অত্রি ভট্টাচার্য এবং রাজীব কুমার। ছবি: সংগৃহীত
কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কে নানা ভাবে পুলিশি হেনস্থার অভিযোগে লোকসভার এক বিশেষ কমিটির ধমক খেলেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব অত্রি ভট্টাচার্য এবং কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার। রাজ্যের শীর্ষ দুই কর্তাকে গত মাসে তিন বার লোকসভায় হাজির হতে সমন জারি করেছিল ওই কমিটি। তার পরেও না যাওয়ায় ভর্ৎসনা করা হয়েছে তাঁদের। কোনও রকম শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আগে শেষ সুযোগ দিতে আগামী ৫ ডিসেম্বর লোকসভায় তাঁদের ফের হাজির হতে বলা হয়েছে। শাস্তি এড়াতে মঙ্গলবার এক প্রকার বাধ্য হয়েই দিল্লিতে লোকসভার কমিটির সামনে হাজিরা দেবেন স্বরাষ্ট্রসচিব ও কলকাতার পুলিশ কমিশনার। বাবুল সুপ্রিয়র হেনস্থা সম্পর্কিত অভিযোগেরও ব্যাখ্যা দেবেন তাঁরা।
ঘটনার সূত্রপাত বছর খানেক আগে। একটি টেলিভিশন চ্যানেলের বিতর্কে অংশ নিয়ে বাবুলের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়েছিলেন তৃণমূল বিধায়ক মহুয়া মৈত্র। টিভি বিতর্কের সময় বাবুল মহিলা হিসাবে তাঁর সম্মানহানি করেছেন বলে আলিপুর থানায় অভিযোগ করেন মহুয়া। সেই সূত্রে বাবুলের বিরুদ্ধে মহিলার সম্মানহানির অভিযোগ এনে তাঁকে থানায় ডেকে পাঠানো হয়।
কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সেই জেরায় হাজির হননি। উল্টে তাঁকে হেনস্থার অভিযোগ এনে ওই বিতর্কের রেকর্ডিংসহ লোকসভার স্পিকারের কাছে অভিযোগ করেন বাবুল। অভিযোগ করা হয় লোকসভার প্রিভিলেজ কমিটির কাছেও। বাবুলের অভিযোগ তদন্তের জন্য ‘কমিটি অন ভায়োলেশন অফ প্রোটোকল নর্মস অ্যান্ড কনটেম্পচুয়াস বিহেভিয়ার অব গভর্নমেন্ট অফিসার্স উইথ মেম্বারস অব লোকসভা’-র কাছে পাঠিয়ে দেন স্পিকার। এই কমিটির প্রধান সাংসদ রায়াপতি সম্ভাশিব রাও। তদন্তে নেমে অভিযোগ খতিয়ে দেখে কমিটি। সংশ্লিষ্ট সাংসদের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। বাবুলের হয়ে সে সময় সওয়াল করেছিলেন আর এক এমপি কিরীট সোমাইয়া। তাঁরও সাক্ষ্য গ্রহণ করে কমিটি।
এর পর নভেম্বরে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব এবং কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে সমন জারি করে ডাকা হয়। পর পর তিন বার ডাকা হলেও হাজির হননি তাঁরা। উল্টে লোকসভা সচিবালয়ে তাঁরা জানিয়ে দেন, অন্য কাজে ব্যস্ত থাকায় যেতে পারবেন না। এ কথা জেনে প্রবল ক্ষিপ্ত হন কমিটির সদস্যরা।
কমিটির অন্যতম সদস্য তৃণমূলের চৌধুরী মোহন জাটুয়া। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের যুগ্মসচিব মুকেশ মিত্তাল রাজ্যের মুখ্যসচিব মলয়কুমার দেকে বিশেষ বার্তায় জানান, কমিটি রাজ্যের দুই অফিসারের আচরণ বরদাস্ত করছে না। তাঁদের কাজ কমিটির অধিকারভঙ্গ এবং মর্যাদাহানির সামিল। যদি তাঁরা না-আসেন তা হলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানানো হয় রাজ্যকে। এর পরেই টনক নড়ে নবান্নের। কমিটি শেষ সুযোগ দিয়ে আগামী ৫ ডিসেম্বর অত্রি ভট্টাচার্য ও রাজীব কুমারকে ডেকে পাঠিয়েছে। এ বার অবশ্য তাঁরা আর অন্য কাজ রাখেননি। সংসদের প্রথম তলার ৫৩ নম্বর রুমে মঙ্গলবার সোয়া দু’টোর সময় হাজিরা দেবেন স্বরাষ্ট্রসচিব ও কলকাতার পুলিশ কমিশনার।