তালাবন্ধ সঙ্গীতভবন, শনিবার। নিজস্ব চিত্র
করোনাভাইরাসের আতঙ্কে দোলের দিন বসন্ত উৎসব হচ্ছে না বিশ্বভারতীতে। শুক্রবার এই ঘোষণার ২৪ ঘণ্টা পরে বিশ্বভারতী ক্যাম্পাস জুড়ে হতাশার ছায়া। কর্মী, অধ্যাপক, ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে, আগত পর্যটক এবং স্থানীয় ব্যবসায়ী—সকলের চোখে মুখেই হতাশা।
মেলার মাঠের মূল মঞ্চ থেকে শুরু করে, গোটা বিশ্বভারতীই সেজে উঠেছিল বসন্তকে আবাহন করতে। শনিবার সকাল থেকে দেখা গেল, একই তৎপরতায় জেলা প্রশাসন গুটিয়ে নিচ্ছে সবকিছু। জেলা পুলিশের কর্তাদের চোখে-মুখেও বিষন্নতার ছাপ। এক পুলিশ আধিকারিক তো বলেই দিলেন, ‘‘এতদিনের পরিশ্রমকে আজ পুরো পণ্ডশ্রম মনে হচ্ছে। রাজ্য প্রশাসনের নির্দেশে আমরা দিনরাত এক করে বসন্ত উৎসবের পরিকল্পনা করছিলাম। সব কিছু সুষ্ঠু ব্যবস্থা করতে সকলের কী খাটনিই না গিয়েছে! সেখানে উৎসব বাতিলের সিদ্ধান্তে খারাপ তো লেগেইছে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘তবে, সুস্থ থাকার থেকে বড় কিছুই নয়। তাই খারাপ লাগলেও মেনে নিতেই হবে।’’
এ বছরের বসন্ত উৎসব নিয়ে বহুদিন ধরেই টালবাহানা চলছিল। গত বছরের বিশৃঙ্খলতার যুক্তি দেখিয়ে দোলের দিন বসন্তোৎসব করা হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছিল বিশ্বভারতী। শেষ পর্যন্ত রাজ্য সরকারের আর্থিক সহায়তায় নির্দিষ্ট দিনে উৎসবের ঘোষণা হলেও বাদ সাধল করোনা-আতঙ্ক।
এই ঘটনায় হতাশ শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও। মূলত তাঁর হস্তক্ষেপেই উৎসব দোলের নির্দিষ্ট দিনে হচ্ছিল। এই উৎসব সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করতে রাজ্য প্রশাসন চেষ্টার ত্রুটি রাখেনি। রাজ্য সরকার উৎসবের আয়োজনে অনেকটা টাকা খরচও করেছে। পার্থবাবু এ দিন বলেন, ‘‘করোনার জন্য করেছেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। বিশেষ পরিস্থিতিতে এটা করতে হয়েছে। তবে, দোলের দিন বসন্তোৎসব হচ্ছে, সেই সিদ্ধান্তের কথাও প্রথমে ওঁরা আমাদের জানাননি। আবার উৎসব বাতিল হচ্ছে, সেটাও জানাননি।’’ বসন্ত উৎসব আয়োজনের সম্পূর্ণ দায়িত্ব রাজ্য সরকারের হাতে থাকলেও, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের দায়িত্ব ছিল বিশ্বভারতীর। শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সঙ্গীতভবনে জোরকদমে মহড়া চলছিল। উৎসব বাতিলের খবরে পুরো ভবনই চুপচাপ। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় এ দিন সঙ্গীতভবন ছিল তালাবন্ধ। উৎসবের মাত্র দু’দিন আগে এই দৃশ্য সঙ্গীতভবনে অকল্পনীয়।
ভবনের এক অধ্যাপকের কথায়, ‘‘বিশ্বভারতীর অন্যান্য ভবনের তুলনায় আমাদের খারাপ লাগাটা একটু হলেও বেশি। এক মাসের বেশি সময় ধরে আমাদের ছেলেমেয়েরা নিজেদের প্রতিভা প্রকাশের মঞ্চ প্রস্তুত করছিল। তবে, সৃজনশীল কাজ সুস্থ পরিবেশেই হতে পারে। গোটা বিশ্ব জুড়ে এই অস্থিরতা ও আতঙ্কের মুহূর্তে খারাপ লাগলেও এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতেই হচ্ছে।’’
শুধু সঙ্গীতভবন মূল অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করলেও, সকালের শোভাযাত্রায় শামিল হন সব ভবনের পড়ুয়ারাই। শুক্রবার বিকেলেই শুরু হয়েছিল শোভাযাত্রার মহড়া। এ দিন বিষাদের ছায়া দেখা গেছে তাঁদের চোখেও। দর্শন বিভাগের ছাত্রী শুভশ্রী হাজরা বলেন, ‘‘বসন্ত উৎসব হবে না, এটা বিশ্বাসই করতে পারছি না। জানি এই সিদ্ধান্ত সকলের স্বাস্থ্যের কথা ভেবেই নেওয়া এবং সঠিক সিদ্ধান্তও, কিন্তু বসন্ত উৎসবের সঙ্গে এত আবেগ জড়িয়ে আছে, যে মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে।’’
ফি বছর ব্যবসায়ীরা উৎসবের দিন তাঁদের দোকানের সামনে অস্থায়ী ছাউনি লাগিয়ে দোকানের আয়তন কিছুটা বাড়িয়ে নেন। সেই কাজ তাঁরা সবে শুরুই করেছিলেন, কিন্তু উৎসব বাতিল ঘোষণার পর, অসমাপ্ত ছাউনি গুটিয়ে গেল শনিবার সকালেই।