Hospital

সুস্থকে বাড়ি পাঠাতে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে চিঠি, তার পরেই উধাও রোগী, ফ্যাসাদে হাসপাতাল

হাসপাতালে কয়েক দিন চিকিৎসার পরেই বেশ সুস্থ হয়ে ওঠেন ওই বৃদ্ধ। এর আগে বিহারের এক যুবকের ঠিকানা খুঁজে দেওয়ার ঘটনায় সফল হওয়ায় ফের ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাবের সাহায্য চায় হাসপাতাল, ওই বৃদ্ধের বাড়িতে খবর দেওয়ার জন্য।

Advertisement

সিজার মণ্ডল

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৭:০২
Share:

কমলা সিংহ। এই সেই বৃদ্ধ। নিজস্ব চিত্র।

একেই বলে উল্টো বিপত্তি! হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগী সুস্থ হয়ে যাওয়ার পরেও পরিবার কেন নিতে আসছে না, সেই অভিযোগ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছিল হাসপাতাল। আর যখন সেই রোগীকে বাড়ি নিয়ে যেতে রীতিমতো ম্যাজিস্ট্রেট পদমর্যাদার আধিকারিক হাসপাতালে যাবেন বলে জানালেন, তখন থেকেই গায়েব সেই রোগী। সেটাও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নজরে আসে, রোগী চলে যাওয়ার ঠিক তিন দিন পর। তার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মাথায় হাত! ঘটনাটি ঘটেছে বনগাঁ সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে।

Advertisement

দিন ১৫ আগে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীরা বনগাঁ স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে কম্বল বিলি করতে গিয়ে হিন্দিভাষী এক বৃদ্ধকে দেখতে পান। তাঁর সঙ্গে কথা বলে ওই কর্মীরা জানতে পারেন, বৃদ্ধের বাড়ি মধ্যপ্রদেশের অনুপুর জেলার বালুমাডা থানা এলাকার বাদিখাড় গ্রামে। বৃদ্ধের নাম কমলা সিংহ। বয়স প্রায় ৭০ বছর। তিনি কী ভাবে বাড়ি ছেড়ে এত দূর চলে এসেছেন, তা বলতে পারেননি। সেখান থেকেই ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীদের মনে হয়, ওই বৃদ্ধের হয়তো স্মৃতিভ্রংশ হয়েছে। রেল পুলিশের সাহায্যে তাঁকে ভর্তি করা হয় বনগাঁ হাসপাতালে।

হাসপাতালে কয়েক দিন চিকিৎসার পরেই বেশ সুস্থ হয়ে ওঠেন ওই বৃদ্ধ। এর আগে বিহারের এক যুবকের ঠিকানা খুঁজে দেওয়ার ঘটনায় সফল হওয়ায় ফের ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাবের সাহায্য চায় হাসপাতাল, ওই বৃদ্ধের বাড়িতে খবর দেওয়ার জন্য। রেডিও ক্লাবের সভাপতি অম্বরীশ নাগ বিশ্বাস বলেন, ‘‘হ্যাম রেডিয়োর সদস্যদের সাহায্যে আমরা ওই বৃদ্ধের বাড়ি খুঁজে পাই। তাঁর স্ত্রী-মেয়ে আছেন। এক ভাই আছেন, যিনি ওই গ্রামের প্রধান। আমরা তাঁদের কলকাতায় এসে বৃদ্ধকে নিয়ে যেতে বলি।” পরে জানা যায়, সম্পত্তি বেদখল হতে পারে এই আশঙ্কায় বৃদ্ধের ভাই তাঁকে ফেরত নিয়ে যেতে নারাজ। অন্য দিকে, বৃদ্ধ বাড়ি যাওয়ার জন্য ছটফট শুরু করেন।

Advertisement

হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন ওই বৃদ্ধ (চিহ্নিত)।

আরও পড়ুন: পিটিয়ে মারা উচিত, তেলঙ্গানা নিয়ে আইন হাতে তোলার সওয়াল জয়া বচ্চনের

ফলে, রোগীকে বাড়ি পৌঁছতে প্রথমে অনুপুরের জেলাশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করে ওয়েস্টবেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাব। তাতে কাজ না হওয়ায় মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে হাসপাতালের তরফে যোগাযোগ করে তারা। অম্বরীশ জানান, এর পরই ওই রাজ্যের সরকার এক জন ম্যাজিস্ট্রেট পদমর্যাদার আধিকারিককে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। সে কথা জানানো হয় রেডিয়ো ক্লাবকে। তারা সে কথা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানায়। এর পরেই কর্তৃপক্ষের মাথায় হাত! তত ক্ষণে হাসপাতালের কর্তারা জানতে পেরেছেন, তিনতলায় পুরুষদের ওয়ার্ড থেকে উধাও ওই বৃদ্ধ!

আরও পড়ুন: কেন্দ্রের ৪০ হাজার কোটি টাকা বাঁচাতেই মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন ফডণবীস! দাবি বিজেপি সাংসদের

হাসপাতাল সূত্রে খবর, সুপার এবং অ্যাসিস্টান্ট সুপারের নির্দেশে তদন্ত শুরু হয়েছে। জানা যায় ২৭ নভেম্বর ভরদুপুরে নিজেই হাসপাতালের কর্মীদের নাকের ডগা দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছেন ওই বৃদ্ধ। সিসি ক্যামেরার ওই দিনের ফুটেজ থেকেও পাওয়া যায়, বেলা ১২টা নাগাদ বেরিয়ে যাচ্ছেন তিনি। হাসপাতালের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘এ বার উল্টে আমাদের ফ্যাসাদে পড়ার অবস্থা হয়েছে। যে রোগী ফেরত নিয়ে যাওয়ার জন্য ওই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর দফতর পর্যন্ত চিঠি পাঠানো হল, তিনি আমাদের হেফাজত থেকেই উধাও! আমরা এ বার কী জবাব দেব?”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement