই করে দেখুক। তার পরে তারা যা তদন্ত রিপোর্ট দেবে তার ভিত্তিতেই আইনমাফিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ নন্দীগ্রাম স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর ষড়ঙ্গী বলছেন, ‘‘প্রতিটি শংসাপত্র স্বাস্থ্য দফতর থেকে খতিয়ে দেখা হবে। এ জন্য তদন্ত কমিটি তৈরি করব।’’